ভারত
ঈদে বাড়ি এসেছিলেন জুনেইদ, বিমানের ধ্বংস্তূপের মধ্যে ডিএনএ মিলিয়ে এখন সেই ছেলের খোঁজে বৃদ্ধ বাবা
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ সপ্তাহ আগে) ১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৫:১৬ অপরাহ্ন
৬ জুন যখন জুনেইদ মোহাম্মদ নানাবাওয়া লন্ডন থেকে আহমেদাবাদের উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে ওঠেন, তখন তিনি জানতেন না যে এটি তার পরিবারের সাথে শেষ ঈদ উদযাপন হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিতে ২৪২ জন আরোহীর মধ্যে ৩৮ বছর বয়সী জুনেইদ, তার স্ত্রী আকিল এবং তিন বছরের মেয়ে সানাও ছিলেন। লন্ডনে ফিরে যাওয়ার আগে পরিবারের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো বুকে সঞ্চয় করে বিমানে উঠেছিলেন জুনেইদ। বৃহস্পতিবার রাতে, মধ্যরাতের একটু পরে, এয়ার ইন্ডিয়া নিশ্চিত করে যে বিমানটিতে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। জুনেইদের বাবা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তার ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহের অপেক্ষায় বসে আছেন। বি.জে. মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ডিএনএ সংগ্রহ কেন্দ্রের একটি বেঞ্চে বসে আবদুল্লাহ বলেন, গত শুক্রবার ঈদে সে (জুনেইদ) আমাদের সবাইকে অবাক করে দিতে বাসায় ফিরেছিল। আমরা গোটা পরিবার একসাথে ঈদ উদযাপন করতে পেরে খুব আনন্দিত ছিলাম। হতভাগ্য বাবার সাথে সুরাট থেকে ২০ জনেরও বেশি আত্মীয়স্বজন এসেছেন জুনেইদের দেহ শনাক্ত করতে।
বি.জে. মেডিকেল কলেজের বাইরে এখন গিজগিজ করছে ভিড়। সবাই আপনজনের খোঁজ পেতে মরিয়া। সবার মুখেই উদ্বেগ ও ভয়ের ছাপ। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে ফিসফিসানি। কেউ আবার অঝোরে কেঁদে চলেছেন। হাসপাতালের ময়নাতদন্ত বিভাগের বাইরে, সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিচ্ছে, এবং ডাক্তার ও অন্যান্য চিকিৎসা কর্মী ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাবা-ছেলের শেষ কথা হয়েছিল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২.৪৫ মিনিটে, যখন বাবাকে ফোন করে জুনেইদ জানান যে তাদের বিমানের সিকিউরিটি চেক সম্পন্ন হয়েছে। আবদুল্লাহ বলে চলেন, জুনেইদ খুব হাসিখুশি ছিল। ক্যামেরা দিয়ে পারিবারিক ঈদ উদযাপনের ভিডিও তুলে রেখেছিল সে। জুনাইদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে, যেখানে তিনি একটি চাকরির নিয়োগ সংস্থা চালাতেন, যার একটি শাখা আহমেদাবাদেও রয়েছে। আবদুল্লাহ বলেন, তার বৃটিশ নাগরিকত্ব আছে কিন্তু সে প্রায়ই ভারতে আসতো।
পরিবারটি সুরাটের রামপুরা এলাকায় সুপরিচিত, যেখানে তারা একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে, টিভিতে দুর্ঘটনার খবর প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে গোটা পরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। আবদুল্লাহ, তার বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে আহমেদাবাদে ছুটে যান। লন্ডনগামী বিমানটিতে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন বৃটিশ, একজন কানাডিয়ান এবং সাতজন পর্তুগিজ নাগরিক ছিলেন। নিহত যাত্রীদের মধ্যে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও ছিলেন। দুর্ঘটনার দশ ঘন্টা পরেও, ঘটনাস্থলটি এখনও বিমানের ধ্বংসাবশেষে ভরা। বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ, উপড়ে পড়েছে গাছ , কিছু সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন অধিদপ্তরের (ডিজিসিএ) কর্মকর্তাদের তৎপরতায় চলছে উদ্ধার কাজ। বি.জে. মেডিকেল কলেজে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য পাঁচটি ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। ৩০ জনেরও বেশি ল্যাব টেকনিশিয়ান বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন। নমুনা সংগ্রহে ব্যস্ত ল্যাব টেকনিশিয়ান ইন্দ্রবদন বলছেন, নমুনা পাওয়ার পর, আমরা এটি মৃতদেহের সাথে মেলাবো এবং ৭২ ঘন্টা পর আমরা একটি রিপোর্ট দেবো। এরপর মৃতদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে। অনেক মৃতদেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে ডিএনএ নমুনা ছাড়া তাদের শনাক্ত করা অসম্ভব।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অমিত শাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, প্রায় এক হাজার ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে...মৃতদেহের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে... মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ।'
সূত্র : দ্য প্রিন্ট