অনলাইন
বিরল খনিজ দেবে চীন, পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে পারবেন চীনা শিক্ষার্থীরা
(২ সপ্তাহ আগে) ১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪:৫৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন। বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রে চুম্বক ও বিরল খনিজ সরবরাহ করবে। পরিবর্তে মার্কিন কলেজ ক্যাম্পাসে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। লন্ডনে দুই দিনের উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে। ট্রাম্প পুরোপুরি স্পষ্ট করে বলেননি যে, আমেরিকা কী ছাড় দিয়েছে। বেইজিংও নিশ্চিত করেনি যে আলোচকরা কী বিষয়ে একমত হয়েছেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ট্রাম্প নিজেও এখনও এতে স্বাক্ষর করেননি।
ট্রাম্প যাকে ‘চুক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তা আসলে একটি ‘কাঠামো’ যা আরও বাস্তবসম্মত আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে। পাশাপাশি ট্রাম্পের নিজের মন্তব্য চীনা আমদানির উপর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আরোপিত কর নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক ৬৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমরা মোট ৫৫ শতাংশ শুল্ক পাচ্ছি, চীন পাচ্ছে ১০ শতাংশ। সম্পর্ক অসাধারণ !’
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, এ চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর সর্বমোট ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে– ১০ শতাংশের একটি কাঠামোগত ‘পাল্টা’ শুল্ক, ফেন্টানিল পাচারের বিরুদ্ধে ২০ শতাংশ এবং পূর্বঘোষিত শুল্কের আওতায় আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক।
অপরদিকে, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর চুক্তিটি কার্যকর হবে। খেলনা কোম্পানি লার্নিং রিসোর্সেসের সিইও রিক ওল্ডেনবার্গ বলেছেন, (ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছেন) নিয়মগুলো কী তা আমাদেরও জানা নেই।
পরে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে, ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি এবং শি আমেরিকান বাণিজ্যের জন্য চীনকে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে একসাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে যাচ্ছেন। এটি উভয় দেশের জন্যই একটি দুর্দান্ত হবে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে লন্ডনে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্য সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের মধ্যে লম্বা আলোচনার পর এই নতুন বাণিজ্য কাঠামোটি উত্থাপিত হয়। চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ভাইস প্রিমিয়ার হি লাইফেং।
এদিকে নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক গ্লোবাল রাইটস কমপ্লায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অ্যাভন, ওয়ালমার্ট, নেসক্যাফে, কোকা-কোলা এবং শেরউইন-উইলিয়ামস -এর মতো কোম্পানিগুলো জিনজিয়াং থেকে প্রাপ্ত টাইটানিয়াম সংগ্রহ করতে পারে। স্থানীয় অধিকার গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করেছে যে, চীনা সরকার জিনজিয়াং- এ প্রধানত মুসলিম উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কি সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে জোরপূর্বক শ্রম অনুশীলন পরিচালনা করছে । তাই অনেক বিশ্লেষক বলছেন নাটক এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
বাইডেন প্রশাসনে পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যান ক্রিটেনব্রিঙ্ক বলেছেন, ‘লন্ডনের বৈঠক আসলে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি। উভয় পক্ষই জানে অন্যের দুর্বল দিকগুলো কোথায়। তারা প্রমাণ করতে চাইছে যে, তাদের উভয়েরই হাতে এমন হাতিয়ার রয়েছে যা তারা একে অপরের ক্ষতি করতে ব্যবহার করতে পারে।’
ক্রিটেনব্রিঙ্ক- এর কথায় বিরল খনিজের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর সত্যিই চীনের অবিশ্বাস্য প্রভাব রয়েছে। তবুও তিনি সাম্প্রতিক আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মতে, ‘সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা হলে তা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনা অর্থনীতিকেই নয় বরং বিশ্ব অর্থনীতিকেও হুমকির মুখে ফেলবে।’ যদিও জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মারকাটাস সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ভেরোনিক ডি রুগির মতে ‘এটি একটি হ্যান্ডশেক চুক্তি ... যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে।’
সূত্র : এপি নিউজ