ঢাকা, ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

দুবাইয়ে সম্পদ গড়া ৭০ ব্যক্তিকে ঘিরে দুদকের অনুসন্ধান

মারুফ কিবরিয়া
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা। এই ভিসাধারী অন্তত সাড়ে চারশ’ বাংলাদেশি সেখানে সম্পদ গড়েছেন। যার মধ্যে ৭০ ব্যক্তির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি মনে করছে, শনাক্ত হওয়া এই ব্যক্তিরা দেশ থেকে অর্থপাচার করে দুবাইয়ে সম্পদ গড়েছেন। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা দুদকের ওই অনুসন্ধানে এবার নতুন মোড় নিয়েছে। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অনুসন্ধানে যাদের নাম এসেছে তারা কম-বেশি সবাই ‘আওয়ামী লীগ ঘেঁষা’ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। সম্প্রতি তাদের করনথি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। তবে ওই তালিকায় নাম উল্লেখ থাকলেও কারও পদ, পদবি লেখা নেই। 
দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান রাম প্রসাদ মণ্ডলের সই করা চিঠিতে এনবিআরকে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্নসহ সব প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।  

দুদকের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেছে। অনুসন্ধানে যাদের নাম এসেছে তারা বিগত সময়ে অর্থপাচার করে দুবাইয়ে সম্পদ গড়েছেন। আমরা আরও অনেকের বিষয়ে খোঁজ শুরু করেছি। আশা করছি শিগগিরই অনুসন্ধান শেষ হবে। 

দুদকের চিঠিতে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে পাচার করা অর্থের মাধ্যমে দুবাইয়ে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে তথ্য যোগ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ৭০ বাংলাদেশির মধ্যে রয়েছেন- আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এসএ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এসইউ আহমেদ। আরও রয়েছেন- শেহতাজ মুন্সী খান, একেএম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা/হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান/ সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান। ৭০ বাংলাদেশির মধ্যে আরও রয়েছেন- মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এমএ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কেএইচ মশিউর রহমান, এমএ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ শরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এটি একটি পুরনো অনুসন্ধান। কর্মকর্তাসহ পুরো টিম অনেক দিন ধরে কাজ করছে। অনুসন্ধান শেষ হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে কমিশন। 
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ এবং ইউরোপীয় সংগঠন ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশির নামে দুবাইয়ে ক্রয় করা প্রপার্টির কাগজে-কলমে মূল্য ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ই এপ্রিলে তথ্য-উপাত্ত জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়েছিল দুদক। ওই বছরের ১০ই এপ্রিল এ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। একই বছরের ১৬ই জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট থেকে দুবাইয়ে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়। অভিযোগের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে-ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূ-সম্পত্তি ও আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশির মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য রয়েছে। কাগজে-কলমে যার মূল্য ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। অভিযোগ সূত্র বলছে, ২০২০ সাল থেকে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের সম্পদ কেনার প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন। এমনকি বৈশ্বিক নেতিবাচক অর্থনীতির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ-২০২২ সালের মে মাসে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উপসাগরীয় দেশগুলোতে পাচার করা অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পদ কেনার বিষয়টি তুলে ধরে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য লুকিয়ে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ে মোট ৯৭২টি আবাসন সম্পদের মালিক হয়েছেন। এজন্য তারা ব্যয় করেছেন ৩১৫ মিলিয়ন ডলার। এসব সম্পদের মধ্যে ৬৪টি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনা ও ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। যেখানে অন্তত ১০০টি ভিলা ও কমপক্ষে ৫টি ভবনের মালিক বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। চার থেকে পাঁচজন বাংলাদেশি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। যদিও প্রতিবেদনে কারও নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

পাঠকের মতামত

দুদকের মধ্যে যেসব দূর্নীতিবাজ আছে তাদের তদন্ত কে করবে?

এস এম জুয়েল
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

শুধু দুবাই নয়,দেশের ভিতরে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ যাদের সেগুলির ও তদন্ত দরকার। দুর্নীতি বন্ধ করার একমাত্র পথ এটি।

Kazi
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪:৫৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status