ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

নারী নির্যাতন, আসামি ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেয়া এবং বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এ মামলায় বুধবার সকাল ৯টার দিকে তিন নারী আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের ছিনিয়ে নিতে সকাল ১১টা থেকে থানা ঘেরাও করে রাখেন শতাধিক গ্রামবাসী। থানা চত্বরে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে ৫১ মিনিট পর্যন্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ওসির পিকআপ গাড়িতে আসামিদের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। আসামিরা হলো- শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভীন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।

সরজমিন দেখা যায়, থানা চত্বরে উৎসুক জনতার ভিড়। পুলিশ আসামিদের গাড়িতে তুলছেন। আর জনগণ আসামি নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় মির্জাপুর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, ওই নারী আমার বাড়ি থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। আর পুলিশ চোরের পক্ষ নিয়ে আমার স্ত্রীসহ তিনজনকে ধরে এনেছে। আমরা চোরের শাস্তি এবং আটককৃতদের ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।
একই এলাকার আমিরুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ওই নারী একজন চোর। এলাকার বিভিন্ন বাড়ি চুরি করেছে। সেদিন লোকজন ধরে বিচার করেছে। আর পুলিশ আমাদের লোক ধরে এনেছে। 

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার বিকালে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। একপর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বামী।
ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে ফের প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেন। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এ সময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মামলার বাদী বলেন, ষড়যন্ত্র করে চুরির নাটক সাজিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন গ্রামের লোকজন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। কিন্তু মামলা তোলার জন্য সকলেই হুমকি দিচ্ছে। 

ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। আনন্দ-উল্লাস করছেন। কেউ কেউ এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুর রশিদ বলেন, শারীরিক নির্যাতন, চুল কর্তন, ভাঙচুর- লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক নারী মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
থানা ঘেরাও করার ঘটনা স্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, আসামিদের আদালতে নেয়ার সময় গ্রামের লোকজন বাধা প্রদানের চেষ্টা করেছে। তবুও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামিদের আদালতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status