ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

শাশুড়ি ও দুই শ্যালককে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে রবিন

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

ঢাকার ধামরাইয়ে বসতঘর থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধারের পর মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রয়াত শ্বশুরের রেখে যাওয়া  ডেকোরেটর ব্যবসা বিক্রি করে দেয়া নিয়ে কলহের জেরে বালিশচাপা দিয়ে সবাইকে হত্যা করে রবিন (২২)। গত ২রা জুন তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৪ঠা জুন রাতে রবিনকে সন্দেহজনক ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের মধুডাঙ্গা এলাকা থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই’র ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা। 

গ্রেপ্তারকৃত রবিন ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের  ছেলে। তাকে গত ৫ই জুন আদালতে পাঠালে শাশুড়ি ও দুই শ্যালককে হত্যার কথা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি  দেয়। এরপর আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। নিহতরা হলেন- গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী নারগিস বেগম (৪০), তার দুই  ছেলে শামীম হোসেন (১৭) ও  সোলায়মান (৬)। বড় ছেলে শামীম ভেকু মেশিনের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন ও ছোট  ছেলে সোলায়মান রক্ষিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্লে শ্রেণির ছাত্র ছিল। সূত্র মতে, রক্ষিত গ্রামের রাজা মিয়া ডেকোরেটরের ব্যবসা করতেন। বছরখানেক আগে তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে মারা যান। মেয়ে নাসরিন আক্তারের আড়াই বছর আগে রবিন হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। রাজা মারা যাওয়ার পর তার ডেকোরেটরের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন রবিন ও নারগিস বেগম। নেশায় আসক্ত রবিন ব্যবসার অধিকাংশ টাকা ব্যয় করে ফেলেন। এ কারণে আড়াই মাস আগে ওই ডেকোরেটরের ব্যবসাও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন নারগিস বেগম। এ নিয়েই কিছুদিন ধরে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। 

পিবিআই পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা জানান, ডেকোরেটরের ব্যবসা বিক্রির জেরেই রবিন ১লা জুন রাতে কামারপাড়া গ্রামে তার স্ত্রী নাসরিন আক্তারকে নিজ বাড়িতে ঘুমের ঘরে রেখেই ৬ কিলোমিটার দূরে রক্ষিত গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সে প্রথমে কৌশলে টিনের বেড়া খুলে তার বড় শ্যালক শামীম হোসেনের ঘরে ঢুকে। এরপর ঘুমন্ত শ্যালককে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পাশের কক্ষে তার শাশুড়ি নারগিস ও ছোট শ্যালক সোলায়মানকেও একই কায়দায় বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে দরজা লাগিয়ে রাতেই নিজ বাড়িতে চলে যায় রবিন। পরদিন রবিনের স্ত্রী নাসরিন তার মাকে ১০-১২ বার ফোন করেও না পেয়ে দুপুর ২টার দিকে মায়ের বাড়িতে যান। এ সময় ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দরজা ভেঙে একই খাটে তার মা ও দুই ভাইয়ের লাশ দেখতে পান। পরে থানা পুলিশ তিনটি লাশই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। পরদিন সন্ধ্যায় তিনজনের জানাজায়ও অংশ নেয় ঘাতক রবিন। 

রবিনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার জানান, আমার স্বামী আমাকে ঘুমে রেখে মা ও দুই ভাইকে হত্যা করেছে তা বুঝতেই পারিনি। আমার পরিবারের আমি আর আমার ৬ মাসের মেয়ে ছাড়া এখন আর কেউ রইলো না। আমি রবিনের কঠোর বিচার চাই। পিবিআই জানায়, রবিন তার শাশুড়ি ও দুই শ্যালককে হত্যার পর দু’দিন ভাত খায়নি। সে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনাও করেছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, তিন লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে নিহত নারগিস বেগমের ভাই আব্দুর রশিদ অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে রবিন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করার পর ধামরাই থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে রবিন জেলহাজতে রয়েছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status