প্রথম পাতা
আশা জাগিয়ে হার বাংলাদেশের
সামন হোসেন
১১ জুন ২০২৫, বুধবার
ম্যাচ শুরুর চার-পাঁচ ঘণ্টা আগেই বাংলাদেশ সমর্থকদের ঢল নামে জাতীয় স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের ভেতরে ও বাইরে শুধুই ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগান। স্টেডিয়ামের বাইরে ব্যান্ড বাজিয়ে উৎসবে মাতেন সমর্থকেরা। জ্বলে ফ্লেয়ার। ক্রমেই স্টেডিয়ামের গ্যালারি পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সেই সমুদ্রের শুরুতে প্রত্যাশা মতো ফুটবল খেলতে পারেননি হামজা-তপুরা। ম্যাচের শেষ ভাগে নৈপুণ্য দেখিয়েছে দল কিন্তু কাজের কাজটি আর হয়নি। আর ভাগ্যও সহায় ছিল না তপুদের। নইলে পেনাল্টি পেতে পারতো বাংলাদেশ। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথমার্ধের শেষদিকে গোল হজম করে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও এক গোল করে ব্যবধান ২-০তে নিয়ে যায় সিঙ্গাপুর। দুই গোলেই গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে দোষ দেয়া যায়। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে হামজা চৌধুরীর অ্যাসিস্টে গোল করেন রাকিব হোসেন। পরের সময়টা একচেটিয়াই খেললো বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরের গোলমুখে চাপ ধরে রেখে আদায় করে একের পর এক কর্নার। ম্যাচের শেষ দিকে ফাহিমকে ডি-বক্সের ভেতরে ফাউল করেন সিঙ্গাপুরের এক ডিফেন্ডার। কিন্তু পেনাল্টি দেননি রেফারি।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুর ম্যাচকে ঘিরে উন্মাদনা ছিল গোটা দেশে। সবশেষ ভুটান ম্যাচেও এর রেশ পাওয়া গিয়েছিল। গ্যালারিতে উন্মাদনা ছিল। সাবেক অনেক তারকা ফুটবলারের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। এই ম্যাচকে ঘিরে নানা আয়োজনও রাখে বাফুফে। ম্যাচ শুরুর আগে কনসার্ট, মধ্য বিরতিতে রঙিন লেজার শো। সবই ছিল। ছিল না শুধু মাঠের খেলায় ছন্দ। এদিন জামাল ভূঁইয়া বাদে পাঁচ প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে একাদশ সাজান কাবরেরা। যেখানে শমিত সোমকে জায়গা দিতে গিয়ে বাদ পড়েন আগের ম্যাচের গোলদাতা সোহেল রানা। একাদশে ঢুকেন মোহাম্মদ হৃদয় ও শাকিল আহাদ তপু। এদিন ম্যাচে প্রথম আক্রমণটি সিঙ্গাপুরের। নবম মিনিটে হ্যারিস স্টুয়ার্টের লং থ্রোয়ের পর জটলার মধ্যে ডিফেন্ডাররা ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বল চলে যায় দূরের পোস্টে। সেখানে সন উই-ইয়াং পা ছোঁয়ালেও বল পোস্টে রাখতে পারেননি। পঞ্চদশ মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে শাকিল আহাদ তপুর ক্রসে রাকিবের দুর্বল শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে সরাসরি গোলরক্ষকের কাছে যায়। পরে ইখসান ফান্দির হেড বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে। মিতুল ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন। হেড লক্ষ্যে থাকলে কিছুই করার ছিল না বাংলাদেশ গোলকিপারের। ২৮তম মিনিটে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে যান রক্ষণের নির্ভরতা তারিক রায়হান কাজী। চিকিৎসা নিয়ে তিনি মাঠে নামলে স্বস্তি ফিরে বাংলাদেশের তাঁবুতে। দুই মিনিট পর বাংলাদেশের ত্রাতা মিতুল মারমা। বাম দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা ফান্দির শট ঝাঁপিয়ে আটকান তিনি। এরপরই আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। শমিতের রক্ষণচেরা পাসে গতি একটু বেশি থাকায় রাকিব ছুটে গিয়েও পাননি বলের নাগাল। সিঙ্গাপুর গোলরক্ষক ছুটে এসে গ্লাভসবন্দি করেন বল। ৩৫তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে হামজার ফ্রি কিক ক্রসবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ভালো সুযোগ ৪০তম মিনিটে এসেছিল ফাহমিদুলের সামনে। কিন্তু বাম দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা এই তরুণ ফরোয়ার্ড সময়ক্ষেপণ করে শেষ পর্যন্ত দুই ডিফেন্ডারের প্রতিরোধে শটই নিতেই পারেননি। গ্যালারিকে স্তব্ধ করে ৪৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় সিঙ্গাপুর। হারিসের শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল উঁচুতে উঠে যায়, মিতুল পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে ফিস্ট করলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বল চলে যায় হ্যারিস স্টুয়ার্টের পায়ে। তার ক্রস থেকে সাইড ভলিতে জাল খুঁজে নেন উই-ইয়াং। হামজা ছুটে গিয়ে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি, বল আগেই পেরিয়ে যায় গোললাইন।
ফুটবলের ইতিহাস-ঐতিহ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে সিঙ্গাপুর। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও ২২ ধাপ এগিয়ে দলটি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অভিষেক হয় ১৯৭৩ সালে। তারও ২৫ বছর আগে বৈশ্বিক ফুটবলে পথচলা শুরু সিঙ্গাপুরের। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অভিষেক আসরেই এই সিঙ্গাপুরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। সেটি মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে। কাজী মো. সালাউদ্দিনের গোলে বাংলাদেশ লিড নিয়েও ধরে রাখতে পারেনি, ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়। ওই ম্যাচের ৪২ বছর পর ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ লিড নিয়েও জিততে পারেনি, হেরেছিল ২-১ গোলে। দীর্ঘ ১০ বছর পর গতকাল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ‘সি’ গ্রুপের এই ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কাজেম শাহকে উঠিয়ে শাহারিয়ার ইমনকে নামান কাবরেরা। তাতে রক্ষা হয়নি। গোল শোধের বদলে উল্টো ম্যাচের ৫৭ মিনিটে আরও এক গোল হজম করে বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে হ্যারিস হারুনের শট প্রথম প্রচেষ্টায় রুখে দেন মিতুল মারমা। কিন্তু মিতুলের ফিস্ট করা বল চলে যায় কাছে থাকা ইসকান ফান্দির পায়ে। ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়ান (২-০) ফান্দি। কয়েকদিন ধরেই মিডফিল্ড নিয়ে ‘বড়’ কথা বলছিলেন হাভিয়ের কাবরেরা। কাল সেই মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। হামজা শমিত চেষ্টা করেছেন কিন্তু প্রচণ্ড গরমে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছিলেন না। সেই অধরা গোলের দেখা মেলে ম্যাচের ৬৭ মিনেটে। মাঝমাঠ থেকে হামজা চৌধুরীর থ্রু পাসে রাকিবের শট গোলরক্ষকের হাত ফসকে জালে জড়ালে ব্যবধান কমায় বাংলাদেশ (২-১)। ৭৩ মিনিটে জোড়া পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। হৃদয়ে জায়গায় আল আমিন ও শাকিল আহাদ তপুর বদলে মোরসালিন মাঠে নামেন। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে হামজার ফ্রিকিক কর্নারে রক্ষা করেন সিঙ্গাপুরের এক ডিফেন্ডার। ম্যাচের ৮২তম মিনিটে চারটা কর্নার আদায় করে বাংলাদেশ। উপর্যুপরি কর্নারেও গোলের দেখা মেলেনি। ওদিকে ‘সি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে হংকংয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে ভারত। এই ভারতের সঙ্গে শিলংয়ে গোলশূন্য ড্র করেছিল বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত
Bangladesh MUST be forget dream any year world cup...rabish
বাংলাদেশ দারুন খেলা উপহার দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে খেলার মানুষিকতা দেখে ভালো লেগেছে। গোলকিপারের বিষয়টা একটু নজর দেয়া উচিত। এখনকার সময়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে এতো ক্ষুদ্রাকার গোলকিপার, খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়না।
বাংলাদেশের গলে মারা প্লেয়ার নেই দেখলাম ত বল যদি গড়িয়ে মারত তাহলে জিততে পারত।
অনেক ভালো খেলা করে জিততে পারে নাই
কুছ পরোয়া নেই। আমরা আছি তোমার সাথে।