ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে উৎমা ছড়ায় সেদিন যা ঘটেছিল

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১১ জুন ২০২৫, বুধবার
mzamin

আড়াই মিনিটের একটি ভিডিও। যেটি ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী উৎমা ছড়ার দৃশ্য এটি। তীব্র গরমে প্রশান্তির খোঁজে ছড়ার পানিতে জলকেলিতে মত্ত ছিলেন পর্যটকরা। ঈদের পরের দিন রোববার বিকালের ঘটনা। শ’খানেক পর্যটক তখন ওই ছড়ার পানিতে সাঁতার কাটছিলেন। এমন সময় এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র ও লোকজন যান উৎমা ছড়ার ছড়ারপাড় এলাকার। সেখানে গিয়ে তারা পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এক পর্যায়ে তারা এলাকার সিদ্বান্তের কথা জানিয়ে আগত পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন- এটা সরকার ঘোষিত কোনো পর্যটন স্পট না। এ কারণে এখানে না আসাই ভালো। নানাভাবে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে জানিয়ে বলা হয়- অশ্লীলতা, বেহায়াপনা বেড়েছে। পাশাপাশি মাদকের বিস্তাব ঘটেছে। এজন্য তারা উপস্থিত থাকা পর্যটকদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। প্রায় ১০ মিনিটব্যাপী তারা ওই এলাকায় অবস্থান করে এরপর চলে যান। তবে তাদের নির্দেশনার একটি ভিডিও স্থানীয়রা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেছেন। সোমবার সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। 

ভিডিওতে অনেকেই স্থানীয় আলেম সমাজ ও এলাকার মানুষের এই কর্মকাণ্ডে সমালোচনা করেন। এদিকে- বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু করে গতকাল দুপুরে ওই এলাকার আলেম সমাজ ও স্থানীয়দের ডেকে পাঠান কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও মিজ আজিজুন নাহার ও ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান। বেলা একটায় ইউএনও নিজ কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় প্রশাসনের তিনি পর্যটকদের ওখানে যেতে বারণ করার প্রসঙ্গ তোলন ইউএনও। বলেন- এ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে করা যেতো। কিন্তু হঠাৎ করে উপস্থিত থাকা পর্যটকদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার কারণে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা আলেম-ওলামা ও এলাকার মানুষ বিষয়টি নিয়ে তাদের ভুল বুঝতে পারেন। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত বলেও তারা ইউএনওকে জানান। তাদের বক্তব্য হচ্ছে; ওই এলাকায় মাদকের বিস্তার রয়েছে। একই সঙ্গে ডিজে নাচ, বেহায়াপনা হয়। এজন্য সতর্ক করা হয়েছে। ওখানে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। বৈঠক সূত্র জানায়- সিদ্ধান্ত হয়েছে পর্যটকরা ওখানে যাবে। তবে কেউ বেহায়াপনা কিংবা ডিজে গান করতে পারবেন না।

 প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে কোম্পানীগঞ্জ যুব জমিয়তের সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন সিরাজী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কাউকে ওখানে যাওয়ার ব্যাপারে বারণ করার বিষয়টি ঠিক হয়নি। সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত। সেটি আমরা বুঝতে পেরেছি। তবে; গ্রামের ভেতরে গিয়ে কেউ যাতে বেহায়াপনা না করতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন- এটি সীমান্তবর্তী গ্রামীণ এলাকা। এ ছড়ায় আগে কেউ যেতেন না। এখন অনেকেই যান। আগে থেকে ওই এলাকায় মাদকের বিস্তার রয়েছে। পর্যটকরা যাওয়া-আসা করার কারণে আরও বেড়েছে। একই সঙ্গে ডিজে গান, নাচ সহ বেহায়াপনার কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিলেন। আমরা পর্যটকদের কাছে মূলত দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে গিয়েছিলাম। তাদের যাওয়ার ব্যাপারে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল সেটি অজ্ঞাতসারে হয়েছে। ইউএনও ও ওসি’র সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এখন নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

পর্যটকরা যাবেন তবে কোনো অশ্লীলতা করবে না বলে প্রশাসন থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন- ঈদের পরদিন কিছুসংখ্যক মানুষ ওখানে গিয়ে পর্যটকদের ওই এলাকায় যেতে বারণ করেছিলেন। পরবর্তীতে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। এ নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই এলাকায় এখন পর্যটকদের যেতে কোনো বাধা নেই। নিরাপত্তার পাশাপাশি সার্বিক বিষয় পুলিশের পক্ষ থেকে দেখভাল করা হবে বলে জানান তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটক স্পটের অদূরে উৎমা ছড়ার অবস্থান। উপজেলার বিজয় পাড়ুয়ার গুচ্ছ গ্রাম অংশ দিয়ে ভারতের  মেঘালয় থেকে এই ছড়া বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেটি ছড়ার পাড় হয়ে পিয়াইন নদীতে এসে মিশেছে। সীমান্তবর্তী ছড়া হওয়ার কারণে ছড়ায় পাথর রয়েছে। ছড়া দিয়ে সব সময় স্বচ্ছ পানিও প্রবাহিত হয়। আগে এই ছড়াটি ছোট ছিল। উজানের ঢলের তোড়ে ছড়াটি দিন দিন বড় হওয়ার কারণে সৌন্দর্য বেড়েছে। এতে করে গত ৭-৮ বছর ধরে ওখানে পর্যটকরা যাওয়া-আসা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন- পাথরচুরির কারণে সাদাপাথর পর্যটনস্পটের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এখন পর্যটকরা নতুন স্পট হিসেবে উৎমা ছড়ায় ঝুঁকছেন। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছেন। এতে করে ওই এলাকায়ও ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে পর্যটকরা এলাকায় যেতে কোনো বাধা নেই। বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও ডিজে গানে আপত্তি এলাকার আলেম সমাজ ও স্থানীয় লোকজনের। গতকাল প্রশাসনের তরফ থেকে আশ্বস্ত করায় এখন পর্যটকদের ওখানে যেতে আর কোনো বাধা থাকলো না।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status