অনলাইন
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি
মানবজমিন ডিজিটাল
(৩ ঘন্টা আগে) ৮ জুন ২০২৫, রবিবার, ৩:৫৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:৫২ অপরাহ্ন

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ‘ভুল–বোঝাবুঝির’ অবসান করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরের সময় তার সাক্ষাৎ চেয়ে এ ঠিচি দেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশে বাড়তি সুবিধা নেয়ার অভিযোগ এনেছে কর্তৃপক্ষ। গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গণমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। এর মধ্যে টিউলিপ কিংবা তার মায়ের (শেখ রেহানা) বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের প্লট নেয়ার অভিযোগ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।
এদিকে এসব অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং এর কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন টিউলিপের আইনজীবীরা । পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বলেও অভিযোগ টিউলিপের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের লন্ডনের ফ্ল্যাট নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর সেটা নিয়ে তদন্ত করেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস। তিনি বলেন, মন্ত্রী হিসেবে মানদণ্ড ক্ষুণ্ন হয়, এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত নন টিউলিপ। এরপরও টিউলিপ সিটি মিনিস্টারের পদ ছাড়েন ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে লেখা চিঠিতে চলমান বিতর্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ চেয়েছেন টিউলিপ। আগামী সপ্তাহে ড. ইউনূসের লন্ডন সফরকালে তার সাক্ষাৎ চেয়েছেন তিনি। লন্ডন সফরে বৃটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস এবং কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
চিঠিতে টিউলিপ লেখেন, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ‘দুদকের দ্বারা সৃষ্ট ভুল–বোঝাবুঝি দূর করতে’ সহায়তা করবে।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। লন্ডনে জন্মেছি। এক দশক ধরে বৃটিশ পার্লামেন্টে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পদ বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। বাংলাদেশের প্রতি আমার হৃদয়ের টান রয়েছে। তবে এটা সেই দেশ নয়, যেখানে আমি জন্মেছি, বসবাস করেছি বা নিজের পেশাজীবন গড়ে তুলেছি।’
ওই চিঠিতে টিউলিপ আরও লেখেন, ‘এ বিষয়টি আমি দুদকের কাছে পরিষ্কার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা লন্ডনে আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগের আগ্রহ দেখায়নি। তারা বারবার ঢাকার একটি ঠিকানায় এলোমেলোভাবে চিঠি পাঠাচ্ছে। এই কাল্পনিক তদন্তের প্রতিটি ধাপ গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ আমার আইনি দলের সঙ্গে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি।’
টিউলিপ সিদ্দিক আরও বলেন, ‘আমি জানি আপনি নিশ্চয়ই বোঝেন, এমন প্রতিবেদন যেন আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও আমার দেশের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটায়, সেটি নিশ্চিত করা কতটা জরুরি।’
ড. ইউনূসকে লেখা ওই চিঠিতে টিউলিপ দাবি করেন, তিনি তাঁর খালার (শেখ হাসিনা) বিরোধীদের পরিচালিত একটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসা অভিযানের’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
এদিকে গত মাসে বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোনো পরোয়ানা বা আদালতের শুনানির বিষয়ে কিছুই জানেন না- এমন দাবি করেছেন টিউলিপ। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ ‘২ বি’ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতাভুক্ত দেশ হওয়ায়, যুক্তরাজ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে বাংলাদেশ থেকে স্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখাতে হয়, যা মন্ত্রী বা বিচারক পর্যায়ে যাচাই করে অনুমোদন দিতে হয়।
গত বছর যুক্তরাজ্যে সম্পদ অর্জন–সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ নিজেই টিশ মন্ত্রীদের আচরণবিধি তদারক কর্মকর্তা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের উপদেষ্টা ম্যাগনাসের কাছে হাজির হন। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় গত জানুয়ারিতে তাঁকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ম্যাগনাস জানান, তদন্তে তিনি কোনো প্রমাণ পাননি যে টিউলিপের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে। তবে তিনি এও মত দেন যে, টিউলিপের উচিত ছিল—বাংলাদেশে তার পারিবারিক সম্পৃক্ততা থেকে উদ্ভূত ভাবমূর্তির ঝুঁকির বিষয়ে আরও সতর্ক থাকা।
তদন্তে আরেকটি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়, ২০১৩ সালে মস্কোতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি পারমাণবিক চুক্তির সময় টিউলিপ সিদ্দিকের উপস্থিতি। এই চুক্তি ঘিরে গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। তবে টিউলিপ জানান, তিনি তখন মস্কোতে পর্যটক হিসেবে অবস্থান করছিলেন।
তবুও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি ও সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ।