ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খেলা

যে শহরের মানুষের সবকিছুতেই ফুটবল

সামন হোসেন, ম্যানচেস্টার (ইংল্যান্ড) থেকে ফিরে
১৬ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

ইংলিশরা আমুদে জাতি। পাঁচ দিন কাজ করার পর সপ্তাহে দুই দিন আমোদ-প্রমোদে ব্যয় করেন তারা। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার রাতে বার, পাব, ডিসকোতে জায়গা পাওয়া দায়। লন্ডন, বার্মিংহাম, লিডস নরউইচ, ব্রিস্টল প্রতিটি শহরের প্রায় একই চিত্র। কেবল ব্যতিক্রম ম্যানচেস্টার। এখানকার জনগণের আমোদ প্রমোদ সবকিছুই ফুটবলকে কেন্দ্র করে। এর মূলে দুটি ফুটবল ক্লাব। কেবল ইংল্যান্ড নয়, গোটা বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার সিটির অবস্থান শহরের মাত্র পাঁচ মাইলের মধ্যেই । মূলত এই দুই ক্লাবে বিভক্ত ম্যানচেস্টারের জনগন। 
ডার্বি মানেই ম্যানচেস্টার সিটি সেন্টারে হাতাহাতি-মারামারি অবধারিত। বিজয়ী দলের সমর্থকদের ব্যঙ্গাত্মক গান, কটূক্তি সইতে না পারলেই সেরেছে।

বিজ্ঞাপন
৮-১০ জনের আহত হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। সেটা চরমে পৌঁছালে মৃত্যুর ঘটনাও আছে। তাইতো ডার্বির দিন অ্যাওয়ে দর্শকরা আলাদা সড়কে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। ডার্বি থাকলে অফিস আদালতেও উপস্থিতি কমে যায়। দুপুর থেকে বার-পাবে ভিড় বাড়তে থাকে। ডার্বির বর্ণনা দিয়ে  সিটি সমর্থক ষাটোর্ধ্ব জুলস হোয়াইট  বলেন ‘এই দিন সরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালতে আলাদা নির্দেশনা আসে সবার জন্য। একটু আগেভাগে বাসায় ফিরে যাওয়া, রাস্তাঘাটে না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কে শোনে কার কথা। ডার্বি মানেই ম্যানচেস্টার দু’ভাগ হয়ে যাওয়া। আর তাতে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যাওয়া স্বাভাবিকই। আমরা (সিটি সমর্থকরা) অবশ্য ওদের মতো মারমুখী নই। ওরাই বেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তবে মাঠের মতো মারামারিতেও তারা পিছিয়ে আমাদের চেয়ে (হাসি)।’ প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও এই দুই ক্লাব নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। দীর্ঘদিন ম্যানচেস্টারে আইন পেশায় নিয়োজিত লাভলু কাদের। ম্যান সিটির অন্ধ ভক্ত। সিজন পাস কিনে আগেভাগেই হোম ম্যাচ দেখা নিশ্চিত করে রেখেছেন। যুগে যুগেই চলে আসছে দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের এই বৈরিতা। ফুটবলটা তাই এই শহরের মানুষ শুধু দেখে কিংবা খেলেই না, ইতিহাদ স্টেডিয়ামের দেয়ালে বড় অক্ষরে লেখার মতো ফুটবলটা এরা খায়ও (উই ইট ফুটবল)। শতবর্ষী পুরোনো ক্লাব হলেও ম্যানচেস্টার সিটি উল্লেখযোগ্য সফলতা পাচ্ছে এক যুগ ধরে। ২০১১ সালের পরের ১১ বছরকে ধরতে হবে সিটির স্বর্ণযুগ। এই সময়ে তারা প্রিমিয়ার লীগ জিতেছে ছয়বার। ২০১২ সালে লীগ শিরোপা জয় দিয়ে শুরু। কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সার্জিও আগুয়েরোর জয়সূচক গোলে নিশ্চিত হয় শিরোপা। সেই গোলের পর আগুয়েরোর জার্সি-খোলা উদযাপনের মূর্তি ইতিহাদের অন্যতম আকর্ষণ। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের পাশেই বল নিয়ে কারিকুরিতে ব্যস্ত সোনালি সময়ের আরেক তারকা ডেভিড সিলভা। দু’হাত প্রসারিত করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন সাবেক অধিনায়ক ভিনসেন্ট কোম্পানিও।
১৯১০ সালে নির্মিত শতবর্ষী ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই তৈরি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব। ৭৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামের পরতে পরতে আভিজাত্যের ছোঁয়া। পুরো স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে আছেন কিংবদন্তিরা। আছেন ম্যানইউর ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ম্যানেজার জীবন্ত কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। স্টেডিয়ামের পাশের সড়কটিরও নামকরণ হয়েছে ফার্গুসনের নামে। ২০১১ সালের পর থেকে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপার দেখা নেই রেকর্ড ২০ বারের চ্যাম্পিয়ন ম্যানইউর। টানা ২৬ বছর কোচের দায়িত্ব থাকা ফার্গুসন ২০১৩ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকেই যেন শনির দশা লেগে আছে ক্লাবটির। তার পরেও ক্লাবটিকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই সমর্থদকের। তাদের একটাই কথা লীগের ফলাফল গোল্লায় যাক, ডার্বিতে জয় চাই। যুগে যুগেই চলে আসছে দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের এই বৈরিতা। তবে একটা গর্ব আছে ম্যানচেস্টারবাসীর। বিশ্ব ফুটবল শাসন করা দুটি ক্লাবই যে তাদের প্রিয় শহরের। ফুটবলটা তাই এই শহরের মানুষের এক প্রকার আবেগ। যে আবেগ ইংল্যান্ডের অন্য শহর থেকে ম্যানচেস্টারকে আলাদা করেছে।  

 

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

খেলা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status