ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা শেখ হাসিনার

কাজী সোহাগ
১৫ আগস্ট ২০২২, সোমবার
mzamin

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি সব ধরনের বিভেদ ভুলে দলকে শক্তিশালী করতে বলেছেন। পাশাপাশি দলীয় এমপিদের প্রতি আলাদা নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, এমপিরা যেন সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে। দলের মধ্যে যেন কোনো ধরনের বিভেদ তৈরি না করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ও সফলতাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনা দিয়েছেন। জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলন মোকাবিলা করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়।

বিজ্ঞাপন
তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ঘেরাও দেবে, আমি বলেছি- হ্যাঁ আসতে দেবো। কেননা, আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি দেশের কাজ করতে দেশের মানুষ তো সেটা জানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে করা বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেন। বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, দলকে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর নির্দেশনা দিয়েছেন সভাপতি। যারা ত্যাগী তাদেরকে মূল্যায়ন করতে বলেছেন, দলীয় কমিটিতে জায়গা করে দিতে বলেছেন। 

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনমানুষের মধ্যে প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের তুলনাগুলো সামনে আনতে বলেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারে না থাকলে জনগণের জন্য কী কী দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি হতে পারে সেগুলো জনসাধারণের মাঝে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন। বিশেষ করে দলীয় এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একই প্রসঙ্গে দলের অপর সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বৈঠক শেষে মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে দলীয় সভাপতি দলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন, সামনে নির্বাচন- তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সব সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের জন্য সদস্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখতে বলেছেন। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণের মাঝে তুলে ধরতে বলেছেন।     কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়: বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন, এ নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধীদের আন্দোলন হতে পারে, কিন্তু বাড়াবাড়ি দেশের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের কষ্ট বাড়াবে যেটি তাদেরও বোঝা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপজিশনসহ নানা জনে নানা কথা বলবে, এর সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা করবে কিন্তু তারা যদি এসব বেশি করতে যায় তাহলে এর প্রভাবেই তো মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সামর্থ্য সরকারের রয়েছে। তারা আন্দোলন (বিএনপি) করে কতোটুকু সফল হবে জানি না কিন্তু তারা যেভাবে করতে চাচ্ছে তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা আমরা সামাল দিতে পারবো, সেই বিশ্বাস আমার আছে। সরকার প্রধান বলেন, মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে সেটা সরকার উপলব্ধি করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশেও সমন্বয় করা হবে। 

দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যখনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই এডজাস্ট করবো, সেটাও আমার নির্দেশ রয়ে গেছে। সমসাময়িক সংকট কাটাতে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনায় সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো আর কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী আবারো উৎপাদন বৃৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, করোনা যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন জনজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে, যার  ভুক্তভোগী হচ্ছে সারা বিশ্বের সাধারণ জনগণ। তিনি বলেন, আমেরিকা স্যাংশন দিলো রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য, কি দেখা যাচ্ছে যে শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আমাদের দেশ বলে নয়, ইউরোপের দেশগুলো এমনকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-প্রত্যেকটি মহাদেশের মানুষেরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব জিনিসের ওপরই এর একটা প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, আর আমাদের কিছু লোক তো থাকেই অপ্রয়োজনেও জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় ঐ ছুঁতা ধরে, সেটাই হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয়। সরকার জনগণের কাছে দেয়া সকল প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি এই করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশন না হতো তাহলে আমাদের দেশ কখনোই সমস্যায় পড়তো না। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম। কেননা, যে ক্ষেত্রগুলো আমাদের আমদানিনির্ভর সেখানেই সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, স্যাংশন দিয়ে লাভটা কী হলো।

 বাস্তবিক যদি লাভ কারও হয় তাহলে সেটা আমেরিকা এবং রাশিয়ারই হয়েছে। বিশ্ববাজারে ডলার এবং রুবেল’র মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ’৭৫-এর ১৫ই আগস্টের মর্মান্তিক বিয়োগান্তক অধ্যায়কে স্মরণ করে বলেন-কেন তার বাবা, মা-ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী সহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? যেখানে জাতির পিতা একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে টেনে তুলে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছর জাতির পিতা দেশ পরিচালনা করতে পেরেছিলেন, যেখানে সম্পদ বলতে ছিল কেবল দেশের মাটি আর মানুষ। সেটাই ছিল তার পুঁজি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে তুলে আনতে সক্ষম হন এবং তার স্বপ্ন ছিল এই ঘুণে ধরা সমাজকে ভেঙে একটি নতুন সমাজ গড়ার। ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে একাটি গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তৃণমূলের ক্ষমতায়ন। যে কারণে তিনি সকল মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করে জেলাভিত্তিক মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের যে ডাক দিয়েছিলেন তার লক্ষ্যই ছিল জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং আর্থসামাজিক উন্নতি করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে হয় এদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কেউ যদি কোনো পদক্ষেপ রাখতে যায় তাকে বোধ হয় বিপর্যয়ে পড়তে হয়। এটিই বাস্তবতা এবং আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের। কেননা যখনই এই দেশের মানুষ একটু ভালো থাকে বা ভালো থাকা শুরু করে তখনই যেন চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়ে যায়। তিনি বলেন, একটা শ্রেণি যেন রয়ে গেছে এদেশে, যারা এদেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হোক সেটা চায় না। অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্থবহ হোক, স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রত্যেক ঘরে পৌঁছাক, এখানেই একটা বাধা দেয়ার প্রচেষ্টা আমরা সবসময় দেখি। জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা তার খুনিদের রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছিল, পুরস্কৃত করেছিল এবং দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের মানুষকে ভূমিহীন-গৃহহীন অবস্থা থেকে মুক্ত করতে অসহায় মানুষকে ঘর করে দেয়া হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক যাই আসুক আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবসময় সজাগ থাকেন এবং মানুষের পাশে গিয়ে সকলের আগে দাঁড়ান। কাজেই সেই সংগঠনকে সুসংহত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status