২ আসামির সাজা কমে যাবজ্জীবন

দুই যুগ আগে রমনা বটমূলে ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির সাজা কমেছে। সাত আসামির মধ্যে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ছয় আসামির মধ্যে শাহাদাতউল্লাহ জুয়েলের দণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এবং বাকি ছয়জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। 

যাবজ্জীবন দণ্ডিত অপর তিন আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাদের আপিল পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি আগেই সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া, বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুর রউফ ও ইয়াহিয়া মারা যাওয়ায় তাদেরকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাদের আপিল পরিসমাপ্তি বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আকবর হোসেন, আরিফ হাসান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই, শফিকুর রহমান এবং বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাব্বির, শেখ ফরিদ ও আবু তাহেরের সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট।

শুনানি শেষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী বলেন, এটি একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। নববর্ষ একটি সার্বজনীন উৎসব। কিন্তু যারা সভ্যতাকে অস্বীকার ও সাংস্কৃতিক অধিকারকে স্বীকার করে না সেই হুজি-বি ২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল রাজধানীর রমনা বটমূলে ন্যক্কারজনকভাবে বোমা হামলা করে। ১০ জনের হত্যা এবং শত শত মানুষকে আহত করে। সেই ঘটনার রায়ে ১৪ জনের মধ্যে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ছিল। আর ছয়জনের যাবজ্জীবন ছিল। হাইকোর্টে শুনানি শেষে আজ দুইজনের যাবজ্জীবনের রায় দিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুইজন মারা গেছেন। আর একজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় ৩ জনকে এ মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। বাকি ৯ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর যাদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যাবজ্জীবন দণ্ডিত  দুইজনের মধ্যে একজন পলাতক। এই মামলায় আমরা বলেছিলাম এই মামলায় এভিডেন্স বলতে কিছু নেই।  হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে ঘুরে চতুর্থ বেঞ্চে ৪৬৭ বার সময় নেয়ার পর আজকে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সেখানে পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা থাকার পরেও তাদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। আমরা মনে করি হাইকোর্টের এই রায় সঠিক হয়নি। হয়তো লিগ্যাল এভিডেন্স না পেয়ে হাইকোর্ট বিভাগ নৈতিকভাবে সাজা দিয়েছেন। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নয়। আমার আসামিদের সাজা খাটা হয়ে গেছে। তারপরও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর উপযুক্ত সময়ে আপিল করবো।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। এ ঘটনায় করা মামলা রমনার বোমা হামলা মামলা হিসেবে পরিচিতি পায়। মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য গত বছরের ৮ই ডিসেম্বর হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের কার্যতালিকায় ওঠে। শুনানি শেষে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর গত ৩০শে এপ্রিল বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ৮ই মে দিন ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় ৮ই মে আংশিক এবং আজ বাকি রায় ঘোষণা করা হয়।