প্রথম পাতা
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ জামায়াত
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবারএকাত্তরের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজনৈতিক নীতি-নির্ধারণী ফোরামের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্র-জনতার রক্তে গড়া অন্তর্বর্তী সরকারের একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টার এই ধরনের বক্তব্যকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। বৈঠকে নেতারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই বিষয়টিকে বার বার সামনে এনে দেশে বিভাজনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছিল। কিন্তু ২৪-এর ছাত্র-জনতা এই বিভাজনকে ভূলুণ্ঠিত করে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এমন সময় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির এই ধরনের কথাবার্তা জাতি আশা করে না। এ ধরনের বক্তব্যের পিছনে আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সুদূরপ্রসারী তৎপরতা আছে বলে বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে অংশ গ্রহণকারী জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে সে স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এ পর্যায়ে এ ধরনের পুরনো কাসুন্ধি বিভাজনমূলক কথা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি। এসব কথা দেশের মানুষ অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, এ সময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ চিরতরে নির্মূল করতে হবে। এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজের ওই বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কোনো উস্কানি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনায় না জড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. শফিকুর রহমান। গতকাল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এ আহ্বান জানান তিনি।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশ স্বাধীনতার পর থেকে কখনো কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। সেই অবস্থা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সমপ্রতি বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে অনেক কিছুই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। এ অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি পরামর্শ সর্বাবস্থায় ধৈর্য, সহনশীলতা, মহান আল্লাহ্র ওপর তাওয়াক্কুল ও ইনসাফের ওপর দৃঢ় থাকার চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, কোনো উস্কানি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়ানো একেবারেই ঠিক হবে না। আশা করি, সকলে বিষয়টির দিকে গুরুত্বসহকারে নজর দেবেন। মহান আল্লাহ্ সর্বাবস্থায় আমাদের সহায় হোন। হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল, নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাসির।
উল্লেখ্য, তথ্য ও সমপ্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাওয়া’ সংক্রান্ত এক স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেন, পাকিস্তানপন্থিরা যেখানেই থাকবে, সেখানেই আঘাত করা হবে। যদিও সমালোচনার মুখে তাৎক্ষণিক স্ট্যাটাসটি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেন তিনি। শনিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর সব আন্দোলনকারী যখন ঘরে ফিরে যায় তখন মাহফুজ আলম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একাত্তর ও মুজিববাদী বাম ইস্যুতে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘একাত্তরের প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সহযোগীদের ইনিয়ে বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘মুজিববাদী বামদের ক্ষমা নেই। লীগের গুম-খুন আর শাপলায় মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের মস্তিষ্ক এরা। এরা থার্টিসিক্সথ ডিভিশন। জুলাইয়ের সময়ে এরা নিকৃষ্ট দালালি করেও এখন বহাল তবিয়তে আছে। আজ পর্যন্ত মুজিববাদী বামেরা কালচারালি ও ইন্টেলেকচুয়ালি জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করে যাচ্ছে। দেশে বসে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এরা চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। লীগের এসব বি-টিমও শিগগিরই পরাজিত হবে। অন্য কারও কাঁধে ভর করে লাভ নেই।’ এ স্ট্যাটাসে একাত্তর ইস্যু টানায় অনেকে তার পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা করেন।
পাঠকের মতামত
নিজের পূর্বের পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে আপনাদের সমস্যা কোথায়
জামায়াতের বিরোধিতা মানে মুক্তি যুদ্ধর বিরোধিতা
ভৃুল করে অনুশোচনা করলে মানুষ বড় হয়।জামায়াত ৭১ এর ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলে সমস্যা কি।
সহজ কথাটা হল - রাজাকার কেয়ামত পর্যন্ত রাজাকার ই। যুদ্ধ অপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী, ৩০ লাখ খুনের খুনি, লাখ লাখ নারীর ধর্ষক, হাজারো বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী। তোমরা রাজাকারেরা এই সহজ কথাটা বুঝলেও রাজাকার, না বুঝলেও রাজাকার। একদমই ক্লিয়ার। কোন ভেজাল নাই।
চোরের মা বড় গলা সবই জানা এরই নাম জামায়াত ইসলাম।
উপরোক্ত মন্তব্যের বিষয় ভেবে দেখা প্রয়োজন।।
সামনে সুযোগ আছে, তাই জামাতের উচিত অতীতের ভুল স্বীকার করে জাতির কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া। অতীতে কেউ কখনো ক্ষমা চেয়েছে কী চায়নি সে সব কথার মার প্যাঁচে না জড়িয়ে সোজা মাফ চাওয়া উচিত । মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধে জামাত যে পক্ষ নিয়েছিল তারা পরাজিত হয়েছে! তাই বিজয়ীদের দেশে রাজনীতি করতে হলে মাফ চেয়েই জায়গা নিতে হবে । বিকল্প রাস্তা খুঁজলে শুধু সময়ই নষ্ট হবে । এটা আপনাদের স্থায়ী ক্ষত, প্রতিপক্ষ সময়ে অসময়ে এখানে আঘাত করবে, এ অবস্থায় এদেশে কেউ আপনাদের রাজনৈতিক মিত্র হবে না, সবাই আসবে স্বার্থ উদ্ধার করতে । তাই বিবেচনা আপনাদের!