প্রথম পাতা
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
স্টাফ রিপোর্টার
১১ মে ২০২৫, রবিবার
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের অবস্থান কর্মসূচি চলার মধ্যেই সরকারের তরফে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার অদূরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছিলেন। সর্বশেষ তারা মার্চ টু যমুনা ঘোষণা দেন। এমন অবস্থায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক বসে। বৈঠক শেষে রাত এগারোটায় সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণা প্রস্তুতেরও সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আইন উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করছিল ছাত্র-জনতা। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফরমগুলো অংশ নেয়। শনিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলা অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে দলটির যাত্রা শুরু হয়।
দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও দলটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সে সময়কার কর্মকাণ্ডের জন্য ’৭১-এর ২৬শে মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও স্বাধীনতা পরবর্তী নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হয় দলটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার।
তার মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ টানা ১৬ বছরের শাসনামল দেশের ইতিহাসে গুম, খুন আর লুটপাটের রেকর্ড গড়ে। ক্ষমতায় থাকতে বিনা ভোট, রাতের ভোটের নির্বাচন করে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে নৃশংসতম গণহত্যা চালিয়েও ঘৃণ্য ইতিহাস তৈরি করে দলটি। প্রবল গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। দেশ ছেড়ে পালান দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতা। যারা দেশে আছেন তারাও রয়েছেন আত্মগোপনে।
এরপর থেকেই ছাত্র-জনতা গণহত্যার অপরাধে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলে আসছে। ২৩শে অক্টোবর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা হয়েছে। এসব মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত করতে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।
ওদিকে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উল্লাস প্রকাশ করে। শাহবাগে আন্দোলনকারীদেরও উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
পাঠকের মতামত
আওয়ামী লীগে হাফ নিষিদ্ধ করা হলো।
কিছু অর্থনৈতিক সুবিধাবাদী ছাড়া বাংলাদেশের ৯৮% মানুষের প্রানের দাবী ছিল এটা