শেষের পাতা
ডিপিডিসি’র বেলায়েতের টাকার পাহাড়
রাশিম মোল্লা
১০ মে ২০২৫, শনিবার
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন। টিউশনি করে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। চাকরি মিলে বিদ্যুৎ বিভাগে। শত শত কোটি টাকা কামিয়ে সর্বশেষ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসি থেকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অবসর নেন তিনি। বেলায়েত হোসেন চিকিৎসা করান সিঙ্গাপুর ও ভারতের ব্যয়বহুল হাসপাতালে। কেবল কন্যা ফারিয়া হোসেন মুমু এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে তিনশ’ ভরি স্বর্ণালংকার। ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডির রোড নম্বর ৩/এ বাড়ি নম্বর-৫৬ পাশাপাশি রয়েছে ১৮০০ বর্গ ফুটের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট (৩/এ/২ ও ৩/বি) আয়কর রিটার্নে যার মূল্য দেখিয়েছেন চুরানব্বই লাখ আঠারো হাজার ষাট টাকা। প্রকৃতপক্ষে ফ্ল্যাট দু’টির বাজারমূল্য কমপক্ষে সাড়ে চার কোটি টাকা। অনুরূপভাবে খিলগাঁও থানা উলন মৌজার ০৮২৫ অযুতাংশের অর্ধেক ৪১২.৫ অযুতাংশ যার মূল্য দেখিয়েছেন দুই লাখ ত্রিশ হাজার টাকা যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা। মৌজা উলন থানা খিলগাঁও ঢাকা ২.৮ কাঠা নাল জমির মূল্য দেখিয়েছেন ছয় লাখ বাহাত্তর হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে যার বাজারমূল্য এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা। আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেনি এমন অনেক সম্পদও রয়েছে তাদের। ঢাকাসহ আফতাব নগরে রয়েছে ৫ কাঠা ও ১০ কাঠার দু’টি প্লট। ঢাকার ডেমরা, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরে রয়েছে নিকট আত্মীয়স্বজনের নামে কেনা কয়েক বিঘা জমি, ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে কোটি কোটি টাকা, তার মধ্যে সঞ্চয়পত্রই রয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার।
সাবেক এই চিফ ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনের পরিবারের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদক । গত ১লা ডিসেম্বর ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকে আসা অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে অনুসন্ধানের প্রয়োজনে অভিযোগসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে ব্যাংক, বীমা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিটি করপোরেশন, ভূমি অফিস, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) ৭০টির বেশি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন ও তার স্ত্রী শামসুন নাহার অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। অনুসন্ধানের প্রয়োজনে আপনার দপ্তরে থাকা রেকর্ডপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। বেলায়েত হোসেন ও তার স্ত্রী শামসুন নাহারের পাশাপাশি এই দম্পতির তিন সন্তান নাভিল হোসেন তামীম, ফারিহা হোসেন মুমু, তাজফিকুর হোসেন তানজিফের নামে কোনো সম্পত্তি আছে কিনা- সেটাও জানাতে বলা হয়েছে এই চিঠিতে। এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা তার অভিযোগের বিষয়ে গুরুরত্বসহকারে অনুসন্ধান করছি। শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ডিপিডিসি’র সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন এবং তার গৃহিণী স্ত্রী শামসুন নাহার। পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল আলী এবং রাবেয়া বেগমের অভাবের সংসারে জন্ম নেয়া বেলায়েত হোসেনের। বেলায়েত হোসেনের নামে ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডিতে রোড নম্বর ৩/এ বাড়ি নম্বর-৫৬ পাশাপাশি রয়েছে ১৮০০ বর্গফুটের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট (৩/এ/২ ও ৩/বি) আয়কর রিটার্নে যার মূল্য দেখিয়েছেন চুরানব্বই লাখ আঠারো হাজার ষাট টাকা। প্রকৃতপক্ষে ফ্ল্যাট দু’টির বাজারমূল্য কমপক্ষে সাড়ে চার কোটি টাকা। অনুরূপভাবে খিলগাঁও থানা উলন মৌজার ০৮২৫ অযুতাংশের অর্ধেক ৪১২.৫ অযুতাংশ যার মূল্য দেখিয়েছেন দুই লাখ ত্রিশ হাজার টাকা যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা। মৌজা উলন থানা খিলগাঁও ঢাকা ২.৮ কাঠা নাল জমির মূল্য দেখিয়েছেন ছয় লাখ বাহাত্তর হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে যার বাজারমূল্য এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা।
আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেনি এমন অনেক সম্পদও রয়েছে তাদের। ঢাকাসহ আফতাব নগরে রয়েছে ৫ কাঠা ও ১০ কাঠার দু’টি প্লট। ঢাকার ডেমরা, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরে রয়েছে নিকট আত্মীয়স্বজনের নামে কেনা কয়েক বিঘা জমি, ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে কোটি কোটি টাকা, তার মধ্যে সঞ্চয়পত্রই রয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার। ঢাকা মেট্রো গ ২৬-৫৪৮৩ এক্স করোলা একটি দামি গাড়ি, নিকট স্বজনদেরকে দিয়ে করাচ্ছেন বিভিন্ন ব্যবসাবাণিজ্য। গৃহিণী স্ত্রীর শামসুন নাহারের নামে কিনেছেন একাধিক জমি, স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে রেখেছেন কয়েক লাখ টাকার এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র। বেলায়েত হোসেন চিকিৎসা করান সিঙ্গাপুর ও ভারতের ব্যয়বহুল হাসপাতালে। কেবল কন্যা ফারিয়া হোসেন মুমু এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে তিনশ’ ভরি স্বর্ণালংকার। তিনি ও তার পরিবার ব্যবহার করেন দুটি গাড়ি। একটি তার নিজের নামে ঢাকা মেট্রো গ ২৬-৫৪৮৩ এক্স করোলা বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেও অন্য গাড়িটি ঢাকা গ ১৯-৪৮৩৮ এক্স করোলা গৃহিণী স্ত্রী শামসুন নাহারের নামে ক্রয় করে বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশন করে পরবর্তীতে আমেরিকা প্রবাসী আপন চাচা শ্বশুর মো. ইয়াকুব আলী শরিফের ছেলে বেলায়েত হোসেনের চাচাতো শ্যালক রুবায়েত শরিফের নামে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে বেলায়েত হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা গাড়িটি ব্যবহার করেন। ইয়াকুব শরিফ সপরিবারে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত সুযোগসন্ধানী অর্থলোভী দুর্নীতিবাজ বেলায়েত হোসেন চাকরিজীবনে যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তার একনিষ্ঠ সমর্থক হয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন লোভনীয় পদ, দু’হাতে কামিয়েছেন টাকা, গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। আয়কর রিটার্ন দাখিলে বেলায়েত হোসেন তার সম্পদ ও অর্থের যে পরিমাণ দেখিয়েছেন প্রকৃতপক্ষে তার রয়েছে কয়েকশ’ গুণ বেশি। বেলায়েত হোসেনের গৃহিণী স্ত্রী এবং স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল শামসুন নাহারের দৃশ্যমান কোনো আয় না থাকলেও তার রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। তিনিও স্বামী বেলায়েত হোসেনের মতো আয়কর রিটার্নে নিয়েছেন জালিয়াতির আশ্রয়। আয়কর রিটার্নে তার সম্পদ ও অর্থের পরিমাণ যা দেখানো হয়েছে প্রায় ঊনষাট লাখ টাকা প্রকৃতপক্ষে তার নামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ অথচ তিনি গৃহিণী। শামসুন নাহারের নামে ৪৪/এ হাজীপাড়ায় এবং হাজী লেন রামপুরায় রয়েছে ২ কোটি টাকার জমি। বিভিন্ন ব্যাংকে নিজের নামে, পুত্রের নামে ও নিকট আত্মীয়দের নামে রয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র। গার্মেন্টসের ব্যবসা করান আপন বোন নাজমুন নাহার ও ভগ্নিপতি কামরুজ্জামানকে দিয়ে। বেলায়েত হোসেন ও শামসুন নাহার দম্পতির বিরুদ্ধে রয়েছে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ। ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন ও শামসুন নাহারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিষয়ে জানতে চেয়ে তাদের মোবাইল নম্বরে বার বার ফোন দিয়ে এবং মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।