ঢাকা, ৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা ভারতের, এরপর কী?

মানবজমিন ডিজিটাল

(১৮ ঘন্টা আগে) ৭ মে ২০২৫, বুধবার, ১:৪৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

mzamin

এটাই কি শেষ, নাকি শেষের শুরু? বুধবার ভোরে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের কিছু অংশে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর কথা উল্লেখ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। মোদি সরকার বলেছে যে, এপ্রিল মাসে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ ছিল এই হামলা। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। যাদের বেশিরভাগই ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক। এই হামলার জন্য ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করেছে। দুই দেশের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান উত্তেজনা যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, এই উদ্বেগের মধ্যে অন্তত পাঁচটি ভিন্ন স্থানে ভারতীয় অভিযান চালানো হয়, যার মধ্যে কোনও সামরিক স্থাপনা ছিল না বলে দাবি ভারতের। পাকিস্তান কামানের গোলাবর্ষণ করে এর জবাব দেয়। দাবি করে যে, তারা কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে এই সংঘর্ষের মূল কারণ কী? এই সংঘর্ষ দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী কাশ্মীর বিরোধকে কী রূপ দেবে? এই উদীয়মান সংঘাত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

এটি কোনও আকস্মিক আক্রমণ নয়, পূর্বনির্ধারিত

আটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল ইন্ডিয়া ফেলো সৃজন পালকারি মনে করেন, এটি কোনও আকস্মিক আক্রমণ নয়। এই ধরনের সামরিক অভিযানে পূর্বাভাস এবং ধরন গুরুত্বপূর্ণ। ১৯ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যার জবাবে ২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, চল্লিশ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হবার পর ২০১৯ সালে বালাকোটে বিমান হামলা এবং এখন ‘ধর্মীয়ভাবে’ অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার জবাবে অপারেশন সিঁদুর। ২০০১ সাল থেকে ভারত নিজের কৌশল দেখিয়ে আসছে। (২০০১ সালে ভারতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় অপারেশন পরাক্রম দশ মাস স্থায়ী হয়েছিল, যা সামরিক অচলাবস্থা তৈরি করে। ১৯৯৮ সালে উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পর এটি দ্বিতীয়। এরপর কোনো ব্যাপক যুদ্ধ হয়নি) হামলার পরপরই ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উত্তেজনা বৃদ্ধির কোনও উদ্দেশ্য নেই। সন্ত্রাসী হামলার পর দুই সপ্তাহের কূটনৈতিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আরও উত্তেজনা বা সৈন্য বাহিনীর পদক্ষেপের সম্ভাবনা কম। পাকিস্তানি নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া, যারা ভারতের কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধ ঘোষণা বলে ঘোষণা করেছে, তাও এই ধরনের কৌশলেরই একটি অংশ। 

পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে  অর্থায়নের বিষয়ে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। পাকিস্তানে যে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না বা সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত একে-৪৭ এবং এম-৪ রাইফেলের মতো মারাত্মক সামরিক অস্ত্র দিয়ে তাদের সজ্জিত করছে না তা প্রমাণ করতে হলে পাকিস্তানকে স্বচ্ছ হতে হবে।

সন্ত্রাসবাদ দমনের পদ্ধতি অব্যাহত রেখে ভারতেরও বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সামনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। সন্ত্রাসী হামলাকে সামনে রেখে পাকিস্তানকে প্ররোচিত না করে বরং তার কৌশলগত, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সুবিধাগুলো কাজে লাগানো উচিত। দীর্ঘমেয়াদে এটি ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষা এবং কাশ্মীরের শান্তির পথ সংরক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসাবে প্রমাণিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রকে তার পক্ষ থেকে স্বচ্ছতা এবং সংলাপের জন্য জোর দিতে হবে। সংলাপের একটি মূল পদ্ধতি হতে পারে সিন্ধু পানি চুক্তির পুনরায় আলোচনা, যা ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে কোনও পুনরায় আলোচনার ব্যবস্থা নেই, তাই পক্ষগুলোকে আলোচনার জন্য ইচ্ছুক হতে হবে। উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে ‘পানি’ আলোচনার উৎস হতে পারে।

কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এই উত্তেজনার ভার বহন করে চলেছেন

২২শে এপ্রিলের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রমাণ-ভিত্তিক তদন্তের আহ্বানের মধ্যে ভারতের বিমান হামলা এই অঞ্চলের ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিবেশ এবং অস্থিতিশীলতার দিকে ইঙ্গিত করে। এমনটাই মনে করছেন আটলান্টিক কাউন্সিলের স্কোক্রফট মিডল ইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের একজন সহকারী পরিচালক মানাল ফাতিমা। নয়াদিল্লির অতি-জাতীয়তাবাদী সরকারের উপর অভ্যন্তরীণ চাপ এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলাসহ দীর্ঘস্থায়ী নজির দেখায় এই প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত ছিল, যা একইভাবে সীমান্তবর্তী শত্রুতায় পরিণত হয়েছিল। এই স্ট্রাইক, তর্ক-বিতর্ক এবং প্রতিশোধের আদান-প্রদান নতুন নয়। পেহেলগাম হামলার পরপরই উভয় সরকারই তাদের পুরনো বক্তব্যে ফিরে আসে। ভারত পাকিস্তানের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেয়ার রেকর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে এবং পাকিস্তান অভিযোগ করে যে, আক্রমণটি একটি ভুয়া অভিযান ছিল। এই পারস্পরিক দোষারোপের খেলাটি একটি গভীর কৌশল, সংঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবেলা করার অক্ষমতা বা অনিচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। এই সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কাশ্মীরের জনগণ। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের কিছু অংশে কাশ্মীরিরা হয়রানি এবং শারীরিক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানা গেছে। পেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো, যা এই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং নিরাপত্তামূলক নিয়ন্ত্রণকে আরও জটিল করে তুলেছে, তা তুলে ধরে যে ভারত-পাকিস্তানের নতুন উত্তেজনার মধ্যে সাধারণ কাশ্মীরিরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক উভয় দিক থেকেই চাপ বহন করে চলেছেন। 

কৌশলগতভাবে, একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ কোনও পক্ষেরই উপকারে আসবে না। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি হ্রাস পাবে এবং সামরিক পদক্ষেপ বিদেশি বিনিয়োগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভারত, যে  নিজেকে একটি উদীয়মান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, ‘অস্থিরতা সহ্য করতে পারে না’। 

অন্যদিকে একটি পারমাণবিক প্রতিবেশী দেশে উত্তেজনা বৃদ্ধির ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে, তা দুর্ঘটনাক্রমে হোক বা ইচ্ছাকৃত। যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত এই ইস্যুতে খুবই সক্রিয় হলেও নিজের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়ের সাথেই যোগাযোগ করেছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে ওয়াশিংটন উত্তেজনা হ্রাসের জন্য অনুরোধ করবে। 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, 'আমি আশা করি এটি খুব দ্রুত শেষ হবে।' প্রশাসনের উচিত এটি নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সকল চাপ প্রয়োগ করা। পর্দার আড়ালে থাকা  যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব এবং আঞ্চলিক প্রভাবশালীদের  অন্তর্ভুক্ত করে একটি বৃহত্তর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো অপরিহার্য। এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রচেষ্টাকে বিপন্ন করে এবং উভয় দেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। আঞ্চলিক সমৃদ্ধি টেকসই শান্তির উপর নির্ভরশীল, যা দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমাগত সংঘর্ষের আবহে সম্ভব নয়।

স্ট্রাইকের পরে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম

স্কোক্রফট মিডল ইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের একজন অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো অ্যালেক্স প্লিটসাসিস মনে করেন, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ হলো পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ৯টি ‘সন্ত্রাসী শিবির’কে লক্ষ্য করে একটি সীমিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। আটলান্টিক কাউন্সিলের সন্ত্রাসবাদ দমন প্রকল্পের প্রধান অ্যালেক্স প্লিটসাসিস বলছেন, এই হামলাগুলো ছিল ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার সরাসরি প্রতিশোধ, যেখানে পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সাথে যুক্ত রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এর ২৬ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করে। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ভারতীয় পর্যটক। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই অভিযানকে ‘কেন্দ্রিক, পরিমাপিত এবং অ-উত্তেজনামূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে জোর দিয়ে বলেছে যে, এটি শুধুমাত্র মুজাফফরাবাদ এবং কোটলিতে প্রশিক্ষণ শিবিরের মতো ‘সন্ত্রাসী’ অবকাঠামোতে আঘাত করেছে এবং পাকিস্তানি সামরিক বা সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে, পাকিস্তান অস্বীকার করেছে যে, হামলাগুলো সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। তারা  দাবি করেছে যে, ভারত বেসামরিক এলাকায় আঘাত করেছে। যার প্রেক্ষিতে ভারতীয় বাহিনীর দাবি তারা নির্ভুলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করেছে এবং বিমানগুলো  পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। যা বৃহত্তর সংঘাত রোধে সংযমের ইঙ্গিত দেয়।

ভারতের পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল তাৎক্ষণিক হুমকিকে নিরপেক্ষ করা এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি কমানো। প্রকাশ্যে এই হামলাগুলোকে ‘সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী’ অভিযান বলে উপস্থাপন করে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের উপর প্রতিশোধমূলক চাপ সীমিত করার চেষ্টা করেছে। পাকিস্তান এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং বেসামরিক হতাহতের অভিযোগ করেছে। এর জবাবে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উভয়পক্ষের মধ্যে কামান ও ছোট অস্ত্রের গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে। 

তবে বেসামরিক হতাহতের খবর নিশ্চিত করা হয়নি। এই অভিযানের নকশা ভারতের ২০১৬ এবং ২০১৯ সালের হামলার প্রতিফলন, যেখানে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ না করেই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। যা ভারতের দিক থেকে একটি নির্দিষ্ট ধরনের প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়। বাণিজ্য স্থগিতাদেশ এবং আকাশসীমা বন্ধের মতো কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের পরও তীব্র উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম বলে অনুমান করা হচ্ছে। উভয় দেশই তাদের পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক চাপের মুখে যুদ্ধ এড়াতে উৎসাহিত। ঐতিহাসিক নজির রয়েছে যে, সীমিত পদক্ষেপের পরেও কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে উভয় পক্ষই উত্তেজনা কমাতে পারে। কাশ্মীরের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকলেও, ভারতের সংযত মনোভাব এবং পাকিস্তানের সতর্ক বক্তব্য সংকট নিয়ন্ত্রণে পারস্পরিক স্বার্থের ইঙ্গিত দেয়।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সমগ্র অঞ্চলে সমস্যা সৃষ্টি করবে

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (South Asia Association of Regional Cooperation বা SAARC) অ-পারমাণবিক সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপের মতো দেশগুলো প্রভাবিত হতে পারে। এটি এমন একটি বিষয়  যা SAARC-এর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এমনটা মনে করছেন আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রের একজন অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো রুদাবেহ শহীদ। যদি দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট রাষ্ট্রগুলোর ভূ-রাজনৈতিক এবং অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি জটিল হবে। আগেই আসে বাংলাদেশের নাম। যেখানে সাম্প্রতিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে শেখ হাসিনার ভারতপন্থী প্রশাসনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা গভীরভাবে মেরুকৃত পরিবেশে দেশ শাসন করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের মনোভাব এবং সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীকে আতিথেয়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী মনোভাব ক্রমেই বাড়ছে। রাজনৈতিক ম্যান্ডেট না থাকায় অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব সুশীল সমাজের কিছু অংশের কাছ থেকে আরও দৃঢ়ভাবে জাতীয়তাবাদী, সম্ভবত ভারত-বিরোধী অবস্থান গ্রহণের জন্য তীব্র চাপের সম্মুখীন হবে। একই সাথে ভারত কূটনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশা বাড়াতে পারে, যা ঢাকাকে অত্যন্ত অনিশ্চিত অবস্থানে ফেলে দেবে।

শ্রীলঙ্কায়, সরকার ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তার অবস্থানকে নীরবে মেনে নিয়ে সতর্কভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে পারে। তবে, কাশ্মীর সংঘাতের তীব্রতা শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি এই সমস্যাটিকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর বৃহত্তর দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এই অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা মোকাবেলাকারী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে পারে।

নেপাল ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করবে, কিন্তু ভারত নেপালের নিরপেক্ষতাকে সন্দেহের চোখে দেখতে পারে। সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা, যার মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক বিরোধ এবং কাঠমান্ডুর বৃহত্তর সার্বভৌমত্বের দাবি, দেশটিকে কূটনৈতিক চাপে রাখতে পারে। ভারতে নেপালের বিশাল শ্রমশক্তি অর্থনৈতিক নির্ভরতার একটি উপাদান, যা এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সম্পর্কের কারণে ভারতের সাথে ভুটানের নীরবে জোট বাঁধার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তবে ভারতের যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ সমালোচিত উত্তর সীমান্তে চীনা কার্যকলাপকে আরও উৎসাহিত করতে পারে। 

এদিকে কাশ্মীর যদি আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়, তাহলে মালদ্বীপের ঘরে ঘরে ক্রমবর্ধমান ইসলামপন্থী মনোভাব বৃদ্ধি পাবে। কৌশলগত স্তরে ভারত মহাসাগরে বর্ধিত সামরিকীকরণ মালে-র হেজিং কৌশলকে ধাক্কা দেবে।

সামগ্রিকভাবে কাশ্মীরে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি আঞ্চলিক জোটকে সমস্যার মুখে ফেলবে, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন হ্রাস করবে এবং দক্ষিণ এশীয় অ-পারমাণবিক রাষ্ট্রগুলোকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মূল্য চোকাতে হবে। এর ফলে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের উপর প্রভাব পড়বে। ওয়াশিংটন ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে তার আঞ্চলিক ভারসাম্য প্রচেষ্টার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে দেখে, বিশেষ করে কোয়াডের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।দীর্ঘস্থায়ী ভারত-পাকিস্তান সংকট কেবল ভারতের কৌশলগত মনোযোগকে  ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে পশ্চিম স্থল সীমান্তের দিকেই সরিয়ে দেবে না, বরং এই অঞ্চলে একটি নেট নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে তার কাজ করার ক্ষমতাকেও সীমাবদ্ধ করবে।

সূত্র : আটলান্টিক কাউন্সিল

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status