ঢাকা, ৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

সহযোগীদের খবর

শিল্পে টানা গ্যাস সংকট, উৎপাদনে ভাটা

অনলাইন ডেস্ক

(২২ ঘন্টা আগে) ৭ মে ২০২৫, বুধবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

mzamin

সমকাল

‘শিল্পে টানা গ্যাস সংকট, উৎপাদনে ভাটা’-এটি দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, চাহিদার তুলনায় গ্যাস মিলছে ৪০ শতাংশ কম। কলকারখানার চাকা ঘুরছে ধুঁকে ধুঁকে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ভালুকাসহ দেশের সব শিল্পাঞ্চলেই অভিন্ন পরিস্থিতি। সবচেয়ে বিপদে পড়েছে দেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত। গ্যাসের অভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে এ খাতের ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ।

রাতে মিললেও দিনে গ্যাস যেন দুষ্প্রাপ্য। কাজ না থাকায় অনেক কারখানার শ্রমিক দিনে অলস সময় কাটাচ্ছেন। রাত থেকে ভোর– এ সময়ে গ্যাসের চাপ বাড়লেই ঘোরে কারখানার চাকা। শ্রমিককে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে সে সময় কাজে নামানো হয়।

অনেক উদ্যোক্তা সিএনজি, এলপিজি বা ডিজেল দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। বিকল্প জ্বালানি ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে উৎপাদন খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু কারখানা। গত আট মাসে শুধু নারায়ণগঞ্জেই ১৯ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়েও। মার্চের চেয়ে এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১২৩ কোটি ডলার। এর পরও আমদানিকারকদের অর্ডার সময়মতো পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, সময়মতো পণ্য পাঠাতে না পারায় বাতিল হচ্ছে রপ্তানি আদেশ।

গ্যাস সংকটের এ পটভূমিতে আজ বুধবার শিল্প মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

কমছে গ্যাস সরবরাহ

কয়েক বছর ধরে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হলেও ডলার সংকট, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে সংকট কাটছে না। দেশে এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। গতকাল মঙ্গলবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে ২৭২ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া গেছে ১৮৮ কোটি ঘনফুট।

এক বছর আগে ৫ মার্চ দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ছিল ২০১ কোটি ঘনফুট। ২০২৩ সালের ৫ মে দেশীয় ক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ২১২ কোটি ঘনফুট। ২০২১ সালের ৫ মে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পেট্রোবাংলা পেয়েছে ২৪৭ কোটি ঘনফুট, অর্থাৎ চার বছরে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কমেছে ৫৯ কোটি ঘনফুট। আমদানি করা এলএনজি থেকে দিনে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়।

ভূতত্ত্ববিদ ড. বদরুল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে গুরুত্ব না দিয়ে এলএনজিনির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। তবে আর্থিক সংকটে চাহিদা অনুসারে এলএনজি আনতে পারছে না সরকার। ফলে ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। আর অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতার কারণে দিনে ১১০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি সরবরাহ করাও সম্ভব নয়।

পোশাক খাতে বড় ধাক্কা

নারায়ণগঞ্জ শহরের রহমান নিট গার্মেন্টের ডাইং সেকশনে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শ্রমিক অলস সময় কাটাচ্ছেন। শুধু একপাশ থেকে আসছে যান্ত্রিক শব্দ, সেখানকার শ্রমিকরা কর্মচঞ্চল।

প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন জানান, দুপুর ২টায় গ্যাসের চাপ সাধারণত ১০ পিএসআই থাকে। এখন আছে আড়াই পিএসআই। সকাল ৬টার দিকে ২ পিএসআই ছিল। চাহিদার চেয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গ্যাস কম পাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিনে উৎপাদন ক্ষমতা আট টন কাপড়। সেখানে গত দুই মাসে দিনে সর্বোচ্চ আড়াই টন কাপড় ডাইং করা যাচ্ছে। অতিরিক্ত কাজ করিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’ গ্যাসের একই হাল ফতুল্লার ওসমান গার্মেন্ট, শাহ ফতেহ উল্লাহ গার্মেন্ট ও এম বি নিট ফ্যাশনেও।

আড়াইহাজারের লিটল গ্রুপের ভূলতা কারখানায় গত সোমবার সন্ধ্যায় গ্যাসের চাপ শূন্যে নেমেছিল। গ্যাসের অভাবে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। লিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান এম খোরশেদ আলম জানান, ঈদে শ্রমিক মজুরি ও বোনাসের চাপ কীভাবে সামাল দেবেন, তা নিয়ে দু্শ্চিন্তায় আছেন। বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে বিদ্যুৎ দিয়ে জেনারেটর বেশিক্ষণ চালালে দ্রুত নষ্ট হয়। গত জুনে তিনটি জেনারেটর নষ্ট হওয়ায় সাত কোটি টাকা খরচ করে নতুন কিনতে হয়েছে। ক্রমাগত ক্ষতির মুখে অনেক উদ্যোক্তা কারখানা বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন।

গ্যাস সংকটে গত আট মাসে নারায়ণগঞ্জে বন্ধ হয়েছে ১৯ পোশাক কারখানা। চাকরি হারিয়েছেন ১ হাজার ৫৭৩ জন। যেসব কারখানা সচল আছে, সেগুলোরও উৎপাদন কমেছে। কাঁচপুর বিসিক, মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মেঘনা শিল্পাঞ্চল, চৈতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ কারখানার উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। সোনারগাঁর টিপরদী এলাকার চৈতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে গিয়ে জানা যায়, তাদের কারখানায় দুই বছর ধরে গ্যাস সংকট চলছে। তিতাস কর্তৃপক্ষকে সাতবার চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান হয়নি। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ৫০ পিএসআই চাপের গ্যাসের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে তারা পাচ্ছেন ২০-২৫ পিএসআই গ্যাস।

তিতাস গ্যাসের সোনারগাঁ জোনের উপমহাব্যবস্থাপক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, সোনারগাঁয় যে চাহিদা, সেই পরিমাণ গ্যাস মিলছে না।

পোশাক খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের কারখানা ৩৬টি। গ্যাস সংকটে সব কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপদে রয়েছে গ্রুপটি। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর কাছে সহায়তা চেয়ে গ্রুপের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিটিএমএ নোমান গ্রুপের কথা উল্লেখ করে বলেছে, পর্যাপ্ত গ্যাস না পেয়ে নোমান গ্রুপের ২৮টি বস্ত্রকলে উৎপাদন প্রায় বন্ধ।

ওই চিঠিতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, তিতাস শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতে দিচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তিতাস গ্যাস প্রতিদিন শিল্প খাতে ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমিয়েছে। বিটিএমএ বলেছে, চাহিদা অনুযায়ী যদি দৈনিক ১২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো, তাহলে শিল্প খাতের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হতো। বর্তমান গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন আরও কমে একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আসছে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সংকট তৈরি হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কাও রয়েছে বলে চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে।

গাজীপুরে উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে

গাজীপুরের মৌচাকের সাদমা ফ্যাশন ওয়্যার কারখানায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সংকটে পাঁচ হাজার শ্রমিকের অধিকাংশই কর্মহীন। পরিচালক সোহেল রানা বলেন, গ্যাস সংকটে উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনো রকমে কারখানা চলে। সকাল ৬টার পর গ্যাসের চাপ এতটাই কমে যে আর উৎপাদন সম্ভব হয় না। তিনি জানান, ৫৫ শতাংশ শ্রমিক অলস সময় পার করছেন। তারা প্রতিদিনই কারখানায় আসছেন, তবে কাজ করতে পারছেন না। 
কালিয়াকৈরের খাড়াজোড়া এলাকার সামছুল আলামিন স্পিনিং মিলেও একই হাল। গ্যাস সংকটে ৪০টি যন্ত্রের সবগুলোই বন্ধ। ব্যবস্থাপক সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের এ সুতা তৈরির কারখানায় ১০ পিএসআই গ্যাস পাওয়ার কথা। কয়েক মাস আগেও দেড় পিএসআই গ্যাস পেতাম। বর্তমানে গ্যাস নেই। তাই সব যন্ত্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলা ও মহানগরে আড়াই হাজারের কাছাকাছি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে এসব কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে।

তিতাস গ্যাসের গাজীপুর জোনের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) রিদওয়ানুজ্জামান বলেন, গাজীপুরে প্রতিদিন প্রায় ৫৯ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে মিলছে ৩৬ কোটি ঘনফুট।

সাভার-আশুলিয়াতেও সংকট

সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে কারখানা রয়েছে এক হাজার দুইশর বেশি। কয়েক মাস ধরে এসব কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। বিকল্প হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা।

আশুলিয়ার নরসিংহপুরে অবস্থিত নিউ এজ পোশাক কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের কারখানায় গ্যাস প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ পিএসআই। গ্যাস পাচ্ছি ১ থেকে ২ পিএসআই। এতে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে।

সাভারের উলাইল এলাকার আল মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। কারখানাটির পরিচালক মোসলেম উদ্দিন জানান, ১ জানুয়ারি থেকে তাদের কারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস-স্বল্পতার কারণে বয়লার চালু করা যায় না। ফলে শ্রমিকরা কাজে এলেও বসে থাকেন।

স্টিল মিল চলছে রাতে

ধুঁকছে স্টিল কারখানাও। দিনে গ্যাসের চাপ না থাকায় কারখানা চলছে রাতে। এতে খরচ বাড়ছে দেড় থেকে দুই গুণ। রহিমা ইস্পাত মিলের চেয়ারম্যান সাইফুর রহমান খোকন সমকালকে বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকেই গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাসের চাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই; থাকছে কখনও ৩, কখনও ৫ কিংবা ৭ পিএসআই। দিনে বেশি বেকায়দায় পড়তে হয়। তাই এখন রাতে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে দেড় গুণ। অন্যান্য খরচ বেড়েছে দুই গুণ। এভাবে চলতে থাকলে ঋণখেলাপি হয়ে পথে বসতে হবে।

ঢাকার কাঁচপুর ব্রিজ এলাকার বন্দর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম বলেন, কারখানায় দুটি ফার্নেসচালিত বয়লার আছে। একটি চলছে, একটি বন্ধ রয়েছে। আবার যেটি চলছে, সেখানেও দেখা যায় উৎপাদন হচ্ছে ৪০ শতাংশ।

ধুঁকছে সিরামিকও

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি ও মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে এ পরিস্থিতি। বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া, গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় যেসব সিরামিক কারখানা আছে, সেগুলোর পরিস্থিতি খুবই খারাপ।

খাদ্যপণ্য

ভারী শিল্পের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনও। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজারে প্রাণ-আরএফএল অন্যতম অংশীদার। গ্যাসের অভাবে গ্রুপটির উৎপাদন কমছে। গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন ধরে রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।        

আসছে না নতুন শিল্প

গ্যাস সংকটে শিল্পে নতুন সংযোগ প্রায় বন্ধ। পুরোনো কারখানায় লোড বাড়ানোর অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে না। শিল্পে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমেছে। বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বরং গ্যাস সংকটে চালু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ছে বেকারত্ব।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, লোড বাড়ানো ও নতুন সংযোগের জন্য প্রায় এক হাজার আবেদন জমা পড়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোতে। এর মধ্যে অন্তত ৭০০ আবেদন নতুন সংযোগের। তিতাস গ্যাসেই নতুন গ্যাস সংযোগের ৬০০ আবেদন জমা আছে।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, নতুন সংযোগের ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হচ্ছে। কয়েক মাসে নতুন সংযোগ তেমন দেওয়া না হলেও এখন শ্রেণিবিন্যাস করা হচ্ছে। অগ্রাধিকার অনুসারে সংযোগ দেওয়া হবে।

গত ৩০ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও দুই বছর ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ডাকছি। অথচ নিজের দেশের উদ্যোক্তারা জ্বালানি সংকটে ভুগছেন।

কারা কী বলছেন

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল সমকালকে বলেন, আমার ফিনিশিং সেকশনে মাত্র ৫০০ কেজির একটা ছোট বয়লার। সেটিও চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সারারাত অপেক্ষা করে সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস এনে বয়লার চালাতে হয়। যারা বড় বড় বয়লার চালান, তাদের কী অবস্থা?

তিনি জানান, সরকারকে শিল্প উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংকট কাটাতে আপাতত এক জাহাজ এলএনজি আমদানি করে শিল্পে দেওয়া হোক। এ-সংক্রান্ত সব ব্যয় উদ্যোক্তারা বহন করবেন। এখনও সরকারের তরফ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত সোমবার সমকালকে বলেন, গ্যাস নিয়ে শিল্প মালিকরা অভিযোগ করছেন। তারা বাড়তি দামেও গ্যাস পেতে মরিয়া। তাদের সঙ্গে বুধবার বসে কীভাবে সংকট মোকাবিলা করা যায়, আলোচনা করব। তিনি বলেন, উৎপাদন কম বলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি থাকছে। এটি কমানোর চেষ্টা চলছে।

প্রথম আলো

দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর ‘বিতর্কিত ৯টি ধারা বাদ, আগের মামলা বাতিল’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। দীর্ঘ আলোচনা ও খসড়া পরিবর্তনের পর গতকাল মঙ্গলবার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত নয়টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য বা কনটেন্ট, যেটি সহিংসতা উসকে দিতে পারে, সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’–এর এ খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’–এর খসড়ার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সাইবার জগতে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ নয়টি ধারা ছিল কুখ্যাত ধারা। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯৫ শতাংশ মামলাই এসব ধারায় হয়েছিল। এসব মামলা এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এ ছাড়া ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধারায় যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল হয়ে যাবে।

যুগান্তর

‘হাসিনার ভুলে ফের খাদে আ.লীগ’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পাতার শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত, চরম দাম্ভিকতা এবং ক্ষমতালোভী স্বৈরশাসনের কারণে আওয়ামী লীগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এসব কারণে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগকেও পলাতক দলে পরিণত করেন। কিন্তু ভারতে পালিয়ে গিয়েও তিনি ক্ষান্ত হননি। অব্যাহতভাবে দেশে থাকা নেতাকর্মীদের উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার নির্দেশে ঝটিকা মিছিলের নামে মাঠে নামতে গিয়ে এখন নতুন করে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্র্মী। এতদিন যারা নানা কৌশল অবলম্বন করে এলাকায় কোনোমতে টিকে ছিলেন তারাও এখন দৌড়ের মধ্যে আছেন। ইতোমধ্যে সারা দেশে অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার নতুন ভুলে খাদের কিনারে থাকা আওয়ামী লীগ এখন একেবারে খাদের মধ্যে পড়ে গেছে।

এসব কারণে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার প্রতি এখন চরম ক্ষুব্ধ। যারা মনে করেছিলেন, সত্যিই শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসতে পারবেন। আওয়ামী লীগ এভাবে ঝটিকা মিছিলের মধ্য দিয়ে দ্রুত রাজনীতিতে ফিরতে পারবে, তাদের সে আশা পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। তাই শেখ হাসিনা এবং পরিবারের সদস্যদের সুবিধার জন্য কেউ আর রাজপথে নামবে না। এছাড়া বিদেশে পলাতক থেকে দলের যেসব গডফাদার উসকানি দিচ্ছেন তাদেরও তারা ফাইন্যালি লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন।

কালের কণ্ঠ

দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর ‘ব্যবসায় মন্দা, রাজস্বে ঘাটতি’। খবরে বলা হয়, ব্যবসা-বিনিয়োগে আস্থাহীনতা। উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে ধীরগতি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ। ব্যবসা প্রসার ও নতুন বিনিয়োগ নিয়ে নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষা।

সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে চাহিদা কমায় এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

পরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় তা কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সে হিসাবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বছরে ৩৬৫ দিনের প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা আদায় করতে হতো। তবে প্রথম ৯ মাসে আদায়ের ক্ষেত্রে বিরাট রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেওয়ায় তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে, যা আদায়ের কাছাকাছি যাওয়াকেও খুবই চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ইত্তেফাক

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর ‘সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে ইসির আইনি জটিলতা কাটল’। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত আইনে বিদ্যমান জটিলতা দূর করে সংশোধনী আনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন, এখন অধ্যাদেশ জারি হলে সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে, সেটি তারা ইচ্ছা করলে শুরু করতে পারবে।

তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই সীমানা নির্ধারণ নিজেদের ইচ্ছামতো করা হতো। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ আছে। এখন আমাদের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত যে আইন আছে, সেখানে একটা ব্যাখ্যাগত ভুলের কারণে এটা নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারছিল না। নির্বাচন কমিশন এই আইন প্রস্তাব করেছে। এখন আমরা এই সংশোধনী করে দিয়েছি। এখন সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে, সেটা তারা ইচ্ছা করলে এই অধ্যাদেশ গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা শুরু করতে পারবে দুই-চার দিনের মধ্যে।

এর আগে আইনটির ৪, ৬ ও ৮ ধারায় অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে সংশোধনী আইনের একটি খসড়াও পাঠানো হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি আন্তঃ মন্ত্রণালয় কমিটি খসড়াটি পর্যালোচনা করে।

এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোড অব সিভিল প্রসিডিওর (সিপিসি) সংশোধনীর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে সিভিল মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর, এমনকি যুগের পর যুগ লাগে। এখানে আমরা অনেক পরিবর্তন এনেছি।

বণিক বার্তা

‘উদ্ভট পরিসংখ্যানের পিঠে চড়েছে দেশের অর্থনীতি’-এটি বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বিদ্যুতের ভোগ ও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির মধ্যে বেশ দৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলে বিদ্যুতের ভোগও বাড়ে, বিশেষ করে শিল্প ও কৃষি খাতে। এর কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে তা শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্য প্রয়োজনীয় সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদাকেও বাড়িয়ে দেয়। যদিও স্বতঃসিদ্ধ এ নিয়ম বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো হয়। এখানে বিদ্যুতের ভোগ কমে গেলেও উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে দেখা গেছে।

২০১৮ সালে দেশে বিদ্যুতের ভোগ ছিল দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণাত্মক, যদিও এ সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে বিদ্যুতের ভোগ বাড়া সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার নজির রয়েছে। ২০২৪ সালে দেশে বিদ্যুতের ভোগ বেড়েছে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। বিপরীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে এ উদ্ভট চিত্র দেশের তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০’ প্রণয়ন করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে মহাপরিকল্পনায় প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ার প্রাক্কলন করা হয়। দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতেরও বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে—এ বিবেচনায় বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৯০টির বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়।

বিশেষ আইনের আওতায় এসব কেন্দ্রের দায়িত্ব পায় তৎকালীন সরকারের পছন্দের লোকেরা। যদিও বিদ্যুতের চাহিদা সেভাবে বাড়েনি। উল্টো বছরের বেশির ভাগ সময় কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে সরকারকে। অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনা না হওয়ায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে আর্থিকভাবে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

আজকের পত্রিকা

দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘৬৫৮ কোটি টাকায় কেনা নতুন কোচ-ইঞ্জিনে ত্রুটি’। খবরে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬৫৮ কোটি টাকায় কেনা ডিজেলচালিত ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) এবং ১৪৭টি যাত্রীবাহী কোচের বেশ কয়েকটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এগুলোর ডিসপ্লে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ঘোষণা শুনতে পাচ্ছে না যাত্রীরা। এ কারণে ডিসপ্লে, পিআইএস, কাপলার প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। অকেজো পড়ে আছে তিনটি পাওয়ার কার।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (ওয়ারেন্টির মেয়াদকালে) কোরীয় ঠিকাদারের ত্রুটি মেরামত করার কথা। কিন্তু প্রকল্প দপ্তর, কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কোরীয় প্রতিনিধিকে জানানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমস্যা জটিল হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের জন্য সার্কিট ডায়াগ্রাম, ম্যানুয়াল, প্রোডাক্ট ব্রুশিয়ারের হার্ড কপি এবং সফট কপি সরবরাহ করা হয়নি।

তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলওয়ে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সমস্যা হয়েছে। এর আগে কিছু ত্রুটি ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। ঠিকাদারকে ঢালাও দায় দেওয়া যাবে না। এখনকার সমস্যাগুলো কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকল্প দপ্তরে এলে এবং ওয়ারেন্টির মেয়াদ থাকলে ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া যাবে।

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা ২০টি লোকোমোটিভ ও ১৪৭টি কোচ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে চলাচল করছে। রেলের পূর্বাঞ্চলের সূত্র জানায়, এসব কোচ ও ইঞ্জিনে বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কোচের ডিসপ্লে, অ্যামপ্লিফায়ার, কাপলার ও ভলিউম অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

দেশ রূপান্তর

‘সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় ২৭% পদে লোক নেই’-এটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতার সংবাদ। খবরে বলা হয়, দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিকসহ সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ২৭ শতাংশ পদ ফাঁকা। বর্তমানে প্রথম-২০তম গ্রেড পর্যন্ত এ ধরনের অনুমোদিত পদ ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২৮টি। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৬১ জন। ৬৩ হাজার ৫৭১টি পদ শূন্য। তবে গ্রামাঞ্চলে এই ফাঁকা পদের হার ৪০ শতাংশ।

বিশেষ করে চিকিৎসক ঘাটতি এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদিত পদের বিপরীতে সাধারণ চিকিৎসকের ঘাটতি ২৫ শতাংশ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি ৫৮ শতাংশ।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৩) অর্জন থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, সব বয়সী মানুষের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণে এসডিজি-৩ অর্জনের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ৩১ দশমিক ৫ জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৪ দশমিক ৫ জন সেবা প্রদানকারী থাকার কথা। অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবাদানকারী রয়েছেন ১১ দশমিক ৭০ জন।

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দেশের স্বাস্থ্যসেবাদানকারী জনবলের এই চিত্র উঠে এসেছে। কমিশন বলেছে, চাহিদা মোতাবেক উৎপাদনে অক্ষমতা, প্রয়োজনীয় নীতিমালার অভাব এবং উপকরণের সীমাবদ্ধতার কারণে এসডিজি-৩ নির্দিষ্ট অনুপাতে অর্জন করা কঠিন।

ডেইলি স্টার

দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতার খবর ‘UN experts concerned over journo arrests’ অর্থাৎ ‘সাংবাদিকদের গ্রেফতার নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের গ্রেফতার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের তিনজন বিশেষজ্ঞ।

এক চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, গত জুলাই মাসে বিক্ষোভ চলাকালে আন্দোলনকারী হত্যার অভিযোগে ১৪০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবরে তারা উদ্বিগ্ন। ওই ১৪০ জনের মাঝে সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রূপা ও শাকিল আহমেদের নামও রয়েছে। সরকার পতনের পর গত বছরের আগস্টেই ওই দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এসব সাংবাদিককে গ্রেফতারের কারণ কী এবং তা কীভাবে আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশের দায়বদ্ধতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ-চিঠিতে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে মামলাগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে পুনর্বিবেচনা করারও অনুরোধ করেন তারা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম ‘জনস্রোতে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ চার মাস যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অভ্যর্থনায় সিক্ত হয়ে গতকাল বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান।

সাড়ে তিন বছর পর তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ঘরে প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গে দেশে ফেরেন দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে বহনকারী কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি তাঁর গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ফিরোজায় আসেন। এ সময় পথে পথে জনস্রোতের ফুলেল অভ্যর্থনায় সিক্ত হন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।

বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা উষ্ণ শুভেচ্ছা ও অভ্যর্থনা জানান দলীয়প্রধানকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে বিজিবি, পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেন। দেশনেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হন। তাঁরা বেগম জিয়ার গাড়ির ওপর ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে উষ্ণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিমানবন্দরে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানানোর পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁর আগমন দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সহজ করবে।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status