অনলাইন
কাশ্মীর অচলাবস্থার মধ্যে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, সতর্ক করলো মুডি'স
মানবজমিন ডিজিটাল
(৯ ঘন্টা আগে) ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:০১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:২৬ অপরাহ্ন
তিন দিনের মধ্যে পাকিস্তান এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালো। ভারত বলেছে যে, তারা বেশ কয়েকটি রাজ্যকে নিরাপত্তা মহড়া পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দু দেশের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। বিশ্বশক্তিগুলো দুই দেশকেই শান্ত থাকার আহ্বান জানানোর পর আন্তর্জাতিক আর্থিক রেটিং সংস্থা মুডি'স সতর্ক করে দিয়েছে যে, এই অচলাবস্থা ইসলামাবাদের অর্থনৈতিক সংস্কারকে পিছিয়ে দিতে পারে। ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
ভারত পাকিস্তানকে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে। যদিও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, নয়াদিল্লি শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায়। দুই দেশ তাদের স্থল সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, বাণিজ্য স্থগিত করেছে এবং একে অপরের বিমান সংস্থাগুলোর জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে কাশ্মীরে সীমান্ত জুড়ে ছোট অস্ত্রের গুলি বিনিময় জারি রয়েছে।
সোমবার রয়টার্সকে ভারতের একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি রাজ্যকে ৭ মে নাগরিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করার জন্য মক সিকিউরিটি ড্রিল পরিচালনা করতে বলেছে। তবে সেই রাজ্যগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, মহড়ায় বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন, বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা এবং যেকোনো আক্রমণের ক্ষেত্রে সাড়া দেয়ার জন্য লোকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এর আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছিল যে, তারা ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করেছে। যার নাম ছিল 'আবদালি'। এর ঠিক দুই দিন পর ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) পাল্লার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে পাকিস্তান। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পোশাকি নাম 'ফাতেহ’। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন যে, সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী। দেশের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার সাংবাদিকদের বলেছেন, এই মুহূর্তে ভারতের সাথে কোনও যোগাযোগের চ্যানেল খোলা নেই।
আন্তর্জাতিক আর্থিক রেটিং সংস্থা মুডি'স বলেছে যে, এই অচলাবস্থা পাকিস্তানের ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দেশটি গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্রোগ্রাম নিশ্চিত করার পর এবং খেলাপি ঋণের হুমকি এড়ানোর পর অর্থনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। মুডি'স জানিয়েছে, ভারতের সাথে উত্তেজনার ধারাবাহিক বৃদ্ধি সম্ভবত পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলবে এবং সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে। যার ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে পাকিস্তানের অগ্রগতি পিছিয়ে যাবে। ক্রমাগত উত্তেজনা বৃদ্ধি পাকিস্তানের বহিরাগত অর্থায়নের অ্যাক্সেসকেও ব্যাহত করতে পারে এবং এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ভারত ইতিমধ্যেই আইএমএফকে পাকিস্তানকে দেওয়া ঋণ পর্যালোচনা করতে বলেছে।
মুডি'স আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানের সাথে ‘ন্যূনতম অর্থনৈতিক সম্পর্ক’ থাকায় ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে না।
যদিও উচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যয় নয়াদিল্লির আর্থিক শক্তির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পাকিস্তান বলেছে যে, তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য প্রাথমিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাবে।
সূত্র : রয়টার্স