অর্থ-বাণিজ্য
ক্যাপটিভ পাওয়ার সংযোগের বাল্ক ভোক্তা সীমা বাড়ানোর দাবি টেক্সটাইল মিল মালিকদের
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৪ ঘন্টা আগে) ২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৭:৫০ অপরাহ্ন
দেশের টেক্সটাইল মিল মালিকরা ক্যাপটিভ পাওয়ার গ্যাস সংযোগের জন্য বাল্ক ভোক্তার সীমা বিদ্যমান ১০ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২০ মেগাওয়াট করার দাবি জানিয়েছেন। তারা ২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফওজুল কাবির খানের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
তিনি ক্যাপটিভ গ্যাস সংযোগের জন্য নিরাপত্তা জামানত সম্পর্কেও পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে দুই মাসের সমপরিমাণ বিলের সমান নিরাপত্তা জামানতের পরিবর্তে এক মাসের বিল সমপরিমাণ নিরাপত্তা জামানত এবং পুরো টাকার জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলারে বলা হয়েছে, ১০ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার গ্যাস সংযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির এনওসি আবশ্যক।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমান শিল্প প্রেক্ষাপটে ১০ মেগাওয়াটের সীমা পুরনো হয়ে গেছে এবং এনওসি সংগ্রহের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় শিল্প সম্প্রসারণে অপ্রয়োজনীয় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশেরও বেশি টেক্সটাইল ও পোশাক খাত থেকে আসে, যার ৭০ শতাংশের বেশি অংশ বিটিএমএ-সদস্য মিলগুলোর দ্বারা পরিচালিত। এসব শিল্প কারখানা মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর ক্যাপটিভ পাওয়ার উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল।
তবে, গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, ১০ মেগাওয়াট বা তার বেশি ক্যাপটিভ পাওয়ার সক্ষমতাসম্পন্ন গ্রাহকরা সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাল্ক ভোক্তা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ।
তবে, দেশের শিল্প খাতের বহুমুখী প্রবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের কারণে ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের সংজ্ঞায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
উদাহরণস্বরূপ, আগে স্পিনিং সেক্টরে ২৫,০০০ স্পিন্ডলের কারখানাকে বৃহৎ শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হতো, কিন্তু এখন ১,০০,০০০ স্পিন্ডল সক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টকে বৃহৎ শিল্প হিসেবে ধরা হয়।
আরেকটি চিঠিতে, বিটিএমএ সভাপতি মন্ত্রণালয়কে শিল্পখাতের জন্য ন্যায্য ও অনুপাতিক হারে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, গ্যাস সরবরাহ সংকট অব্যাহত থাকলে ব্যাপকভাবে কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিটিএমএ জানিয়েছে, সম্প্রতি তিতাস গ্যাস শিল্প খাত থেকে গ্যাস সরিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ বাড়িয়েছে, যার ফলে শিল্প খাতে সংকট আরও বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, পেট্রোবাংলার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, তিতাস পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস শিল্প খাতে সরবরাহ করেছে, একই সময়ে বিদ্যুৎ ও সার খাতে গ্যাস সরবরাহ সেই পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আবাসিক খাতে গ্যাস সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার পরও শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ অনুপাতে কমানো হয়েছে।’
গ্যাস সরবরাহ সীমিত হওয়ায় রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল মিলগুলো প্রত্যাশিত উৎপাদন বজায় রাখতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেক টেক্সটাইল মিল চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে ঈদুল আজহার আগে শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস পরিশোধে বিঘ্ন ঘটবে।
রাসেল আরও জানান, বিটিএমএ ১,৮৫৬টি সদস্য মিলের প্রতিনিধিত্ব করে, যার মধ্যে স্পিনিং, উইভিং, ডাইং, প্রিন্টিং এবং ফিনিশিং ইউনিট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই খাতে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের সম্মিলিত বিনিয়োগ রয়েছে, যা বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে সর্ববৃহৎ একক বিনিয়োগ।