ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলায় ফলপ্রসু বীমা চালুর দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(৩ দিন আগে) ২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১১ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য জলবায়ু ও দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন ও বীমা (সিডিআরএফআই) প্রক্রিয়ায় দরিদ্র-বান্ধব, জেন্ডার সংবেদনশীল ও মানবাধিকারভিত্তিক পদ্ধতি যুক্ত করগত আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

কেয়ার বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় সোসিও-ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এওএসইডি) কর্তৃক আয়োজিত "উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র-বান্ধব, জেন্ডার সংবেদনশীল ও মানবাধিকারভিত্তিক সিডিআরএফআই প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা" শীর্ষক এই আঞ্চলিক গোলটেবিল বৈঠকে এই আবেদন করা হয়। 
খুলনার ওয়েস্টার্ন ইন হোটেলে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশের (সিসিজে-বি) রিসার্চ ফেলো মৌমিতা দাশ গুপ্তা "উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র-বান্ধব, জেন্ডার সংবেদনশীল ও মানবাধিকারভিত্তিক সিডিআরএফআই স্কোপিং স্টাডি" শীর্ষক একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।  

গবেষণায় জলবায়ু অর্থায়নে "বহুমাত্রিক বৈষম্য" চিহ্নিত করে সমতাভিত্তিক ও স্থানীয়ভাবে প্রবেশযোগ্য অর্থায়ন কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এওএসইডি ও কেয়ার বাংলাদেশের এমএপি সিডিআরএফআই (এমএপি সিডিআরএফআই) প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত এই গবেষণায় খুলনা বিভাগ, বিশেষ করে বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা, যার মধ্যে শরণখোলা ও তালা উপজেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। রায়েন্দা, সাউথখালী, ধানসাগর, ইসলামকাঠী, জালালপুর ও খেসরা—এই ছয়টি ইউনিয়নে পরিবার পর্যায়ের জরিপ, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা ও মূল তথ্যদাতাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।  

গবেষণায় দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন পরিচালনার জন্য আর্থিক স্বায়ত্তশাসন, জনবল ও সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু বীমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা সীমিত হলেও অনুদানভিত্তিক সহায়তার জন্য শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে স্থানীয় অর্থায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা কম।

গবেষণায় জাতীয় প্রক্রিয়াগুলো যেমন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, ক্ষুদ্রঋণ ও সরকারি ত্রাণ তহবিল, এবং আন্তর্জাতিক তহবিল যেমন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ), লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড (এফআরএলডি), ইউএনএফসিসিসি ও বিশ্বব্যাংকের সুবিধাগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাটাস্ট্রফি বন্ড, প্যারামেট্রিক বীমা ও কার্বন ট্যাক্সের মতো উদ্ভাবনী অর্থায়ন পদ্ধতিও পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণায় কার্বন ট্যাক্সের মতো উদ্ভাবনী অর্থায়ন কৌশল প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং চূড়ান্ত জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন কৌশলে জলবায়ু ঝুঁকি অর্থায়ন অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া বিসিসিটি আইন সংস্কার করে কমুনিটি পর্যায়ে তহবিলের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।  প্রয়োজনভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্থাগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল ও সম্পদ বরাদ্দ এবং সকল প্রশাসনিক স্তরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কমিউনিটি-ভিত্তিক সংগঠনগুলোর (সিবিও) জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিলে সরাসরি প্রবেশের পদ্ধতি অন্বেষণের সুপারিশ করা হয়েছে। বৈশ্বিক অনুশীলন ও স্থানীয় পাইলট অভিজ্ঞতা থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সিডিআরএফআই প্রক্রিয়া ডিজাইনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ন্যাপ, এনডিসি ও অন্যান্য জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের সহনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

এওএসইডির নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফীন বলেন, জলবায়ু-আক্রান্ত দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য রাষ্ট্র একটি বীমা নীতি প্রণয়ন করবে এবং প্রতিশ্রুত ধনী দেশগুলো থেকে প্রাপ্ত জলবায়ু ক্ষতিপূরণের তহবিল দিয়ে দুর্যোগ বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করে একটি জলবায়ু বীমা স্কিম চালু করবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র সম্প্রদায়ের উপর কোনো ঋণ বা বীমা প্রিমিয়ামের বোঝা না পড়ে তা নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকতে হবে।

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের অধ্যাপক ড তুষার রায় বলেন, "বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে দুর্যোগ অনিবার্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এর সাথে সম্পর্কিত ব্যাঘাত ঘটবেই-এটি এমন এক বাস্তবতা যা আমাদের মেনে নিতে হবে। তবে, বহু-অংশীদারিত্বভিত্তিক মডেলের মাধ্যমে অভিযোজন কৌশল গ্রহণই এর সমাধান।" তিনি বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি সমগ্রভাবে মোকাবিলা করতে হবে, যেখানে ফসল, মানবজীবন, মৎস্য ও পশুসম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও বিবেচনায় নেয়া হবে। "আমাদের পদক্ষেপ কেবল প্রতিক্রিয়াশীল নয়, বরং সক্রিয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে ক্ষমতায়ন ও পরিকল্পনা ও প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় এবং সম্প্রদায়ের সহনশীলতা গড়ে তোলা যায়"।

কেয়ার বাংলাদেশ (কেয়ার) এর পলাশ মণ্ডল বলেন, "দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক অর্থনীতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের বেশিরভাগ ত্রাণ কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হওয়ার পরিবর্তে প্রদর্শন নির্ভর।"   "যদি আমরা উদ্ভাবনী আর্থিক ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগ করি- যেমন উপযোগী বীমা স্কিম, তবে এটি জলবায়ু-আক্রান্ত সম্প্রদায়ের জীবনে উল্লেখযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি আনতে পারে।" মণ্ডল বলেন, বীমা চাহিদাভিত্তিক হতে হবে।  উদাহরণস্বরূপ, উপকূলীয় মৎস্য খাত বিশেষায়িত বীমা পণ্যের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। একইভাবে, অন্যান্য খাত ও সম্প্রদায়কে তাদের নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী বীমা দেয়া উচিত। বীমা বাস্তবায়নের ইচ্ছা ও সদিচ্ছা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও নিয়ামক কাঠামো দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।

তিনি বলেন, চলতি গবেষণা ইতিমধ্যে এমন পদ্ধতির সম্ভাব্যতা দেখিয়েছে। এখন আমাদের সক্রিয় সমাধান দরকার। এর মধ্যে সঠিক নিয়ম, কৌশল ও ব্যবসায়িক মডেল উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের বীমা স্কিম প্রয়োজন। পাইলট ও প্রদর্শনী প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহি করতে হবে।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মীর রিফাত জাহান উষা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জিএম মুস্তাফিজুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম, পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুত কুমার সাহা প্রমুখ এই গোলটেবিলে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status