ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

মৌলভীবাজারে অবৈধভাবে চলছে ডলার পাউন্ডের বাণিজ্য

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
১২ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার

প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় অবৈধ পন্থায় চলছে ডলার, পাউন্ডসহ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাণিজ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই গোপনে ও প্রকাশ্যে গড়ে উঠেছে এমন অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জেলাজুড়ে গড়ে ওঠা এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এমন অনৈতিক পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চক্রটি জেলা শহর থেকে মনিটরিং করে পুরো জেলা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ রকম অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের নামে হুণ্ডির রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছে।  সূত্রমতে, জেলা শহর ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলায় রয়েছে এমন অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে এই অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাণিজ্য। চক্রটি নানা কৌশলে চালাছে মানি একচেঞ্জের নামে এমন হুণ্ডি ব্যবসা। দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে অবাধে চলছে এমন অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ নামের হুণ্ডি ব্যবসা। এতে করে বছরান্তে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারালেও এ বিষয়ে কিছুই জানে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য জেলা পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কার্যালয় বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় এমন বাড়তি সুযোগে অবৈধভাবে হুণ্ডি ব্যবসা চালাচ্ছে একটি চক্র।

  বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট শাখার ঊর্ধ্বতন দু’জন কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এমন ভয়াবহ অবস্থা আমাদের জানা ছিলনা। কেউ অভিযোগ না করায় বিষয়টি আমরা আমলেও নেইনি। যেহেতু জেলা পর্যায়ে বিষয়টি দেখভালের জন্য ওখানে কোনো কার্যালয় নেই। তাই হয়তো এই সুযোগটি ওই দুর্বৃত্ত চক্রটি কাজে লাগাচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার শহরের বেড়ীরপাড় পয়েন্টে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত জেলার একমাত্র বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান সৈয়দ মানি একচেঞ্জ। ওই প্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। ওইসব প্রতিষ্ঠানে কেউ প্রকাশ্যে আর কেউ চালাচ্ছেন এমন রমরমা অবৈধ মানি একচেঞ্জের ব্যবসা। বেড়ির পাড়ের রয়েল ম্যানশন নামের একটি মার্কেটের নিচতলা ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলে এসব অবৈধ ব্যবসা। 

তাদের নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেও। এদেরই ছত্রছায়ায় জেলা শহরের অন্যান্য স্থানসহ জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে এমন রমরমা বাণিজ্য। ওই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার সঙ্গে নানা ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে প্রবাসীদেরকেও ঠকাচ্ছে। প্রশাসনের তরফে কোনো অভিযান না হওয়ায় তারা যে যার মতো করে বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছে এই অবৈধ বাণিজ্য। প্রতাড়িত হওয়া অনেক প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা জানান তারা নানা অজুহাতে কমদামে কেনে। জেলায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাড, সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মান, পর্তুগাল ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন কয়েক লক্ষ প্রবাসী। জানা যায়, ওই অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান হলো জেলা শহরের কে এস এন্টারপ্রাইজ, শায়েক এন্টারপ্রাইজ, আনোয়ার এন্টারপ্রাইজ, নিউ জলি ক্লথ স্টোর, বেড়ির পাড়রস্থ শহরের রয়েল ম্যানশনের ইউনিক টাইলস, শাহ মোস্তফা টেলিকম, তরফদার এন্টারপ্রাইজ, রুমন এন্টারপ্রাইজ, মদিনা ট্রেডার্স, ফারিয়া ইলেট্রনিক্স, এসএ ট্রাভেলস অ্যান্ড কনসাল্টেন্ট, কোরেমি ট্রেডার্স, জিসান এন্টারপ্রাইইজ, এফ ইলেকট্রনিক্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। 

জেলায় সরকার অনুমোদিত সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক সৈয়দ ফয়ছল আহমদ মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়ে নিয়ম কানুন মেনে প্রায় ২৫ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। কিন্তু  অবৈধভাবে ব্যবসা করছে একটি চক্র। এদের কারণে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তেমনি সরকারও বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।  সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা মৌলভীবাজারের ব্যবস্থাপক আজিজুল হক রাসেল মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একমাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ। আর কারা অবৈধ ব্যবসা করছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি দেখভাল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।  জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ধরনের অবৈধ ব্যবসা যাতে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status