ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশ

১৮ দফা ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
mzamin

ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ আত্মপ্রকাশ করেছে। দলটির স্লোগান হলো ‘গড়বো মোরা ইনসাফের বাংলাদেশ’। দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। 

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের নাম ও কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। অনুষ্ঠান শেষ হয় দুপুর ১২টায়। 

এ সময় শওকত মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি গণ-অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পর ওইসব সংগ্রামী চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অভ্যুদয় ঘটে। যেহেতু রাষ্ট্র সাজবে একাত্তর ও চব্বিশের গণজাগরণের চেতনায়, সেই আঙ্গিকে নতুন দলের আবির্ভাব অনিবার্য। জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় প্রত্যাশায় সকল প্রকার বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে জনকল্যাণ, ইনসাফ ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দূরীকরণ করতে। আজ নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করছি।

তিনি আরও বলেন, মোটা দাগে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা, ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান- সর্বোপরি ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনায় আমরা জনতা পার্টি বাংলাদেশ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মূল স্লোগান হবে- গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ। সাম্য, মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশকে বিনির্মাণের সফল অভিযাত্রায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

দলের ১৮ দফা তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, অন্যান্য দলের তুলনায় আমাদের পার্থক্য হবে নিখাদ দেশপ্রেম, চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছতা ও সাহসিকতা, দলের ভেতরে-বাইরে গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা, উচ্চারণে-কর্মে-জনসেবায় অভিন্ন লক্ষ্যাভিসারী হওয়া। জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা ও নীতিনির্ধারণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। প্রবীণদের পরামর্শে, প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে ও উন্নয়নের আমরা জাতিকে তুলে দিতে চাই প্রত্যাশার নব-সোপান।

তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই নতুন দল গঠন করিনি। ২০২৪ সালের যে নির্বাচনটি হয়েছে, সেখানে অনেকে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমাকে গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে ৭০টি মামলা, সেই মামলার একটির রায় ঘোষণা করা হবে। এটা ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। ২০১৮ সালে যারা নির্বাচনে গেছে, ২০২৪ সালে নির্বাচনে যাওয়া আর ১৮ সালে নির্বাচনে যাওয়ার মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য দেখি না। ২৪ সালের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করি। কিন্তু একইসঙ্গে যারা ১৮ সালে নির্বাচনে গেছেন এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন- তাদেরও তো দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।

২০১৮ সালে একটি দল নির্বাচনে গেছে তাদের নিবন্ধন বাঁচাতে উল্লেখ করে শওকত মাহমুদ বলেন, আমি মনে করি, এখন যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান এসেছে। যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর, গণহত্যায় অংশ নিয়েছে, মানুষকে জুলুম করেছে তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন ঐক্য গড়তে আমাদের সবাইকে লাগবে। জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই বিএনপি থেকে আমার সরে আসা। তবে বিএনপি’র কাউকে দোষ দেয়ার নেই। 
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ৩২ বছর নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করেছি। যে কয়েকটি সরকারকে পেয়েছি তাদের কারও সহযোগিতা পাইনি। সরকারের সহযোগিতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ৩২ বছর যে সময় আমি দিয়েছি তা ব্যর্থ হয়েছে। এবার দেশের জন্য সততার সঙ্গে কাজ করতে চাই। দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। আমি আশা করি, আমাকে সহযোগিতা করবেন, অনুপ্রাণিত করবেন, আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
দলের নাম নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আগে-পরে এরকম হতে পারে। এটা তো একই টাইপের নয়। না, এটাতে (দলের নামকরণ) কোনো কনফ্লিক্ট হওয়ার কারণ নেই। তারপরে আরও একটা কথা হচ্ছে, উনি (উকিল নোটিশকারী) যে নামটির কথা বলেছেন, সেই নামটি কি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হয়েছে? নির্বাচন কমিশনের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন? সেগুলো না জমা দিয়ে এগুলো করার কোনো মানে হতে পারে না।

জনতা পার্টি বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র গোলাম সারওয়ার মিলন বলেন, জাতীয় পার্টি নামে নিবন্ধন চারটা, জাসদের নামে চারটা নিবন্ধন। সুতরাং এখানে যারা জনতার নাম দিয়ে দল করেছেন, আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। চেয়ারম্যান সাহেব, উনি যথার্থ জবাব দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে যখন নিবন্ধন হবে, যাকে দেবে, যে যোগ্যতা অর্জন করবে। সেই ফাইনালি থাকবে। পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, জনতার নাম দিয়ে ভবিষ্যতে তো এমনও হতে পারে আমাদের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে এক হয়ে জাতীয় জনতার জোটও হতে পারে। এই নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নাই।

পরে দলের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন কমিটি ঘোষণা করেন। নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র গোলাম সারোয়ার মিলন। ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল হক হাফিজ, ওয়ালিউর রহমান খান, রেহানা সালাম, মো. আবদুল্লাহ, এম এ ইউসুফ ও নির্মল চক্রবর্তী। মহাসচিব শওকত মাহমুদ। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম আসাদুজ্জামান। যুগ্ম মহাসচিব এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, আল আমিন রাজু ও নাজমুল আহসান। সমন্বয়কারী নুরুল কাদের সোহেল। সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ আহমেদ। প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক গুলজার হোসেন। প্রচার সম্পাদক হাসিবুর রেজা কল্লোল। সম্মানিত সদস্য হিসেবে আছেন মেজর (অব.) ইমরান ও কর্নেল (অব.) সাব্বির। উপদেষ্টা হিসেবে আছেন শাহ মো. আবু জাফর, মেজর (অব.) মুজিব, ইকবাল হোসেন মাহমুদ, ডা. ফরহাদ হোসেন মাহবুব, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, আউয়াল ঠাকুর, তৌহিদা ফারুকী ও মামুনুর রশীদ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম এ আবদুল করীম, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান মহসিন রশীদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান এবিএম খন্দকার গোলাম মূর্তজা, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাজিম উদ্দিন, নৈতিক সমাজের প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসা আমিন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের মহাসচিব শাহ আহমেদে বাদল, গণআজাদী লীগের একাংশের সভাপতি আতাউল্লাহ খান, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, আমজনতা দলের দপ্তর সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, শহীদ আসাদের ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান নূর, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান কায়সার, লন্ডন প্রবাসী শেখ মহিউদ্দিন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status