বিশ্বজমিন
দিল্লিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
পারস্পরিক শুল্ক এড়িয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ভারত
মানবজমিন ডেস্ক
২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পা রেখেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। চার দিনের সফরে সোমবার সকালে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন তিনি। তার সঙ্গে তার স্ত্রী ঊষা ভ্যান্সও রয়েছেন। মার্কিন এই ভাইস প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে ছুটে যান বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সোমবারই ভ্যান্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তাদের মধ্যে ওয়াশিংটন ও দিল্লির বাণিজ্য চুক্তিগুলো গুরুত্ব পাবে বলে জানানো হয়। যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক এড়ানোর চেষ্টা করবেন মোদি। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এনডিটিভি’র।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সোমবার সকালে নয়াদিল্লির পালাম টেকনিক্যাল এরিয়াতে অবতরণ করে তার বিমান। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছে ভারত। তাই সফরের প্রথমদিনই তার সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদি। যেখানে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বাণিজ্য ইস্যুটিকে বেশ গুরুত্ব দেবে মোদির প্রশাসন। মোদির সঙ্গে তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দুই সহযোগীÑ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও থাকবেন বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এটিই ভ্যান্সের প্রথম ভারত সফর। তার সঙ্গে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রয়েছে। যার মধ্যে পেন্টাগন এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই সফরে উভয় পক্ষই নিজেদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি এবং প্রধানমন্ত্রীর (মোদির) মার্কিন সফরের সময় আলোচিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়নের বিষয়েও মতামত বিনিময় করবে।
রয়টার্স বলছে, মোদি-ভ্যান্স বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত পারস্পরিক শুল্ক এড়ানোর ওপর জোর দেয়া হবে। তাদের বৈঠকের পাশাপাশি সফরের প্রথম দিনই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাজমহল পরিদর্শনে যাবেন ভান্স। এ ছাড়া দিল্লিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানেও যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই দেশটিতে সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেখানে তিনি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলাপ করেন। ট্রাম্পকে জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা অর্ধেকের বেশি পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে প্রস্তুত রয়েছে ভারত। ২০২৪ সালে যার মূল্য ছিল প্রায় ৪১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। তবু ট্রাম্পের মন পায়নি ভারত। ট্রাম্প বরাবরই ভারতে ‘ট্যারিফ কিং’ হিসেবে অভিহিত। এক্ষেত্রে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের এবারের সফরে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় বলেন, আমরা এই সফর সম্পর্কে খুব ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছি। আশা করি, এই সফর উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আর জোরদার করবে।
ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২৯ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ভারতের উদ্বৃত্ত ছিল ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
৯ই এপ্রিল ট্রাম্পের ঘোষিত পারস্পরিক শুল্কে ৯০ দিনের যে বিরতি দেয়া হয়েছে তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে ভ্যান্সের সফরটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে দিল্লি। অন্যদিকে ভ্যান্সের এই সফর বছরের শেষের দিকে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের জোট কোয়াড নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের ভিত্তি হিসেবেও দেখা হচ্ছে।