ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

সহযোগীদের খবর

আনুপাতিক উচ্চকক্ষ, এনসিসি গণভোটে রাজি নয় বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক

(২ সপ্তাহ আগে) ২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:২৬ অপরাহ্ন

mzamin

সমকাল

দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম ‘আনুপাতিক উচ্চকক্ষ, এনসিসি গণভোটে রাজি নয় বিএনপি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ও গণভোট এবং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনে শক্ত আপত্তি আছে বিএনপির। তারা এ বিষয়ে কোনো আপসও করবে না।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ এবং রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে চলমান আলোচনায় আজ রোববারের নির্ধারিত আলোচনায়ও বিএনপি এই অবস্থান তুলে ধরবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দলটি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছিল।  

বিএনপি মনে করছে, ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন বাধ্যতামূলক করা হলে নির্বাচিত সংসদের ক্ষমতা কমে যাবে। আবার সংবিধানের যে কোনো সংশোধনের জন্য গণভোট বাধ্যতামূলক হলে সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হবে।

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবারের সংলাপে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, এনসিসি গঠনে তারা রাজি নয়। তবে এ বিষয়ে সেদিন বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আজ এই আলোচনার কথা রয়েছে।

বিএনপির আশঙ্কা, এনসিসি গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের ক্ষমতা কমে যাবে। আবার সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় উচ্চ ক্ষমতার এই এনসিসির জবাবদিহির কোনো কাঠামো থাকবে না। আবার নির্বাচনকালীন অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এনসিসি চাইলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করারও সুযোগ থাকবে।

সংস্কারের জন্য গঠিত পাঁচ কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের মধ্যে– আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষ ও এনসিসি গঠন বড় পরিবর্তন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এই দুই সুপারিশকে মৌলিক সংস্কার মনে করছে এবং তা সমর্থন করছে। জামায়াতে ইসলামীও আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের সুপারিশে একমত। দলটি এনসিসি গঠনেও রাজি। তবে তারা প্রস্তাব করেছে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনসিসি বিলুপ্ত হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, এনসিসি গঠিত হলে সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে। আবার যখন নির্বাচনকালীন সংসদ থাকবে না, তখন সর্বময় ক্ষমতার এনসিসি রাষ্ট্রের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। তাই বিএনপি এনসিসি গঠনে একমত নয়। তিনি বলেন, আশপাশের কোনো দেশে এমন বিধান নেই। বাংলাদেশেও এমন চর্চা নেই। নতুন করে কিছু চাপিয়ে দিলে তা সমাধানের বদলে সমস্যা তৈরি করতে পারে। গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে দেশ যখন একটি পর্যায়ে উপনীত হবে, তখন এসব বিষয়ে ভাবা যাবে।

অবশ্য ঐকমত্য কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় এনসিসি কীভাবে কাজ করবে, তা  সুপারিশে বিস্তারিত বলা আছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত হবে– এ আশঙ্কা অমূলক। প্রশ্ন থাকলে আলাপ-আলোচনার মধ্যে পথ বের করা সম্ভব। কমিশন শুধু রাজনৈতিক দলের মতামত এবং ব্যাখ্যা জানছে এখন।

সংবিধান সংস্কার

সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ সুপারিশের মধ্যে ১৪টিতে একমত এবং নীতিগতভাবে একমত বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটি ছয়টি সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত পোষণ করেছে। বিএনপি যে সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত নয়, সেগুলো  নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে  আলোচনা করেছে। কেন একমত নয়, তার যুক্তি তুলে ধরে।

কমিশন যেসব সুপারিশের সঙ্গে বিএনপি আংশিক একমত, সেগুলোতে কেন পুরোপুরি একমত নয়, তা জানতে চেয়েছে। বিএনপি কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। বাকিগুলো আজকের আলোচনায় উঠবে।

সংবিধান সংস্কারের তিনটি সুপারিশের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানানোর কথা বলেছিল বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, রোববারের আলোচনায় বিএনপি একই অবস্থানে থাকবে। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকতে হবে।

যদিও ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সমকালকে বলেন, প্রাণবন্ত আলোচনা হচ্ছে। বিএনপিকে অনড় মনে হয়নি। তারা প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত মতামত জানাচ্ছেন। কমিশনও কিছু বিষয়ে দলটির মতামতকে গ্রহণ করেছে।

সংস্কারের সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়েও বড় মতপার্থক্য রয়েছে। কমিশন জানতে চেয়েছিল, সুপারিশ বাস্তবায়নে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। বিকল্প হিসেবে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, গণপরিষদে ভোটাভুটি, নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার নাকি গণপরিষদ এবং নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে।

বিএনপি সংবিধান সংস্কারের যেসব সুপারিশে একমত ও আংশিক একমত হয়েছে, সেগুলো আগামী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার গঠন প্রক্রিয়াও সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করার পক্ষে তারা।  

২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফায় উচ্চকক্ষের প্রস্তাব রয়েছে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চায় বিদ্যমান পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে যেভাবে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন করা হয়, উচ্চকক্ষের আসনও সেভাবে বণ্টিত হবে।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০ দশমিক ৮ এবং আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। এ দুই সংসদে সংবিধানে চতুর্দশ ও পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।

৪০-৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসন পেয়েছিল দল দুটি। এতে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সংবিধানের যথেচ্ছ কাটাছেঁড়া রোধে সংস্কার কমিশন উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধন বিলে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং গণভোট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র সমকালকে বলেছে, সংবিধানকে সুরক্ষা দিতে আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন এবং সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনে বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, এভাবে স্বৈরাচার রোধ করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করলে সংবিধানে যথেচ্ছা বদলের আশঙ্কা থাকে না। সেদিকেই যেতে হবে।

বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাদে বাকি সব কাজ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে বাধ্য। এর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ স্বতন্ত্র আইনের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে আদতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ীই নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

এ একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, উচ্চ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার,  বিরোধী দল থেকে উচ্চ ও নিম্নকক্ষে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার,  প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার বাইরে দল থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নিয়ে ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একই সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও।

সুপারিশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে। এনসিসি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠান এবং তিন বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ করা হবে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও নিয়োগ হবে এনসিসির মাধ্যমে।

নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে এখনও মতামত জানায়নি বিএনপি। দলটির সূত্র জানিয়েছে, তারা ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল চায়। যাতে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে। দলের একজন নেতা বলেছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিএনপি রিভিউ আবেদন করেছে। বিএনপি আশা করছে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরবে। তাই এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ভাবনা তাদের নেই।

কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদ ভেঙে গেলেও এনসিসি বিলুপ্ত হবে না। নির্বাচনকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার মনোনীত দু’জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের এনসিসি গঠিত হবে।

বিএনপির মূল্যায়ন হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর মনোনীত দুই উপদেষ্টাকে সদস্য করার এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রস্তাবিত এনসিসিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবেন অনির্বাচিত ব্যক্তিরা। একে ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিএনপি নেতারা। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, অতীতে কী হয়েছে, তা মাথায় রেখে এত নিয়মকানুন লিখে গণতন্ত্র হয় না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে যথাযথ চর্চার মাধ্যমে এগোতে হবে।

প্রথম আলো

‘রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল বদল চায় এনসিপি’-এটি দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীশাসিত নয় বরং মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকারব্যবস্থা, ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে সাংবিধানিক পদে নিয়োগ, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের দলটি বলছে, সংস্কার বলতে তারা মৌলিক সংস্কারকে বোঝে, যে সংস্কার করলে রাষ্ট্রকাঠামোর একটি আমূল ও গুণগত পরিবর্তন হবে। গতকাল শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় সংস্কার প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে এনসিপি।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল দিনভর এনসিপির সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে আলোচনা শেষ হয়নি। এনসিপি জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তাদের আরও আলোচনা হবে। পরবর্তী বৈঠক কবে, তা অবশ্য জানানো হয়নি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশন বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল। আজ রোববার সকাল থেকে আবারও বিএনপির সঙ্গে মুলতবি আলোচনায় বসবে কমিশন। বিএনপি ও এনসিপি বাদে এখন পর্যন্ত ১১টি দলের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হয়েছে।

গতকাল সকালে আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য ছিল, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অর্থাৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেবল ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না; বরং কীভাবে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন করে রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক এবং গুণগত সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।’

এনসিপির আহ্বায়ক আরও জানান, তাঁর দল পরিষ্কারভাবে বলেছে, সংস্কার বলতে তাঁরা মৌলিক সংস্কারকে বোঝেন। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে সংস্কার করলে রাষ্ট্রকাঠামোর একটি আমূল ও গুণগত পরিবর্তন হবে। বিগত সময়ে আমরা সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ দেখেছি। সংবিধানে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাঠামোর বীজ বপন হয়েছিল। ফলে সেই রাষ্ট্রকাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখে যে-ই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক, তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে।’

যুগান্তর

দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘বুদ্ধিজীবীদের এ কেমন কাণ্ড’। খবরে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’ প্রকল্পে রীতিমতো লুটপাট করেছেন আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা। নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন না করেই সাড়ে ২৩ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে ১৩ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) পর্যালোচনা কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে। এটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে এই কার্যক্রম অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প বাতিলের সুপারিশ করা হয়। অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আজ বৈঠকে বসছে মন্ত্রণালয়। এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন-চেতনার দোকান খুলে এই বুদ্ধিজীবীদের এ কেমন কাণ্ড।

জামুকার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যেসব আওয়ামী বুদ্ধিজীবীর প্রতিষ্ঠান নামমাত্র গবেষণা করে যে সাত কোটি (৬ কোটি ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৬১) টাকা উত্তোলন করেছে, সেগুলো হলো-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামালের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভ (আরডিসি) চারটি গবেষণার জন্য নিয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ টাকা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসাইনের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ২টি গবেষণার জন্য ১ কোটি ৩ লাখ ৭ হাজার ৩৯৭ টাকা; উন্নয়ন সমন্বয় এর কর্ণধার (বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর) অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান ২টি গবেষণার জন্য ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন এর গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র ৪টি প্রতিবেদনের জন্য ১ কোটি ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৭ টাকা; বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১টি গবেষণার বিপরীতে নিয়েছে ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ৩২৯ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. এমরান জাহান।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদের প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পার্লামেন্টারি স্টাডিজ (সিপিএস) ১টি গবেষণা প্রতিবেদনের জন্য নিয়েছে ৭৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামানের প্রতিষ্ঠান প্রাগমেটিক কনসালটেন্সি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (পিসিআরসি) ২টি গবেষণা প্রতিবেদন করেছে। এর জন্য নিয়েছে ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮ টাকা। এই ১৬টি গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিমূল্য ছিল সর্বমোট ১২ কোটি ৪৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০ টাকা। ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে সর্বমোট ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৬১ টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো পাওনা রয়েছে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৯ টাকা।

কালের কণ্ঠ

‘আট মাসে ২২ দলের জন্ম’-এটি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদেন বলা হয়, চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর গত আট মাসে ওই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ২২টি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। গত বছরের শেষ চার মাসে আত্মপ্রকাশ করে ১১টি দল। আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আত্মপ্রকাশ করেছে ১১টি দল। এর মধ্যে গত বছর আত্মপ্রকাশ করা বেশির ভাগ দল সাংগঠনিকভাবে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে।

আর চলতি বছর আত্মপ্রকাশ করা দলগুলোর মধ্যে এনসিপিসহ দু-তিনটির দল গঠনের কাজ এখনো প্রক্রিয়াধীন। নতুন আত্মপ্রকাশ করা কয়েকটি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন ও দলীয় অফিস স্থাপনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ উপলক্ষে রমজান ও ঈদে দলগুলোর নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ ও ইফতারের কর্মসূচি পালন করেন। তবে এনসিপিসহ চলতি বছর আত্মপ্রকাশ করা বেশির ভাগ দল এখনো জেলা ও উপজেলার কমিটি ঘোষণা করতে এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

এ জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছে এবং করতে যাচ্ছে দলগুলো। এরই মধ্যে নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির জন্য গত ১৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে এনসিপি। চিঠিতে দলটির পক্ষ থেকে ৯০ দিনের মতো সময় বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছে। এসব নতুন দলের বাইরেও বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০।

গত বছর আবেদন করে নিবন্ধন পায়নি এমন দলের সংখ্যা প্রায় ৮৭। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিল হলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যাও অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে। দেশের ১২টি সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৩৯টি দল অংশ নিয়েছিল ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আর সবচেয়ে কম তিনটি দল অংশ নিয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

ইত্তেফাক

‘আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, বাড়ছে গ্রেফতারও’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল বের করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশত ঝটিকা মিছিল হয়েছে। সারা দেশে জেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছে। এসব মিছিলে ফটোসেশন করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছদ্মনামের আইডিতে সেগুলো পোস্ট করছেন। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বাইরে পলাতক থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে।

মিছিলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতাও বেড়ে গেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১ মার্চ পর্যন্ত ২২ দিনে সারা দেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সাড়ে ১২ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গ্রেফতার অভিযান একটু থেমে ছিল। গত রবিবার রাজধানীর বাড্ডায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। মিছিলটি উত্তর বাড্ডা থেকে রামপুরা বাজারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে এই মিছিল করার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এর পরই আওয়ামী লীগের মিছিলের প্রতি পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ নিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগের মিছিল কন্ট্রোল করতে না পারলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে মিছিল না হতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা কন্ট্রোল না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নয়া দিগন্ত

দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম ‘সার্বভৌমত্ব নিয়ে শঙ্কা’। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের সার্বভৌম সীমা লঙ্ঘন করে বান্দরবানে থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি মুখ এলাকায় অনুপ্রবেশ করে সামরিক পোশাকে জলকেলি উৎসব করেছে আরাকান আর্মি। বান্দরবান সীমান্তের ১০ কিলোমিটার ভেতরে রেমাক্রি জলপ্রপাতে স্থানীয় পাহাড়িদের নিয়ে আরাকান আর্মির সদস্যরা গত ১৬-১৭ এপ্রিল এই উৎসবে অংশ নেয়। এই উৎসবের সচিত্র ভিডিও আরাকান আর্মি তাদের সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে।

বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি মুখ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্রবিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউএলএর অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে আরাকা ওয়াটার ফেস্টিবল নামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয়রা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় ১০ কিমি. অভ্যন্তরে এই ধরনের আয়োজনকে সরাসরি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।বিজিবির পক্ষ থেকে অবশ্য জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য সেখানে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান করেন বলে উল্লেখ করা হয়।

গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল চলা এই ‘জলকেলি’ অনুষ্ঠানে মূলত সঙ্গীত পরিবেশনা ও নৃত্যকেই প্রধান আকর্ষণ বানানো হয় যাতে আরাকান আর্মির সক্রিয় সদস্যরা বিশেষ করে নারীদের দ্বারা সঙ্গীত পরিবেশন করানো হয়। সেইসাথে ছেলে সদস্যদেরও সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখা যায়। একক সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি সম্মিলিত সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন হতে দেখা যায় সেখানে। অনুষ্ঠানটি দিন ও রাত উভয় সময়েই চলতে থাকে। চলমান সঙ্গীত ও নিত্য পরিবেশনাকালে আঞ্চলিক নেতাদের গায়ক-গায়িকাদের সাথে চিয়ার্স আপ করা ও টাকা দিতে দেখা যায়; সেইসাথে আরাকান আর্মির অফিসারদের অস্ত্রসহ নাচতে ও অফিসারদের একজনকে বক্তৃতা দিতেও দেখা যায়।

বণিক বার্তা

দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম ‘আট দশকের যাত্রায় রাজনীতিতে অন্যতম মুখ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভাব জামায়াতের’। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রার আট দশকেরও অধিক সময় পার করেছে জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনো জোটে কখনো বা বিভিন্ন সংগঠনের আড়ালে মাঠে নেমে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে দলটি। তবে বরাবরই ছিল দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরের শক্তি। পেয়েছে ‘কিং মেকারের’ তকমাও। প্রথমবারের মতো এবারই জাতীয় রাজনীতিতে একক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আসন্ন নির্বাচনেও ধর্মভিত্তিক দলটির প্রভাব জারি থাকবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদীর হাত ধরে ১৯৪১ সালে লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে জামায়াতে ইসলামীর জন্ম। জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে শুরু হওয়া সামাজিক সংগঠনটিকে পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইসলামিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে সমাজের পরিবর্তনই এর মূল উদ্দেশ্য বলে দাবি করত দলটি। সময়ের সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে জামায়াতে ইসলামী। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতিতে দলটি প্রভাব হারাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেন এর ঠিক বিপরীত চিত্র।

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামী দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় উঠে আসে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে। এরশাদ সরকারের অধীনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ১০টি আসন পায় দক্ষিণপন্থী দলটি। যদিও ১৯৮৮ সালের একতরফা নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। বরং বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ঠিক পর পরই ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১৮টি আসনে জয়ী হন জামায়াতের প্রার্থীরা। সে সময় বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থনও করেন তারা।

একসময় বিএনপিকে দেয়া সেই সমর্থন প্রত্যাহার করে জামায়াতে ইসলামী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয় তারা। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে অবশ্য তিনটি আসন পায়। নির্বাচনের দুই বছর পর আবারো বিএনপির সঙ্গে জোট করে জামায়াত। এ জোটে থেকেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৭ আসন পেয়ে সরকারের অংশ হয়। তারপর দীর্ঘ সময় বিএনপির সঙ্গেই ছিল জামায়াতে ইসলামী।

আজকের পত্রিকা

‘বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকারে সমান অধিকারের সুপারিশ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকারের জন্য অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এই প্রতিবেদন জমা দেন।

এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন তাঁরা।

প্রতিবেদনে ১৫টি মূল বিষয়সহ ৪৩৩টি সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে করণীয় এবং কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে করণীয় সুপারিশে সংবিধানে পরিবর্তন এনে নারী-পুরুষ সমতার নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন আইনে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। যেসব আইনের পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—অভিন্ন পারিবারিক আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ধর্ষণ আইন, নাগরিকত্ব আইন, সাক্ষী সুরক্ষা আইন ইত্যাদি।

প্রতিবেদনে সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার: সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়েশিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সব বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য কমাতে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ণ ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরেনাম ‘সংস্কার নির্বাচনে বিভক্তি’। খবরে বলা হয়, নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘিরে সরগরম দেশের রাজনীতি। সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘কম সংস্কার চাইলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আর বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে।’ বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সংস্কার ও সুস্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। দেশের প্রধান বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। অন্যতম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দিতে হবে। আর আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের আগে জাতীয় নির্বাচনের বিরোধী। এ নিয়ে চলছে তর্কবিতর্ক। নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে দলগুলোতে বিভক্তি এখন প্রকট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত নয় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের মধ্যে ২০টিতে বিএনপি একমত। দুদক সংস্কারের ২০ সুপারিশের ১৯টিতে একমত ও আংশিক একমত। জনপ্রশাসন সংস্কারের ২৬ প্রস্তাবের অর্ধেকের বেশি বিষয়ে দলটি একমত, বাকিগুলোর বিষয়ে মন্তব্য রয়েছে। আর সংসদে দুজন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত করতে একমত বিএনপি।

এদিকে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মতামতে দলটি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। অন্যদিকে এনসিপি সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাবিত ১৬৬ সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত হয়েছে।

পাঠকের মতামত

বিএনপি'র প্রধান স্লোগান জনগণই ক্ষমতার উৎস তাহলে জনগণের রেফারেনড্রান মানতে আপত্তি কোথায় এবং কেন?

সাহিল
২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ১২:০৯ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনে তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি/ ‘নিয়তির সন্তান’

বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় পুলিশ/ ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ, এসআই ক্লোজড

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status