বাংলারজমিন
বিয়ানীবাজারে ‘ঠিকানা’র ধারে কাছে যান না মুক্তিযোদ্ধারা
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবারকয়েক বছর পূর্বে আধুনিকভাবে নির্মিত হয় বিয়ানীবাজার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। তিনতলা বিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণের পর থেকেই অনেকটা পরিত্যক্ত। নির্মিত হওয়ার পর থেকে এটি মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রমের চেয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে বলে বিরোধী নেতাকর্মীদের অভিযোগ। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অঘোষিত কার্যালয় হিসেবে এই ভবনটি ব্যবহারের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াত সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। অতি রাজনীতিকরণের ফলে বিয়ানীবাজার পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নিজস্ব ঠিকানায় বসতে অনীহা প্রকাশ করতেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাছাড়া নির্বাচন না হওয়ায় বিগত সাড়ে ৭ বছর থেকে অকার্যকর হয়ে পড়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের ক্যাম্পাস মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবন। নির্বাচিত কমিটি না থাকায় উপজেলা সংসদের নেই কোনো কার্যক্রম। প্রশাসনিকসহ যতটুকু কার্যক্রম রয়েছে তাও চলছে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। বিয়ানীবাজারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিসে প্রয়োজন ছাড়া না যাওয়ায় অধিকাংশ সময় তালাবদ্ধ থাকে কার্যালয়। ফলে এক সময়ের জমজমাট এই সংগঠনটি ক্রমেই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে। নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাগণ না আসায় এবং কোনো কার্যক্রম না থাকায় অনেকটা ভুতুড়ে প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে সংগঠনটি। ভবনের অধিকাংশ রুমের দরজা-জানালা ভাঙা।
সরজমিন বুধবার প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করেও কার্যালয়ের আশপাশে দেখা মিলেনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার। কোনোদিন হাতেগোনা দুই-এক মুক্তিযোদ্ধা এলেও তাদের পরামর্শ দেয়ারও কেউ নেই। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৩ই মে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে সেই নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরপর নির্বাচন নিয়ে আর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি সূত্র বলছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পুননির্ধাারণ করে জামুকা অধ্যাদেশ তৈরি করা হচ্ছে। অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত হওয়ার পরেই বড় পরিসরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু করা হবে দেশ জুড়ে। এই কাজে মাঠপর্যায়ে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত করা হবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে সক্রিয় করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই ভবনটি সম্মানীত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের জন্য ভবনের দরজা সবসময় খোলা। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের এই ভবন ব্যবহারের অনুরোধ জানান।