ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন বিএনপি নেতারা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১১ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার

 সিলেট বিএনপি বহু ভাগে বিভক্ত। গ্রুপ-উপ-গ্রুপে বিচ্ছিন্ন নেতারা।  অনেকেরই মুখ দেখাদেখি 
বন্ধ। এই অবস্থা পূর্ব থেকেই বিরাজমান। আছে মান, অভিমানও। বর্তমানেও এর ব্যত্যয় হচ্ছে না। এখনো গ্রুপ-উপ-গ্রুপ নিয়ে নেতাদের অবস্থান রয়েছে। এতে করে দলের ভেতরে অনৈক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছেন সিলেট বিএনপি’র নেতারা। এরইমধ্যে তারা নজর কাড়তে শুরু করেছেন নেতাকর্মীদের।

বিজ্ঞাপন
জেলা ও মহানগর বিএনপি’র ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। দলের নেতারা জানিয়েছেন- সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ঐক্য ফিরে আসার কারণে মাঠ পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে। কর্মসূচি পালনে এখন মাঠে নেতাদের পাশাপাশি কর্মীদেরও উপস্থিতি বাড়ছে। পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। বলেন- সিলেট বিএনপি’র এই ঐক্যর বিষয়টি নজরদারি করছে হাইকমান্ডও। এ কারণে মহানগর বিএনপিতে সাম্প্রতিক সময়ে ফাটলের আভাস পাওয়ার পরপরই হাইকমান্ডের তরফ থেকে তাদের ঢাকায় ডাকা হয়। গত রোববার বিকালে মহানগর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে হাইকমান্ডের বৈঠকের পর নেতারা নীরব হয়েছেন।

 এখন নতুন করে সিলেটের মহানগর ইউনিটকে শক্তিশালী করতে কাজ করা হচ্ছে। এতে দূরত্ব কমিয়ে কাছাকাছি আসছেন দলটির মহানগর আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পঙ্কি ও সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। রাজনৈতিক দল হিসেবে সিলেটের বিএনপি’র অবস্থান নড়বড়ে নয়। বরং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দু’বারের জয় সিলেটে দলের শক্তিশালী অবস্থান জানান দিয়েছে। মামলায় বিপর্যস্ত হওয়ার পরও নেতারা সিটি করপোরেশনে জয় ঘরে তুলতে পিছপা হননি। ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি মাঠে নামার কারণে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে। তবে- কয়েক বছর ধরে মাঠের কর্মসূচি পালনে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন নেতারা।

 জেলা ও মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে কর্মসূচি পালন করা হতো। অঙ্গসংগঠনেও ছিল অগোছালো পরিবেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এক দুই মাসের মধ্যে সিলেটে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করছেন। আর এই কর্মসূচি পালনে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছে। এমএ হক ও দিলদার হোসেন সেলিমের মৃত্যুর পর সিলেট বিএনপি’র বর্তমান সিনিয়র নেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বলা হয়ে থাকে; বর্তমানে সিলেট বিএনপি দু’ধারায় বিভক্ত। মাঠের রাজনীতিতে বিভক্তির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো। এখনো সেই বিভক্ত বিরাজমান। তবে মাঠের আন্দোলনে তারা দু’জন সমানভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ডাক পড়লেই একসঙ্গে মাঠে নামেন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত শনিবার সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে অনির্ধারিত কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিলো। 

আর এ কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া সিলেটে অবস্থান করা দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও এই কর্মসূচিতে একাট্টা হয়ে মাঠে নামেন। ছিলেন জেলা ও মহানগর বিএনপি’র শীর্ষ নেতারাও। ফলে কর্মসূচিতে কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানেও দলের সিনিয়র থেকে শুরু করে সব বলয়ের নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সিলেট জেলা বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপিতে ঐক্যবদ্ধভাবে চলার প্রক্রিয়া এখন থেকে অব্যাহত থাকবে। নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে দলের স্বার্থে সবাই এক হয়ে মাঠে নামবেন। এতে করে নেতাদের পাশাপাশি কর্মীদের মধ্যেও দূরত্ব কমিয়ে আনা হচ্ছে। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি এমএ কাইয়ূম চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি একটি পরিবার। এই পরিবারের ভেতরে প্রতিযোগিতা, মান অভিমান থাকবে। এসবকে উতরেই আমাদের চলতে হচ্ছে। তিনি জানান- নেতাদের মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে বিরোধ কমে আসার কারণে কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব কমছে। 

সিলেট বিএনপি’র অভিভাবকরাও এখন সব ভেদাভেদ ভুলে কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য সুখের বিষয়। আমরাও চাই সিনিয়র নেতারা যেন এক হয়ে সিলেট বিএনপিকে নেতৃত্ব দেন। এতে করে আমরা ভরসাও পাবো। কয়েকটি কর্মসূচিতে তারা একসঙ্গে মাঠে থাকায় কর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি সব সময় ঐক্যবদ্ধ ছিল। বিগত কয়েক বছর কিছুটা ছন্দপতন ছিল। সেটি আবার ঠিক হয়ে গেছে। কারণ; আমরা আমাদের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে চলি। স্বার্থের জন্য দল করি না বিধায় আমরা বিরোধপূর্ণ অবস্থানে যাই না। আগামীতে সিলেট বিএনপি’র নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কর্মসূচি পালনে মাঠে সক্রিয় থাকবেন বলে তিনি জানান। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন- শুধু বিএনপি নয়, অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ। আমরা একেকটি ইউনিট আরেকটি ইউনিটের পরিপূরক। 

একটি দেহের একাংশ বিকল হলে গোটা দেহ অনর্থক। সুতরাং দল গোছানো এবং আন্দোলন সবখানেই আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে এগিয়ে যাবো। দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসায় এখন আর পদবি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ কমেছে। কর্মীবান্ধব নেতা হতে হলে সবাইকে স্বচ্ছ ধারার রাজনীতি করতে হবে। আর সেটি হবে জনগণ ও দেশের স্বার্থে। এই বিষয়টি সিলেট বিএনপি’র নেতাদের অনুধাবনে এসেছে বলে জানান তিনি। এদিকে- আগামীতে সিলেট মহানগর বিএনপি সাজানো, জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনসহ দল গোছানোর অনেক মিশন রয়েছে সিলেট বিএনপি’র। এতেও নজর দিচ্ছেন সব অংশ, সব বলয়ের নেতারা। দলের সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়ার হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা ছাড়াও ঘনঘন সিলেট সফর করছেন। তাদের উপস্থিতির কারণে দলের নেতাকর্মীরা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন। তবে জেলা বিএনপি’র এক নেতা জানিয়েছেন- আমরা উচ্ছৃঙ্খলতা চাই না। জনদাবি আদায়ের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবো। এ কারণে কয়েকদিন আগে অঙ্গসংগঠনের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। আর ওই বৈঠকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি পালনে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status