বাংলারজমিন
টেকনাফে ইয়াবা পাচারে বেপরোয়া রোহিঙ্গারা, এক সপ্তাহে আটক ৩৫
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
কক্সবাজারের টেকনাফে ইয়াবা কারবারে দিন দিন বেপরোয়া উঠেছে রোহিঙ্গারা। হাত বাড়ালেই ক্যাম্পগুলোতে মিলছে ইয়াবা ও গাঁজা। ফলে কিশোর থেকে শুরু করে যুবক-যুবতীসহ ক্ষেত্র বিশেষে বৃদ্ধরাও মাদকসেবন ও পাচারে জড়িয়ে পড়ছে। এতে আশপাশের হোস্ট কমিউনিটির ওপর পড়ছে বড় ধরনের প্রভাব।
সম্প্রতি বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও কোস্ট গার্ড বিভিন্ন এলাকা, প্রধান সড়কে তল্লাশি, নাফ নদ এবং বঙ্গোপসাগরে অভিযান পরিচালনা করে লাখ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় গত এক সপ্তাহের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ৩৫ জনের বেশি রোহিঙ্গা। তারা সকলেই ইয়াবা পাচারকালে আটক হয়েছে। আটককৃত পাচারকারী সকলেই উখিয়া টেকনাফে অবস্থানরত মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা। তবে পাচারকারীরা আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মাদক কারবারে জড়িত রাঘববোয়ালরা।
জানা যায়, গত রোববার কোস্ট গার্ড ও র?্যাবের যৌথ অভিযানে টেকনাফে ৪০ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবাসহ ৬ জন ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করেছে। ধৃতরা সকলেই উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় কোস্ট গার্ড আউটপোস্ট শাহপরী এবং র্যাব-১৫ সিপিসি-১ এর সমন্বয়ে টেকনাফ উপজেলার জোড় টাওয়ার সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকায় একটি সন্দেহজনক ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোট তল্লাশি করে ৪০ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবাসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা আসামিরা সকলেই মিয়ানমারের নাগরিক বলে জানা যায়। জব্দকৃত ইয়াবা এবং আটককৃত মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে গত ১০ই এপ্রিল কোস্ট গার্ড এবং র?্যাবের সমন্বয়ে টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় গভীর সমুদ্র হতে একটি বোটকে তল্লাশি চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৭ জন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। তারা জেলে সেজে ইয়াবা পাচার করছিলেন। অপরদিকে, কক্সবাজারে কোস্ট গার্ড ও র্যাবের অপর একটি যৌথ অভিযানে ৫ লাখ পিস ইয়াবাসহ ২১ জন ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করে। এরমধ্যে ১৮ জনই রোহিঙ্গা। গত ১১ই এপ্রিল কক্সবাজারের কলাতলী বিচ সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দুইটি সন্দেহজনক ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোটকে তল্লাশি চালিয়ে বোটের ভেতর কাঠের পাটাতনের নিচে রক্ষিত বরফের ভেতর বিশেষভাবে লুকানো অবস্থায় ৫ লাখ পিস ইয়াবাসহ ওই ২১ জন মাদক পাচারকারীকে আটক করা হয়। আটককৃত ইয়াবা পাচারকারীদের মধ্যে ৩ জন কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং বাকিরা কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা।
এ ছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা মিয়ানমার হতে পাচার হয়ে অনুপ্রবেশের সময় ১৮ই মার্চ ২ লাখ পিস ও ১৯শে মার্চ দেড় লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। তবে এ সময় ইয়াবা ভর্তি বস্তাগুলো ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। ফলে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
সীমান্তে বসবাসকারী কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের সূর্য ডোবার পর অন্ধকার নেমে আসলেই শুরু হয় মাদক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য পাচারের হিড়িক। এদেশে থেকে বিভিন্ন প্রকার ভোগ্য পণ্য মিয়ানমারে পাচার এবং ওপার থেকে আসে মাদক ইয়াবা। সীমান্ত রক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে এসব ব্যবসা। অনেক সময় অল্প সংখ্যক ইয়াবা বিজিবি’র হাতে আটক হলেও বেশির ভাগ রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, আটক পাচারকারী রোহিঙ্গাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত রাঘববোয়ালদের তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা সিয়াম-উল-হক জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। মাদক পাচার রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।