খেলা
দ্রুততম সেঞ্চুরি নিগারের
রেকর্ড গড়া জয় বাংলাদেশের
স্পোর্টস ডেস্ক
১১ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
দ্রুততম সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রানের জুটি, বড় রানের ব্যবধানে জয়! নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শুরুটা দুর্দান্ত করলো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। ব্যাট হাতে দেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। শারমিন আক্তার সুপ্তাকে নিয়ে গড়লেন সর্বোচ্চ রানের জুটি। এরপর জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা ও ফাহিমা আক্তারের ঘূর্ণিতে থাইল্যান্ডকে অল্প রানে গুটিয়ে রেকর্ড গড়া জয় পায় টাইগ্রেসরা। সুমনা-ফাহিমা নেন পাঁচটি করে উইকেট।
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গতকাল লাহোরে সিটি ক্রিকেট এসোসিয়েশন মাঠে থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানে হারায় বাংলাদেশ নারী দল। টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ২৭১ রান করে টাইগ্রেসরা। ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশ নারীদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ৮০ বলে ১০১ রানের ইনিংস রান খেলা বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতির হাতে ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার। রান তাড়ায় ৯৩ রানেই থামে থাই নারীদের ইনিংস। ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জয়। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জয়ের রেকর্ড ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে মিরপুরে আয়ারল্যান্ডকে ১৫৪ রানে হারিয়েছিল জ্যোতির দল। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, আগামী রোববার।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালোই করেছিল থাইল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে নাত্তইয়া বুচাথাম ও চানিডা সুত্তিরুয়াং তুলেছিল ৩৮ রান। তবে এরপরের গল্পটা বাংলাদেশের দুই স্পিনার ফাহিমা খাতুন ও জান্নাতুল ফেরদৌসের। দুই স্পিনারের ঘুর্ণির সামনে রীতিমতো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে থাইল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। সুমনা ও ফাহিম দুজনেই নেন ৫টি করে উইকেট। নারী ওয়ানডেতে এক ইনিংসে দুই বোলারের ৫টি করে উইকেট নেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। আর সবমিলিয়ে এক ইনিংসে দুই বোলার মিলে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নেওয়ার এটি চতুর্থ ঘটনা।ওপেনার বুচাথামকে ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট শুরুটা করেন ফাহিমা। এরপর চানিডা ওটপ অর্ডারের আরেক ব্যাটার নান্নাপাট কনচারোয়েনকিকেও আউট করেছেন তিনি। মিডল অর্ডারে ধস নামান সুমনা। ওপেনিংয়ের পর শুধু চতুর্থ জুটিতে কিছুক্ষণ উইকেটে ছিলেন থাইল্যান্ডের ব্যাটাররা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি এসেছে চতুর্থ উইকেট জুটিতে, ১৮ রানের। এর বাইরে কোনো জুটি দুই অঙ্কের ঘরেও যেতে পারেনি। ৫ উইকেট নিতে ফাহিমা খরচ করেছেন ২১ রান, জান্নাতুল ৭ রান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই ইশমা তানজিনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৩ বলে ৮ রান করেন তিনি। এরপর তিন নম্বরে নামা সুপ্তা ও আরেক ওপেনার ফারজানা হক পিংকি এগিয়ে নেন দলকে। ১০৪ রানের জুটি গড়ে দুজনের বড় রানের ভিত গড়েন। ৭৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন পিংকি। দুটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা ব্যাটার এবার আউট হয়ে যান ৮২ বলে ৫৩ রান করে। এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে সুপ্তাকে নিয়ে ম্যারাথন জুটি গড়েন জ্যোতি। যখন উইকেটে সঙ্গী হন, সুপ্তা তখন খেলছেন ৪৬ রানে। একটু পরই বাউন্ডারিতে ফিফটি পূর্ণ করেন ৭৪ বলে। এরপর রানের গতি বাড়ান এই ডানহাতি ব্যাটার। তার সঙ্গী জ্যোতি ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৫ রান। শুরু থেকে দারুণ ছন্দে থাকা টাইগ্রেস অধিনায়ক ফিফটির পর হয়ে ওঠেন আরও আগ্রাসী। ৪৭ ও ৪৮তম ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি বাউন্ডারি। এরপর শেষ ওভারে ৭৮তম বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। এতদিন বাংলাদেশের একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন পিংকি। দুটি সেঞ্চুরি তার। এখন তার পাশে যোগ হলো জ্যোতির নাম, আর সেটা রেকর্ড গড়েই। পিংকির একটি সেঞ্চুরি ১৫৬ বলে, আরেকটি ১৬৫ বলে। এদিন দ্রুততম সেঞ্চুরির সঙ্গে বাউন্ডারি রেকর্ডও গড়েছেন জ্যোতি। ৮০ বলে ১০১ রানের ইনিংসে জ্যোতির চার ১৫টি। বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারির রেকর্ড এটি। পেছনে পড়ে যায় গত ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ বাউন্ডারি।
জ্যোতির সঙ্গে সুপ্তা এদিন অপরাজিত থাকেন ১২৬ বলে ১১ চারে ৯৪ রানে। নব্বইয়ে একাধিকবার আটকে পড়া বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার এখন তিনিই। এর আগে আইরিশদের ৮৯ বলে ৯৬ করে আউট হয়ে যান এই ব্যাটার। এবার থাইল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি অপরাজিত রইলেন শতরান থেকে ছয় রান দূরে। জ্যোতি আর সুপ্তা, দুজনে আর আউট হননি, জুটি থেমেছে ১৫২ রানে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এটা বাংলাদেশের রেকর্ড। গত ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফারজানা ও শারমিনের ১৪৩ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড।