বিশ্বজমিন
কেন পিছুটান দিলেন ট্রাম্প!
মানবজমিন ডেস্ক
(১ সপ্তাহ আগে) ১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৮:১৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

অতিরিক্ত শুল্কনীতি ঘোষণা করে তার মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৮ ঘন্টার মধ্যে চীনকে বাদ দিয়ে এই শুল্কনীতি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প। কিন্তু কেন এত তাড়াহুড়ো এবং সেখান থেকে তিনি দৃশ্যত পিছুটান দিলেন! এ নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ৯ই এপ্রিল থেকে এই শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে একশ বছরের মধ্যে এটা ছিল সর্বোচ্চ শুল্ক। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বন্ডের বাজারে অশনিসংকেত দেখা দেয়। নতুন শুল্কনীতির প্রভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজারের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১২ শতাংশ বাজার মূলধন হারায়। এরপরও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলতে থাকেন, তারা আত্মবিশ্বাসী। তাদের বিশ্বাস, ট্রাম্পের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন এবং কয়েক দশকের পুরোনো বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে বাতিল করে দেয়ার পরিকল্পনা বেশ ভালোভাবে কার্যকর হবে।
হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন শেয়ারবাজার (ওয়াল স্ট্রিট) বুঝতে পারে না, একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিক প্রতিদিন কী চান- আর সাধারণ নাগরিকরা এখনো ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তুমাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরে আসেন। তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত আরও উত্তপ্ত করে তুললেও অন্য দেশের ওপর নতুন শুল্ক স্থগিত করেন। এই আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারের সূচকে বড় ধরনের উত্থান ঘটে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেয়া শুল্কনীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে পোস্ট দেয়ার প্রায় ৯০ মিনিট পর ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয়, মানুষ এটিকে আর্থিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দিন হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তার শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত অনেককেই হতবাক করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ট্রাম্প ও তার বাণিজ্য উপদেষ্টারা বহু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং বিদেশি নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মন্দার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে কিছু করার জন্য তারা ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার বিকেলে ট্রাম্প বলেন, কয়েক দিন ধরেই তিনি নিজের মত বদলানোর কথা ভাবছিলেন। তিনি বলেন, সম্ভবত সকালেই বেশ সকালেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত এসংক্রান্ত পরিকল্পনা লিখে ফেলি। আমরা কোনো আইনজীবীর দ্বারস্থ হইনি। আমরা এটি আমাদের হৃদয় থেকে লিখেছি।
মঙ্গলবার রাতে ফক্স নিউজে শন হ্যানিটির রাত ৯টার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া একদল রিপাবলিকান সিনেটরের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। এ সময় কিছু সিনেটর ট্রাম্পের নতুন আরোপিত শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই সন্ধ্যায় ট্রাম্প বন্ড বাজারেও নজর রাখছিলেন, যেখানে মানুষজন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। শন হ্যানিটির সাক্ষাৎকারের শেষে সিনেটর জন নিলি কেনেডি শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে উপস্থাপকের কাছে ১৫ সেকেন্ড সময় চান। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে কেনেডি বলেন, সময় চাওয়ার কারণ ছিল, সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম তাকে বলেছিলেন, ট্রাম্প অনুষ্ঠানটি দেখবেন। হ্যানিটির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কেনেডি ও গ্রাহাম ছাড়াও সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুন, রিপাবলিকান সিনেটর টিম স্কট, সাউথ ক্যারোলাইনার কেটি বয়েড ব্রিট, আরকানসর টম কটন, টেক্সাসের টেড ক্রুজ এবং ওকলাহোমার মার্কওয়েন মুলিন উপস্থিত ছিলেন। কিছু সিনেটর ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা অন্য দেশের সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এসব সিনেটরের কয়েকজন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রাহাম বলেন, তিনি মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্পকে বলেন- কোনটা যথেষ্ট আর কোনটা যথেষ্ট নয়, তা ঠিক করার দায়িত্ব আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, আপনি বুঝতে পারছেন, মানুষজন সত্যিকারের অগ্রগতি চাইছে।