বাংলারজমিন
মহাধুমধামে এতিম ফারিয়ার বিয়ে
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
কিশোরগঞ্জে মহাধুমধামে হয়ে গেল এতিম মেয়ে মোসাম্মৎ ফারিয়ার বিয়ে। মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) কমপ্লেক্সে বিয়ের এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। এতে জেলা প্রশাসক, জজকোর্টের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ জেলার প্রায় সব দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিয়েতে আসা সবাই আমোদ-আহ্লাদে মাতোয়ারা ছিলেন। দেখে মনে হয়েছে, নিজেদের কোনো স্বজনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছেন তারা। সবমিলিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে ফারিয়ার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ফারিয়ার ১৮ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ায়, তার জন্য যোগ্য পাত্রের সন্ধানে ছিলে সমাজসেবা দপ্তর। একটা পর্যায়ে সেই পাত্রের সন্ধানও পেয়ে যান তারা। অবশেষে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। পাত্রের নাম মো. আরমানুর রহমান। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আরমানুর রহমান একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছেন। বাসা শহরের বত্রিশ এলাকার মুক্তিস্মরণী সড়কে। পাত্র ও পাত্রী দু’জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা দু’জন পরস্পরকে পছন্দ করেছেন এবং বিয়েতে মত দিয়েছেন। সামনের দিনগুলোর জন্যে সবার দোয়া চেয়েছেন এই নবদম্পতি।
সরকারি শিশু পরিবার বালিকার উপ-তত্ত্বাবধায়ক আয়েশা রশিদ বলেন, ফারিয়ার বাড়ি শহরতলীর চরশোলাকিয়ায়। খুবই গরিব ঘরের সন্তান। বাবা মারা যাওয়ার পর ২০১২ সালে তার মা শিশু পরিবারে নিয়ে আসে ফারিয়াকে। এরপর থেকে এখানকার বাসিন্দা সে। এখানে থেকে পড়াশোনাও করে। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পড়াশোনায় ভালো। মা নাসিমা খাতুন উপস্থিত ছিলেন বিয়েতে। নাসিমা খাতুন বলেন, এত ধুমধাম করে আমার মেয়ের বিয়ে হবে, কল্পনাও করিনি। সবার সহযোগিতায় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এ জন্য আমার কতৃজ্ঞতার শেষ নেই। ওর বাবা বেঁচে থাকলে আরো খুশি হতো। বর আরমানুর রহমানের এক স্বজন জানান, আরমানের ইচ্ছে ছিল একজন এতিম মেয়েকে বিয়ে করবে। সমাজসেবা দপ্তরের সহযোগিতায় তার এই ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় সে খুবই খুশি। কনেও তার পছন্দ হয়েছে।
দুপুরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় গিয়ে দেখা যায়, বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) কমপ্লেক্সটি। এখানকার অন্য এতিম বালিকারাও রঙ-বেরঙের পোশাক পরে আনন্দ করছে। সেজেগুজে আসছেন অতিথিরাও। অন্যদিকে কাজী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত রয়েছেন। বর-কনেকে একসঙ্গে বসানো হয়েছে। চলছে ছবি তোলা। ছিল মুখরোচক খাবারের আয়োজনও। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান দীর্ঘক্ষণ বিয়েতে উপস্থিত থেকে বর-কনেকে আশির্বাদ করেন। তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। কথা বলেন। অতিথিদের সঙ্গে সৌজন্যতা দেখান। এরপর বিয়ের খাবার খেয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নেন। শুধু তিনি নন, জেলা প্রশাসনের আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও গিয়েছিলেন বিয়েতে। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান খান ঘুরে ঘুরে সব আয়োজন ঠিক আছে কি-না, আতিথেয়তা ঠিকমতো হচ্ছে কি-না তা দেখভাল করেন। তিনি এ সময় বলেন, এখানে যারা থাকে সবাই আমার সন্তানের মতো। আমার মনে হচ্ছে, আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছি। এজন্য আনন্দ ও বেদনা দুই অনুভূতি আমার মধ্যে কাজ করছে। তিনি জানান, জেলার সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সহযোগিতায় এ বিয়েটি হচ্ছে। এই নবদম্পতির সংসারে যা যা প্রয়োজন, ফ্রিজ, টিভি, হাড়িপাতিল থেকে শুরু করে সবই তাদেরকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুতে কার্পন্য করা হয়নি। আশা করি ওরা আনন্দে তাদের নতুন জীবন শুরু করতে পারবে। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, ফারিয়ার বর বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের আগেই আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে এ বিয়েতে খুবই আগ্রহী ছিল। আমরা সবাই নিজেদের সাধ্যিমতো বিয়েতে সহায়তা করেছি। এ ধরনের ব্যতিক্রমী বিয়েতে অংশ নিতে পেরে আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত। বিয়েটা মূলত সমাজসেবা দপ্তরের পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে। এখানে আরো যেসব এতিম মেয়ে রয়েছে, সবার জন্য যথাসময়ে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত
এতিমদের সেবার খবর শুনলে আমার মনে অনেক আনন্দ লাগে আমিও এতিমদের পক্ষে সব সময় ইনশাল্লাহ থাকতে চাই