ঢাকা, ৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

ভারত

লোকসভায় বিরোধীদের আপত্তির মধ্যেই মধ্যরাতে পাস বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা

(৪ দিন আগে) ৩ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১:৪২ পূর্বাহ্ন

mzamin

ভারতের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও বুধবার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে লোকসভায় বুধবার মধ্যরাতে পাস হয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল। বৃহস্পতিবার এটি পেশ করা হবে রাজ্যসভায়।
বুধবার লোকসভায় বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক হয়েছে ১২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে। 

শেষ পর্যন্ত রাত ২ টায় ভোটাভুটিতে ২৮৮-২৩২ ভোটে বিলটি পাস হয়েছে। লোকসভায় বিজেপির ২৪০ জন সাংসদ ছাড়াও এনডিএ শরিক জোটের সবাই সরকারের সমর্থনে ভোট দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীরা এককাট্টা গয়ে বিলের বিরোধীতায় ভোট দিয়েছে। বুধবার বিলটি লোকসভায় পেশ করেন ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বিলটি নিয়ে বিতর্কে বিরোধীরা সরাসরি এটিকে অসাংবিধানিক ও মুসলিমদের ধর্মে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করেন। একটা সময় ওয়াকফ বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন এআইএমআইএম-র সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি দাবি করেন, এই বিল অসাংবিধানিক। সরকার যে আইন তৈরি করছে তাতে সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করা হয়েছে। 

এদিকে, সংসদে পাল্টা বক্তব্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, আমি স্পষ্ট করে দিচ্ছি, মুসলিমদের ধর্মকর্ম, তাদের যে দানের ট্রাস্ট, তাতে সরকার কোনও দখলদারি চায় না। ওয়াকফ আপনাদেরই থাকবে। 

বিলের সমালোচনা যারা করছেন, তাদের নিশানা করে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, যখন আমরা কোনও ইতিবাচক সংস্কার আনছি, তখন কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে?  আলোচনা এবং সকলের মতামত নেওয়ার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসিকে ধন্যবাদ জানান রিজিজু। তিনি বলেন,  ২৮৪টি প্রতিনিধিদল, ২৫টি রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ওয়াকফ বোর্ড এই বিষয়ে জেপিসির কাছে নিজেদের মতামত জানিয়েছে।

ওয়াকফ সংশোধনী বিলে নারীর ক্ষমতায়নে লক্ষ্য রাখা হয়েছে বলে দাবি করে রিজিজু ওয়াকফ বোর্ডে মহিলা সদস্যের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করার কথা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে কোনও ব্যক্তি তার স্ত্রী ও সন্তানদের বঞ্চিত করে ওয়াকফ সম্পত্তি তৈরি করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

বর্তমান ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার  অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। ফলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও কর্মকর্তার হাতে। 

সরকারের যুক্তি, বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনও ভাবেই পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে না। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না সরকারের। নতুন বিলে তার বন্দোবস্ত রয়েছে।
বিরোধী সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেন, মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই সংশোধিত ওয়াকফ বিল এনেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। 
এর পাশাপাশি আপত্তি উঠেছে নতুন বিলে ওয়াকফ বোর্ডে দুই অমুসলিম সদস্যের অন্তর্ভুক্তির বন্দোবস্ত নিয়েও। এ ছাড়া রয়েছে, একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাস হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। তার পর থেকেই বিজেপির তরফে বার বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে  বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার নিয়ে। বিজেপির দাবি, ওয়াকফ সম্পত্তির সমস্ত সুবিধা ভোগ করছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মুসলিমরা। নতুন আইন কার্যকর হলে সাধারণ মুসলিমরা উপকৃত হবেন।

পাঠকের মতামত

হিন্দু গেরুয়া মুসলিমের জন্যে এত দরদ ।আগে শুনিনি।

Habib
৩ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২:২৬ অপরাহ্ন

ভারত থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

ভারত সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status