ঢাকা, ১ জুন ২০২৫, রবিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

আরাধ্য এখনো জানে না বাবা-মা মারা গেছেন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৩ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুটির পরিচয় পাওয়া গেছে। সে দুর্ঘটনায় নিহত দিলীপ বিশ্বাস ও সাধনা বিশ্বাসের মেয়ে। বুধবার (২রা এপ্রিল) দুপুরে অল্প সময়ের জন্য চোখ খুলে শিশুটি। এসময় একজন চিকিৎসক তার কানে কানে জিজ্ঞেস করেন নাম কি? কেনমতে ব্যথায় কাতর শিশুটি বলেন, তার নাম আরাধ্য। বাবার নাম দিলীপ বিশ্বাস ও মায়ের নাম সাধনা বিশ্বাস। এরপর আর কিছু বলেনি সে। নাম তিনটি বলেই ঘুমিয়ে পড়ে শিশুটি। 

জানা যায়, শিশুটির গায়ে একটি রঙিন জামা পরা। জামায় দুটি ফুল। ফুলগুলে রক্তে লাল হয়ে গেছে। শিশু আরাধ্যরও চোখে জমাট বাধা রক্তের দাগ। মুখে, হাতেও রক্তের দাগ। গুরুতর আহত এই শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চমেক হাসপাতালের পরিচালক। এর আগে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয় লোহাগাড়া থেকে। তারা ভোরে দুর্ঘটনার শিকার হন। ওই দুর্ঘটনায় মোট ১০ জন মারা গেছেন। দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের এসআই মো. আব্দুল মতিন জানান, লোহাগাড়ায় নিহত ১০ জনের মধ্যে চারজন হলেন একই পরিবারের সদস্য। এরা সবাই ঝিনাইদহ এলাকার বাসিন্দা। তারা হলেন, দিলীপ বিশ্বাস (৪৩), সাধনা বিশ্বাস (৩৭), আশীষ মণ্ডল (৫০) ও দুর্জয় মণ্ডল (১৮)। এদের মধ্যে দিলীপ বিশ্বাস ও সাধনা বিশ্বাস স্বামী-স্ত্রী। এই দম্পতির সাত বছরের মেয়ে শিশু বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা ওই শিশুই হচ্ছে আরাধ্য। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। 

চমেক হাসপাতালে শিশু আরাধ্যর পাশের বিছানায় আনুমানিক ২২ বছর বয়সী এক তরুণীও সংকটাপন্ন অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছে। তার হাতে মেহেদী লাগানো। তিনিও হাসপাতালে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছেন। কোনো সাড়াশব্দ নেই। কিছুক্ষণ পরপর তাদেরকে তদারকি করছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সেরা। 

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক নুরুল আলম আশেক বলেন, সকাল সাড়ে দশটায় প্রথমে আহত চারজনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজন মারা যায়। নিহতদের মধ্যে ১০-১২ বছরের এক শিশু ও  ৪০ বছর বয়সী এক পুরুষ রয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আহত আরও একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাকে পরে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এর আগে ঈদের দিন সোমবার সকালে লোহাগাড়ায় একই জায়গায় দুই বাসের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোরে কক্সবাজারগামী রিল্যাক্স পরিবহনের বাসটি লোহাগাড়ার চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায় মহাসড়কের একটি বাঁকে এসে বাসের সামনের অংশ ঘুরে যায়। এতে বাসটি সড়কের ওপর আড়াআড়ি হয়ে গেলে কক্সবাজারের দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে বিপরীতমুখী আরেকটি মাইক্রোবাস পেছন থেকে দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে আরও একজন মারা যান। ৫ জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। আরও ৩ জন চিকিৎসাধীন। শিশু আরাধ্য ও ২২ বছর বয়সী তরুণী এবং নিহত এক শিশু ও ৪০ বছরের বয়স্ক পুরুষের কোন স্বজন এখনও আসেনি। এর আগে ঈদের দিন সোমবার সকালে লোহাগাড়ায় একই জায়গায় দুই বাসের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কক্সবাজার প্রতিদিন লবণবাহী অসংখ্য ট্রাক ও পিকআপ আসে। এসব গাড়ি দ্রুত বেগে চলার কারণে সড়কে লবণ পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যায়। ফলে অন্য যানবাহনগুলো ব্রেক কষতেই দূর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও বাঁকপ্রবণ। পর্যটন মৌসুম বা ছুটির দিনে দূরদূরান্ত থেকে চালকরা যাত্রী নিয়ে আসেন। তাদের সড়ক সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেও ঝুঁকিমুক্ত নন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু আরধ্যসহ  তিনজনের কেউই।  এদের মধ্যে আরাধ্যসহ আহত এক  তরুণীকে হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরো সার্জারি বিভাগে ও যুবককে ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তবে দুপুরের পর যুবকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি দুজনকে আইসিইউতে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। আহতদের মধ্যে তরুণীর এখনও জ্ঞান ফেরেনি।

পাঠকের মতামত

আমি মাঝে মধ্যে গাড়ি চালাই । আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের জন্য ঘটে । আমরা যারা ফেয়ার ড্রাইভ করি তাদেরকে অন্য চালকরা গালাগালি করে। বলে কেমন ড্রাইভার গাড়ি চালাতে জানে না। অথচ তারা নিজেরাই যে গাড়ি চালাতে জানে না একথাটি তাদেরকে কে বোঝাবে? এ ক্ষেত্রে আমাদের ট্রাফিকের একটা বড় দায়িত্ব রয়েছে। অনেকেই মনে করেন রাস্তার ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ঠিক নয় । রাস্তার ত্রুটি থাকতেই পারে। সেটা দেখেই তো গাড়ি চালাতে হবে। রাস্তার বাঁকে অবশ্যই গতি কমাতে হবে। কিন্তু চালকরা গতি কমাতে রাজী না।

Khalil
৩ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

এই রাস্তার ছবি দেখে বুঝা যায় কতো মূর্খ রাস্তার দায়িত্ব প্রাপ্তরা.

M hossain
৩ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২:১০ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status