শেষের পাতা
বিস্ফোরক নথি প্রকাশ করলো ট্রাম্প প্রশাসন
জন কেনেডি হত্যাকাণ্ডে কি সিআইএ’র ভূমিকা ছিল?
মানবজমিন ডিজিটাল
২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের গোপনীয় ফাইল প্রকাশের পর আবারো প্রশ্নের মুখে সিআইএ’র ভূমিকা। কয়েক দশক ধরে চলে আসা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পরে অনেকে বলতে শুরু করেছেন তবে কি ইন্টেল এজেন্সি এই হাই-প্রোফাইল হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও ফাইলগুলোতে সরাসরি সিআইএ’র ওপর দায় চাপানো হয়নি। তবে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, সংস্থাটি সতর্কবার্তাকে অবহেলা করেছিল। ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে টেক্সাসের ডালাসে হত্যা করা হয়। সাবেক প্রেসিডেন্টকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে হত্যা করার জন্য লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামে একজন মেরিন বিশেষজ্ঞকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অসওয়াল্ড দুইদিন পরে জেলে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় একজন নাইটক্লাবের মালিকের হাতে নিহত হন। একটি তদন্ত কমিশন পরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে অসওয়াল্ড একাই প্রেসিডেন্টকে হত্যার জন্য দায়ী। তবে সদ্য প্রকাশিত ফাইলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে দ্বিতীয় কোনো বন্দুকধারি কেনেডিকে হত্যাকারী বুলেটটি ছুড়ে থাকতে পারে। ফাইলগুলো, ব্যালিস্টিক রিপোর্ট এবং সাক্ষীদের বয়ান উদ্ধৃত করে, তদন্ত কমিশনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। নথিগুলো প্রকাশ করে যে সাবেক প্রেসিডেন্টকে হত্যাকারী বুলেটটি কেনেডির গাড়ির সামনে থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
এদিকে ঘটনার দিন ওসওয়াল্ড টেক্সাস স্কুল বুক ডিপোজিটরি ভবনের ষষ্ঠ তলায় উপস্থিত ছিলেন। কেনেডিকে হত্যার কয়েক সপ্তাহ আগে মেক্সিকো সিটিতে সোভিয়েত এবং কিউবান দূতাবাসে অসওয়াল্ডের পরিদর্শন সম্পর্কে সিআইএ অফিসার যেভাবে সতর্ক করেছিলেন তা ডিক্ল্যাসিফাইড ফাইলগুলো থেকে উদ্ঘাটিত হয়েছে। মজার বিষয় হলো, সিআইএ মেক্সিকো সিটিতে ১৯৬২ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে তাদের দূতাবাসে সোভিয়েত এবং কিউবানদের যোগাযোগ নিরীক্ষণের জন্য টেলিফোন ট্যাপ করেছিল। কেনেডির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সিআইএ-এ জ্ঞাত ছিল কিনা তা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ডিক্ল্যাসিফাইড ফাইলগুলো থেকে জানা গেছে, সিআইএ প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করছিল না। প্রেসিডেন্ট কেনেডির কাছে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আর্থার শ্লেসিঞ্জার জুনিয়র কর্তৃক পাঠানো একটি মেমোতে দাবি করা হয়েছে যে সংস্থাটি স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছে। মার্কিন মিত্রদের কাজকর্মেও নাক গলানোর চেষ্টা করছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো, ফাইলে সিআইএ এজেন্ট গ্যারি আন্ডারহিলের উল্লেখ।
তথ্য বলছে, গ্যারি অভিযোগ তুলেছিলেন যে, জে এফ কেনেডির মৃত্যুর নেপথ্যে এজেন্সি রয়েছে। অর্থাৎ সিআইএ। প্রকাশিত ফাইলে ইঙ্গিত, এই অভিযোগ করার পরই গ্যারিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সাবেক প্রেসিডেন্টের হত্যার কয়েক ঘণ্টা পরে গ্যারি আন্ডারহিল ওয়াশিংটন থেকে পালিয়ে নিউ জার্সিতে তার বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। গ্যারি তার বন্ধুর কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে কেনেডিকে সিআইএ’র মধ্যে একটি ছোট দলের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল। এদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক ভালো ছিল না। গ্যারি এও প্রকাশ করেছিলেন যে, অসওয়াল্ডকে জোর করে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অবশ্য বলা হয়েছে গ্যারি নিজের বন্দুকের গুলি থেকে আত্মহত্যা করেছে। ওয়্যারট্যাপের ট্রান্সক্রিপ্টগুলোকে উদ্ধৃত করে ফাইলগুলোতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, মাফিয়ারা, দুর্বৃত্ত সিআইএ এজেন্টদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রেসিডেন্টকে হত্যার কাজটি সম্পাদন করতে পারে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে