শেষের পাতা
রেমিট্যান্সের পর বাংলাদেশিদের কার্ডের লেনদেনেও শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২২ মার্চ ২০২৫, শনিবারজানুয়ারি মাসে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে লেনদেন করেছেন ৪৪৫ কোটি টাকা। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মোট লেনদেনের ১৫.৪৪ শতাংশই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। টাকার অঙ্কে ৬৮ কোটি টাকা। লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। ওদিকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করেছেন ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৪.৩৮ শতাংশ। তবে এক সময় শীর্ষে থাকা ভারত জানুয়ারি মাসে ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে ৬ নম্বর স্থানে চলে এসেছে। জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশিরা লেনদেন করেছেন ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের করা এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন্ন ছিল। ওই মাসে দেশে সব ধরনের কার্ড লেনদেন ব্যাপকভাবে কমে। ওই মাসে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আগস্ট মাসে বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৩৭৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমার মূল কারণ সরকার পতনের পর দেশজুড়ে অস্থিরতা, কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং আর্থিক খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া।
একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধান বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছিল। চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকরা খরচের রাশ টেনে ধরার পাশাপাশি দেশজুড়ে অস্থিরতার কারণে ব্যাংকও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ফলে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে পতন হয়েছে। তিনি বলেন, ডিসেম্বরে এসে দেশের ভেতরে ও বাইরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেশ পরিমাণে বেড়েছে, যা ইতিবাচক দিক। কারণ এ মাসে ব্যাংকগুলো নানা অফার দেয় এবং বিদেশে বাংলাদেশিরা বেশি যান। তবুও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত বছরের ডিসেম্বরে কার্ডে বিদেশে লেনদেন কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা কম পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এর অন্যতম কারণ হলো- ভারত থেকে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো জটিলতা রয়েছে। এই জটিলতা না থাকলে লেনদেনের পরিমাণ আরও বেশি হতো।
দেশভিত্তিক লেনদেন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের নভেম্বরের দেশভিত্তিক লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মোট লেনদেনের ১৫.৪৪ শতাংশই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। টাকার অঙ্কে ৬৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া থাইল্যান্ডে ৬৪ কোটি, সিঙ্গাপুরে ৩৮ কোটি, মালয়েশিয়ায় ৩৫ কোটি, যুক্তরাজ্যে ৩৩ কোটি, ভারতে ৩২ কোটি, সৌদি আরবে ৩০ কোটি, নেদারল্যান্ডসে ১৭ কোটি, কানাডা ১৭ কোটি অস্ট্রেলিয়ায় ১৫ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২১ কোটি ও আয়ারল্যান্ডে ১৩ কোটি টাকা। বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে। টাকার অঙ্কে ১৫৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া খুচরা দোকানে ৮২ কোটি, ফার্মেসিতে ৪৮ কোটি, পরিবহন খাতে ৪৫ কোটি, পোশাক কেনায় ৩৮ কোটি, ব্যবসা সেবায় ৩৭ কোটি, প্রফেশনাল সেবায় ২৬ কোটি, সরকারি সেবায় ২২ কোটি, নগদ উত্তোলনে ২২ কোটি ও ইউটিলিটি সেবায় ১৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সর্বাধিক লেনদেন করেছেন ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে। টাকার অঙ্কে ১৩২ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩৪.২৬ শতাংশ।
এ ছাড়া খুচরা দোকানে ৭৪ কোটি টাকা, ফার্মেসিতে ৫১ কোটি টাকা, পরিবহন ব্যবহারে ৩৬ কোটি টাকা, ব্যবসা সেবায় ৩৫ কোটি টাকা, পোশাক খাতে ৩১ কোটি টাকা, প্রফেশনাল সার্ভিস ব্যবহারে ২৬ কোটি টাকা, নগদ উত্তোলন করেছেন ২২ কোটি টাকা, সরকারি সেবায় ব্যবহার করেছেন ২১ কোটি টাকা এবং ইউটিলিটি সেবায় ব্যবহার করেছেন ১৩ কোটি টাকা।
দেশের বাইরে বাংলাদেশি নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ভিসা কার্ড। এই কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করেছেন ৩৩৫ কোটি টাকা। যা মোট লেনদেনের ৭৫.৩৬ শতাংশ। এছাড়া মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করেছেন ৬৫ কোটি টাকা এবং সিটি এমেক্স কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করেছেন ৪৪ কোটি টাকা।
রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আসা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আলোচ্য সময়ে একটানা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় আসার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল আরব আমিরাত। দেশটি থেকে প্রবাসীরা ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন। এরপরের তালিকায় থাকা সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ কোটি ৩৮ লাখ, কুয়েত থেকে ১৪ কোটি ১১ লাখ, ওমান থেকে ১২ কোটি ৩৭ লাখ, ইতালি থেকে ১১ কোটি ১১ লাখ, কাতার থেকে ১০ কোটি এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।