ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

ফুটবলের নতুন ইতিহাস রচনায় ইপিএল তারকা হামজা চৌধুরী সিলেটে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

(১ মাস আগে) ১৭ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ৩:৪৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

mzamin

হামজা চৌধুরী। হবিগঞ্জের সন্তান। বৃহত্তর সিলেটেরও। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ লেস্টার সিটির হয়ে খেলার সময় নজর কাড়েন সবার। বৃটেনের বাঙালীর কমিউনিটিতে তাকে ঘিরে প্রথমেই শুরু হয় উচ্ছ্বাস। আর এই উচ্ছ্বাসের ঢেউ সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে এসে লাগে বঙ্গেয় সাগর তীরের দেশ বাংলাদেশে। আর লাগবেই বা না কেনো। কারণ ইপিএল কাঁপানো তরুণ এই তুর্কির বাড়ি বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জে। তখন থেকেই রাতজেগে খেলা দেখা বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের চোখ হামজার দিকেই। ইপিএলের হামজার খেলা দেখতে টিভি পর্দায় মুখিয়ে থাকেন সিলেটের শুভাকাঙ্খীরা। লেস্টার সিটি ছেড়ে হামজা এখন শেফিল্ডে। খেলছেন নিয়মিত। ক্লাবের অন্যতম তারকা তিনি। সবার নজর তার দিকে। বাংলাদেশের ফুটবল তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতেই পারে। দেখাটা অস্বাভাবিক নয়। বাফুফে থেকে আন্দাজে ঢিল ছোড়া হয়েছিলো হামজার দিকে। টেস্ট করে দেখা আর কী। 

সিলেটে হামজাকে রিসিভ করতে আসা বাফুফের এক কর্মকর্তা জানালেন, এতোটা আশাবাদী ছিলাম না। হামজা আসবে। দেশের কথা শুনলেই অনেকেই চোখ ফিরিয়ে নেন। কিন্তু হামজা ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের হয়ে খেলার প্রস্তাবে সাড়া দিলেন একটু ভেবে চিন্তে। সেখানে দেশকেই দিলেন প্রাধান্য। নাগরিকত্ব জটিলতা কাটিয়ে হামজা হয়ে উঠেন বাংলাদেশের একজন। এখন তিনি বাংলাদেশ ফুটবলের মহাতারকা। ছোটবেলায় পিতা মোর্শেদ দেওয়ান চৌধুরীর সঙ্গে দেশে এসেছিলেন। এবার এলেন বহুদিন পর। তারকা হয়ে। বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করতে তার এই আসা। তার উদ্দেশ্য আগামী ২৫ শে মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লাল সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানো। 

দিন-ক্ষণ ঠিক হওয়ার পর হামজা চৌধুরীর জন্য সিলেটে কেবল অপেক্ষা। দেখতে দেখতে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৭ই মার্চ ২০২৫। দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা কোনো বাংলাদেশি বিশেষ করে সিলেটি নিজের দেশের হয়ে খেলতে প্রথম পা রাখেন দেশের মাটিতে। বেলা তখন ১১টা। সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর। ওসমানী এয়ারপোর্টের আকাশ তখন রৌদ্রজ্জল। এয়ারপোর্টে সামনে উৎসবের আমেজ। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে অনেকেই উপস্থিত। জার্সি গায়ে ব্যান্ড পার্টির তালে তালে নাচছেন তরুণরা। দিনটি তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। রং ছিটানোর দিন। কেউ কেউ রং হাতে নিয়ে উপস্থিত। ছিটাচ্ছেন তরুণদের মধ্যে। অন্য এক আবেগ। সবার চোখ আকাশের দিকে। কিছু একটা খুঁজছেন সবাই। এমন সময় আকাশের গায়ে ভেসে উঠলো ছোট্ট একটি বিমান। কাগুজের তৈরি বিমানের ফ্লাইট যেনো আকাশে উড়ছে। দেখতে দেখতে সেটি কাছে আসছে। বড় হচ্ছে। বাংলাদেশ বিমানের লেটেস্টে ভার্সন ৭৮৭ এর একটি বিমান। লন্ডন থেকে সোজা উড়ে আসছে সিলেটে। ১১ ঘণ্টার জার্নিতে ‘ক্লান্ত’ বিমান যখন ছুলো ওসমানীর মাটি তখন অন্য ধরনের এক অনুভুতি ছুঁয়ে যায় এয়ারপোর্টে। 

বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ‘হামজা হামজা’ বলে চিৎকার শুরু করেন তরুণরা। সাংবাদিকরা প্রস্তুত হচ্ছেন। এয়ারপোর্টে ভিড় বেশি। অনেকেই এসেছে একনজর হামজাকে দেখতে। বাফুফে কর্মকর্তা গেলেন ভেতরে। খবর এলো হামজাই এসেছেন। সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হামজাকে নিয়ে আসা হলো ভিআইপি লাউঞ্জে।

খানিক সময় নিয়ে বাফুফে কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ভিআইপি’র ফটক দিয়ে বাইরে বের হলেন হামজা। হাসিমাখা মুখ। সহজ-সরল ভঙ্গি। হাত তুলে অভিবাদন জানালেন। একটু লাজুকতা দেখালেন। তাকে দেখে উপস্থিত থাকা ভক্তরা ‘হামজা’ ‘হামজা’ বলে স্লোগান ধরলেন। ভিড়, ঠেলাঠেলি সবই হচ্ছে। হামজা এসে দাঁড়ালেন মিডিয়ার সামনে। ক্রাউড বেশি থাকায় কথা শুনছিলেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বারবারই বলছিলেন- কিছু বুঝছি না। প্রশ্ন শোনার জন্য মাথা এগিয়ে আনেন। প্রশ্ন শুনে বলে উঠেন- ‘ইনশাল্লাহ আমরা উইন খরমু। কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে। তার সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারবো।’ 

এর আগে যখন তিনি এয়ারপোর্টের বাইরের দৃশ্য দেখেন তখন বলে উঠেন- আ্যামাজিং, আ্যামাজিং। মাত্র কয়েকটি শব্দে বুঝা গেলো হামজা খুশী। এখন কাজ। কথা শেষ করে ফের ভিআইপিতে ঢুকে গেলেন। ততোক্ষণে বাইরে স্লোগানে আরো ভারী হচ্ছিলো। হামজা, হামজা বলে চিকৎকার করা হচ্ছিলো।

এক ফাঁকে বেরিয়ে আসেন হামজার পিতা হবিগঞ্জের বাহুবলের শ্মসানঘাটের সন্তান মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। সাংবাদিকের কাছে অনুভুতি জানাতে গিয়ে বলেন; হামজা দেশকে ভালোবাসে। সে ফুটবলের উন্নতি চায়। এর এই ভালোবাসা থেকে তার দেশে আসা। এজন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়াও চান। হামজার সঙ্গে এবার দেশে এসেছেন তার পরিবারের প্রায় সবাই। স্ত্রী ও সন্তানও। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে অভিষিক্ত হচ্ছেন হামজা চৌধুরী। এটি দেখতেই লন্ডন থেকে একসঙ্গে পরিবারের সবার দেশে আসা। ছাদখোলা জিপে করে এয়ারপোর্টের ভিআইপি’র সামন থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন হামজা চৌধুরী। তখনও উৎসব চলছিলো বাইরে। হামজা সবার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে হাসি দিয়ে রওয়ানা দিলেন হবিগঞ্জের পথে।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status