অনলাইন
জাতিসংঘের রিপোর্ট: হিজাব না পরা নারীদের খুঁজতে ড্রোন এবং অ্যাপ ব্যবহার করছে ইরান
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ মাস আগে) ১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১২:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

নারীদের ওপর বাধ্যতামূলক হিজাব আইন প্রয়োগ করতে এরিয়াল ড্রোন, মুখের শনাক্তকরণ সিস্টেম এবং একটি নাগরিক-রিপোর্টিং অ্যাপ ব্যবহার করছে ইরান। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বাধ্যতামূলক পোশাক কোড লঙ্ঘনকারী নারীদের নিরীক্ষণ এবং শাস্তির জন্য প্রযুক্তির উপর ইরানের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতাকে তুলে ধরা হয়েছে। এই ক্র্যাকডাউনের কেন্দ্রবিন্দু হলো ‘নাজের’। ইরান সরকারের সহায়তায় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করা হয়েছে। কোনও নারী হিজাব না-পরে ঘুরছেন কি না, তা ওই অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশকে জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। কবে, কোন সময়, কোথায় ওই নারীকে হিজাব ছাড়া দেখা গিয়েছে, তা-ও পুলিশকে জানানো যাবে ওই অ্যাপের মাধ্যমে। কোনও গাড়িতে হিজাবহীন অবস্থায় দেখা গেলে, সেই গাড়ির নম্বরও পুলিশকে জানানো যাবে। অ্যাপটি মারফত গাড়ির নিবন্ধিত মালিককে একটি টেক্সট বার্তা (রিয়েল-টাইমে) বার্তা পাঠানো হবে।
তাদের সতর্ক করে বলা হবে যে, তারা বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এই সতর্কতাগুলো উপেক্ষা করার জন্য তাদের যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা হবে। ইরানের পুলিশের মাধ্যমে অ্যাক্সেসযোগ্য অ্যাপটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাম্বুলেন্স, ট্যাক্সি এবং গণপরিবহনে নারীদের ওপর নজরদারি চালাতে তৈরি করা হয়। তেহরানের আমিরকবির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের গেটে মুখ শনাক্তকরণ সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। কর্তৃপক্ষ রাজধানী তেহরান এবং দক্ষিণ ইরানে ‘এরিয়াল ড্রোন’ মোতায়েন করেছে পাবলিক স্পেসে নজরদারি করতে এবং পোশাক কোড লঙ্ঘনকারী নারীদের নিরীক্ষণ করতে। ইরানে নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে কড়া ফতোয়া রয়েছে। সে দেশে নারীদের আবশ্যিকভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাব পরে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনি এই ফতোয়া জারি রেখেছেন। তা ভাঙলে কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে সে দেশে।
২০২২ সালে ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকেও হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতিপুলিশ। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল তার। মাহসার মৃত্যুর পর গোটা ইরানে তখন প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। বাধ্যতামূলক হিজাব আইন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সেই বিক্ষোভে শত শত লোক নিহত হয়েছিল। যদিও একটি অভ্যন্তরীণ বিতর্কের পরে ২০২৪ এর ডিসেম্বর মাসে হিজাব সংক্রান্ত ইরানের খসড়া আইন স্থগিত করা হয়। তবুও এটিকে দেশের নারী এবং মেয়েদের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদি আইনটি কার্যকর করা হয়, তবে পোশাক কোড লঙ্ঘনকারী নারীদের আইন মোতাবেক ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং হিজাব পরতে অ-সম্মতির জন্য ১২ হাজার ডলারের সমপরিমাণ জরিমানা আরোপ করা হতে পারে। ইরানের ইসলামিক দণ্ডবিধির ২৮৬ অনুচ্ছেদের অধীনে উল্লিখিত আছে, ‘পৃথিবীতে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হলে নারীদের মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হবে’।
সূত্র : সিএনএন