খেলা
সুইং বাড়াতে কাজ করছেন তানজিম
সৌরভ কুমার দাস
১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার
তানজীম হাসান সাকিব। জাতীয় দলের পেস আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এই পেসার ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে এবার খেলছেন লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের হয়ে। ওয়ানডেতে ১০ ম্যাচে ১৩ আর টেস্টে ১৮ ম্যাচে ২৪ উইকেট নেয়া তানজীম নিজের অ্যাগ্রেসিভনেস, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে। সেখান থেকে চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রিমিয়ার লীগে শুরুটা ভালো হয়েছে, এই আসরে পরিকল্পনা কি?
তানজিম: প্রিমিয়ার লীগে আমাদের বোলিং কোচ প্ল্যান দিয়েছেন, সেটা এক্সিকিউট করার চেষ্টা করছি। লাইন লেন্থ মেইনটেইন করা, টপ অফে বল করা, যদি বাউন্সার মারি তাহলে প্রোপার বাউন্সার আর স্লোয়ার মারলে প্রোপার স্লোয়ার। এক্সিকিউশনের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। কারণ, এটা ঠিক থাকলে এমনিতেই ডট আসবে, পেশার ক্রিয়েট হবে (ব্যাটারের ওপর), উইকেট পড়বে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষে বিশ্রাম পেলেন, বিসিবি থেকে দেয়া ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট কীভাবে চলছে?
তানজিম: ওয়ার্ক লোডের খুব ভালো ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে আসলে। আমি নিজেকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছি, নিজেকে আরও ফিট করার সময় পাচ্ছি। আসলে এই ম্যানেজমেন্টটা খুব ভালো হচ্ছে আর এটা দীর্ঘ পরিকল্পনায় খুব সাহায্য করবে। প্রিমিয়ার লীগে আমাকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওয়ার্কলোডের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে আমি দুই ম্যাচ খেলবো এক ম্যাচ রেস্ট নিবো। এই দুই ম্যাচে ওয়ার্কলোড কম থাকলে হয়তো তৃতীয় ম্যাচ খেলতে পারবো। আর ওয়ার্কলোড যদি ফুল হয়ে যায় তাহলে তৃতীয় ম্যাচে অবশ্যই রেস্ট নিতে হবে।
জাতীয় দলে পেসারদের প্রতিযোগিতা, এটা চাপ নাকি অনুপ্রেরণা?
তানজিম:এটা আমি হেলদি কম্পিটিশন বলবো আর এই ধরনের কম্পিটিশন যত থাকবে যে কোনো ডিপার্টমেন্টই তত বেশি স্ট্রং থাকবে। এই জিনিসটা বড় বড় দলগুলোতে থাকে, এখন সবাই জানে তার ব্যাকআপে আরও দুই-তিনজন খেলোয়াড় আছে। সে পারফর্ম না করলে তার জায়গায় অন্য একজন চলে আসবে। এটা একদিকে চাপের অন্যদিকে উপভোগ করার বিষয়। আমি মনে করি এই কম্পিটিশনটা সবাইকে আরও উন্নতি করতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ আমি জানি আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে না হলে আমি জায়গা হারিয়ে ফেলবো। ফলে এটা সেলফ মোটিভেশন হিসেবেও কাজ করে।
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তাসকিন ‘এ’ প্লাস ক্যাটাগরিতে...
তানজিম: তাসকিন ভাই এটা অবশ্যই ডিজার্ভ করে। কারণ, উনি যেভাবে পারফর্ম করে আসছে তাতে বিসিবি ওনাকে সম্মানই দিয়েছে উনি যেটা ডিজার্ভ করে। এই জিনিসটা খুবই ভালো হয়েছে, এটা আমাদের জন্য একটা মোটিভেশন কাজ করবে আলাদা। বিসিবি টেক কেয়ার করছে, এতে নিজেদের মধ্যে আরও উন্নতি করার তাড়না কাজ করবে।
একজন পেসারের অ্যাগ্রেসিভনেস থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
তানজিম: এটা আসলে একেকজনের জন্য একেকরকম। যেমন হাসান ভাই, উনি ঠান্ডা মাথায় বোলিং করেন আবার তাসকিন ভাই, ফিজ ভাই ঠান্ডা থাকে বোলিংয়ের সময়। আমার ক্ষেত্রে ওই স্পার্ক না আসলে বোলিং করতে পারি না, ইনজয় করতে পারি না। যখন আমি চিন্তা করি যে ব্যাটারদের আমাকে সহজে খেলতে দিবো না বা সে আমাকে কেন সহজে খেলছে, আমার ভিতর এই জেদটা কাজ করে। এটা আসলে ন্যাচারালি চলে আসে, এতে আমার কন্ট্রোল নেই। এটা হেল্প করে, বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো ব্যাটারকে তাতিয়ে দিলে সে অ্যাটাকিং মুডে চলে যায় তখন উইকেট আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ব্যাটারকে তাতিয়ে দেয়ার পর উইকেট পাওয়ার স্যাটিসফেকশন কেমন হয়?
তানজিম: আমি চাই ব্যাটার আমাকে রিপ্লাই করুক কিন্তু বেশিরভাগ সময় করে না। কারণ সেও জানে রিপ্লাই করলে ফোকাস নষ্ট হয়ে যাবে। যদি রিপ্লাই করে সেক্ষেত্রে আমি খুব ইনজয় করি সেটা। এক্ষেত্রে ডেল স্টেইনকে ফলো করি আর বিরাট কোহলির বিপক্ষে এ কারণে বোলিং করলে ইনজয় করি বেশি।
বোলিংয়ে নতুন অস্ত্র বা নতুন কিছু চেষ্টা করছেন?
তানজিম: আমি চেষ্টা করছি সুইংটা কিভাবে আরেকটু বাড়ানো যায়, নতুন বলে সুইং দিয়ে ১-২টা উইকেট যদি এনে দিতে পারি সেটা দলকে উপকৃত করবে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে কেমন উপকৃত হয় ক্রিকেটাররা?
তানজিম: এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা (সিপিএল আর গ্লোবাল সুপার লীগে খেলা), নতুন পরিবেশ! আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সব দেশের খেলোয়াড়রা থাকে ওখানে, তখন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায়, অনেক কিছু শেখার থাকে। যখন আপনি অন্য দলে তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করবেন তখন শেখার অনেক অপশন থাকে। আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বড় সুযোগ শেখার জন্য, উন্নতি করার জন্য। কারণ, আপনি ভালো না খেললে আপনাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিবে না, ফলে নিজেকে ওভাবে আপ টু দ্য মার্ক করতে হবে।
ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলছেন, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ভাবনা
তানজিম: টেস্ট ক্রিকেটে খেলা অনেক সম্মানের অবশ্যই। যদি টেস্টে খেলার জন্য আমাকে নির্বাচকরা ডাকেন, আমি অবশ্যই খেলার জন্য প্রস্তুত আছি। যদি আমি সুযোগ পাই অবশ্যই সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
আপনার কাছে পেসারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী?
তানজিম: ফিটনেস। পেস বোলিং সহজ কাজ নয় মোটেও, অনেক বেশি মেন্টালি, ফিজিক্যালি স্ট্রং হতে হয়। এটাই আমি শিখছি জাতীয় দলের আসার পর। আর স্কিল উন্নতি করা যায়, যখন ৩-৪টা ম্যাচ খেলবো আমি জানি কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে কিন্তু ফিটনেস সাপোর্ট না করলে উন্নতি করতে পারবো না।