ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

গণপরিবহন সংকটে দিনভর দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার
৭ আগস্ট ২০২২, রবিবার
mzamin

শুক্রবার রাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে সরকার। নতুন দাম ঘোষণা আসতেই রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রীবাহী বাস  চলাচল। গতকাল সকাল থেকে দেখা দেয় গণপরিবহন সংকট। বেলা বাড়লেও বাড়েনি বাসের সংখ্যা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান অনেকেই। কেউবা কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়ায় বিকল্প উপায়ে পৌঁছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। কয়েকটি সড়কে দীর্ঘক্ষণ পর পর দু’একটি বাস আসলেও সেখানে গাদাগাদি করে যাতায়াত করেছেন যাত্রীরা। এদিকে সড়কে কোনো বাস দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। কার আগে কে উঠবেন তা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ।

বিজ্ঞাপন
যাত্রীদের কেউ কেউ ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠলেও নারী ও বয়স্ক যাত্রীরা পড়েন মহাবিপাকে। এদিকে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অজুহাতে আদায় করা হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়া। বিভিন্ন বাহনে বাড়তি ভাড়া রাখার কারণে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন যাত্রীরা। বিকালে বাসায় ফেরা মানুষকেও পড়তে হয়েছে পরিবহন ভোগান্তিতে।  শনিবার রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, লিংক রোড, মগবাজার ও বাংলামোটর, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গণপরিবহন তেমন একটা দেখা যায়নি। সরজমিন দেখা যায়, সড়কের প্রতিটি মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ। মাঝে মধ্যে দু’একটি বাস এলেও সেগুলো ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। 

বিভিন্ন স্থানে দু’একজন নেমে গেলেও হুড়োহুড়ি করে উঠছেন ৩/৪ জন। অনেককেই বাসের দরজায় ঝুলতে দেখা গেছে।  কেউ কেউ বাসে উঠতে পারবেন না- এমন আশঙ্কা থেকে বিকল্প উপায়ে তাদের গন্তব্যে গিয়েছেন। সকালে মগবাজার মোড়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, কর্মস্থল উত্তরা হাউজ বিল্ডিং। প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে বাসের জন্য মগবাজার মোড়ে অপেক্ষা করেছি। ফাঁকা রাস্তা, সড়কে বাস নেই। দু’একটার দেখা মিললেও যাত্রীদের চাপে ওঠা যায়নি। বাস দেখামাত্র মানুষ হুড়োহুড়ি করছেন। এতে গড়ে প্রতিটি বাসে ১/২ জন ছাড়া কেউই উঠতে পারেননি। বাসের সংকট কাজে লাগিয়ে সিএনজি ও রিকশাচালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করেছেন। হুমায়ুন নামের একজন চাকরিজীবী বলেন, সকাল সাড়ে আটটা থেকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু বাসে ওঠা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ বাস গেট বন্ধ করে আসছে। আমি তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ভেবেছিলাম আজ ছুটির দিনে ভোগান্তি কিছুটা কম হবে। কিন্তু ভোগান্তির তো কোনো শেষ নেই। 

যাত্রীরা বলছেন, হঠাৎ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শনিবার গণপরিবহনের সংখ্যা কমে গেছে। এতে দিনভর যাত্রীদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। রাস্তায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাসে ওঠার সুযোগ পেলেও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল বা রিকশায় করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়া। কবিরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, রাজধানী পরিবহনে সাইনবোর্ড থেকে রামপুরা পর্যন্ত আগে বাস ভাড়া ছিল ২০ টাকা। শনিবার হঠাৎ করেই ১০ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে তারা মানুষের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে। এদিকে বাসের সংকট কাজে লাগিয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চালকরা। অন্যান্য সময়ের তুলনায় গতকাল ভাড়া হাঁকিছেন কয়েকগুণ। সিএনজি চালকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়িয়েছেন তারা। রিকশা চালকরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ায় এখন সব কিছুর উপর এর প্রভাব পড়বে। 

এতে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন থেকেই ভাড়া বেশি চাচ্ছেন তারা। মৌচাক থেকে মিরপুরের উদ্দেশ্যে বের হন ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, বাস না পেয়ে সিএনজিতে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সিএনজি ভাড়া বেশি চাচ্ছে। আগে ২৫০ /২৮০ টাকায় নিয়মিত যাতায়াত করতাম। এখন ৫০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। বাসের সংকট বুঝে মানুষের পকেট কাটার চেষ্টা করছেন সিএনজি ও রিকশাচালকরা।  নিপা  নামের এক যাত্রী বলেন, বাংলামোটর থেকে মতিঝিল বাস ভাড়া ১২ টাকা। রিকশায় গেলে আগে ৬০/৭০ টাকায় যেতে পারতাম। আজ বাস না থাকায় রিকশা ভাড়া চাচ্ছে ২০০ টাকা। এ ভাবে ভাড়া বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে! সবকিছুর দাম বেড়েই চলছে।

 হঠাৎ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শিরিনা আক্তার। শাহবাগ থেকে মহাখালী যাবেন। ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত বাস না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় সিএনজি ভাড়া করেন। বাসে ১৫ টাকার ভাড়া কিন্তু সিএনজিতে ২৫০ টাকায় যান তিনি। মানবজমিনকে বলেন, কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাসের সংকট দেখা দেয়ায় চাকরিজীবী মানুষরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে যানবাহন পেতে যেমন হিমশিম খেতে হয়েছে, তেমনি গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া।  

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status