খেলা
গোলাপি বলে বিসিএল, জানে না ক্রিকেট অপারেশন্স
ইশতিয়াক পারভেজ
১৩ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার
আসন্ন বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিসিএল) হবে গোলাপি বলে! দেশের ঘরোয়া লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেটকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) টুর্নামেন্ট কমিটি। শুধু তাই নয়, মে মাসে এই আসর যখন শুরু হওয়ার কথা তখন দেশে তাপমাত্রা থাকবে অনেক বেশি। যে কারণে চারদিনের এই আসরকে দিবারাত্রির করার ভাবনাও আছে। বিষয়টি দৈনিক মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন বিসিবি’র টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। অন্যদিকে কেন হঠাৎ করে গোলাপি বলে বিসিএল তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
কারণ, এই বছর বাংলাদেশের যতগুলো আন্তর্জাতিক টেস্ট আছে তার সবই হবে লাল বলে। তাহলে কেন এমন চিন্তা? ক্রিকেটাররা এখানে থেকে লাল বলের জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবে? প্রশ্ন উঠেছে অর্থনৈতিক লাভ ক্ষতিরও। হঠাৎ করে এই আয়োজনে বিসিবিকে গোলাপি বলের জন্য আলাদা ভাবে খরচ করতে হবে। শুধু তাই নয় দিবারাত্রির ম্যাচ আয়োজনে ফ্লাড লাইটসহ স্টেডিয়াম থাকতে হবে। সেখানেও বাড়বে বিসিবি’র খরচ।
সবচেয়ে বড় বিষয় জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা এখানে খেললেও তাদের লাভ কি সেটি জানেন না বিসিবি’র ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কোন ভাবনা থেকে বিসিএল গোলাপি বলে আয়োজনের কথা বলেছে টুর্নামেন্ট কমিটি। এই বিষয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ কিছুই জানে না। আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও হয়নি। তাই আমি এটি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আগে জানি যে তারা কি ভাবছে এরপরই মন্তব্য করা ঠিক হবে।’ এই বছর বাংলাদেশ দল কোনো টেস্ট ম্যাচই খেলবে না গোলাপি বলে।
তাহলে বিসিএলে এমন আয়োজন জাতীয় দল কতটা লাভবান হবে? এ নিয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেননি নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে সামানে সব টেস্টই জাতীয় দল খেলবে লাল বলে। তাহলে জাতীয় দলের খুব একটা লাভ হবে না সেটি মেনে নিতে হবে।’ কিন্তু আকরাম খান মনে করেন এই গোলাপি বলে মানিয়ে নেয়াটা হবে ক্রিকেটারদের জন্য অনেক কিছু শেখার মতো। তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমাদের এই ভাবনাটা এসেছে বিসিএলটা আরো অকর্ষণীয় করে তোলার জন্য। এরপর চিন্তা করেছি যে সামানে গরম মে মাসে অনেক তাপ থাকে। যদি আমরা দিনরাত মিলিয়ে খেলতে পারি তাহলে ক্রিকেটারদের উপকার হবে। এছাড়াও স্পন্সরদের টানতেও নতুন কিছু দিতে হয়। এতে করে আকর্ষণ বাড়বে। প্রতিযোগিতাও বড়বে। আর লাল বা গোলাপি বল যেটা হোক ক্রিকেটারদের মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ তো নিতে হবে। এখান থেকে শিখবে তারা।
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ শেষে হলে ৭ই মে থেকে শুরু হবে বিসিএল। যেখানে পৃষ্ঠপোষককে আরও আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আকরাম খান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের দাবি হঠাৎ করে গোলাপি বলের আয়োজনে অর্থনৈতিক দুর্নীতির একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সূত্রের দাবি- ‘আমার মনে হয় অপ্রয়োজনে বিসিএলে গোলাপি বলের কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ অন্তত এই বছর বাংলাদেশ কোনো টেস্টই গোলাপি বলে খেলবে না। এখানে বিসিএলে দুই ভাবে খরচ বড়বে। একটা হচ্ছে হঠাৎ করে অনেক অনেক গোলাপি বল কিনতে হবে। যেহেতু লাল বলের তুলনায় গোলাপি বল দ্রুত নষ্ট হয় তাহলে পরিমানটাও বেশি লাগবে।
এছাড়াও দিবারাত্রির ম্যাচ হলে ফ্লাড লাইট ব্যাবহার করতে হবে। সেখানে বাড়বে নানা রকম খরচ। এতে করে অর্থনৈতিক দুর্নীতির সম্ভাবনা থাকবে। কেউ কেউ হয়তো এখান থেকে লাভবান হওয়ার চিন্তা করবে।’ অন্যদিকে আকরাম খানও বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন গোলাপি বলে সিসিএল আয়োজন বেশ কঠিন হবে। তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। কারণ দিনরাতের ম্যাচ আয়োজন করতে হলে টেস্ট ভেন্যুগুলো ব্যবহার করতে হবে। আর আমরা চিন্তা করেছি যদি করি একটা বা দুটি ম্যাচ নয় বিসিএলের এবারের আসরটা হবে পুরাটাই গোলাপি বলে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। স্পন্সর পাওয়াটাও অনেক কঠিন বিষয়। দেখা যাক দ্রুতই হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।’