দেশ বিদেশ
কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আবারো দেশে ডলার ফেরানোর চিন্তা
এম এম মাসুদ
১২ মার্চ ২০২৫, বুধবার
ডলার সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বেশ কয়েকবার দাম বাড়ানোসহ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। তবে তীব্র না হলেও ডলারের সংকট আদতে কাটেনি। এ রকম পরিস্থিতিতে আয় বাড়াতে আবারো বিদেশ থেকে অবাধে ডলার আনার প্রক্রিয়া উদার করে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এর আগে ২০২২ সালের ২৩শে মে এরকম একটি সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার সরবরাহ বাড়াতে সেই প্রক্রিয়া আবারো চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। ফলে যত খুশি ডলার আনা যাবে। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাবদ দেশে যত পরিমাণ ডলার পাঠানো হোক না কেন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। আবার এর বিপরীতে আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনাও দেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগে ৫ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে আয়ের নথিপত্র জমা দিতে হতো। যে কারণে এর চেয়ে বেশি অর্থ একবারে পাঠাতে পারতেন না বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা। দেশে অবাধে ডলার আনার প্রক্রিয়ার সেই সিদ্ধান্ত নতুন করে নেয়া হলে বিদেশ থেকে অর্থ আনতে আর কোনো বাধা থাকবে না। এ নিয়ে বিদেশেও কেউ প্রশ্ন করবে না, আর দেশে তো করবেই না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান মানবজমিনকে বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে আগের একটি সার্কুলার আছে। যদি সেই সার্কুলারে নির্ধারিত সময় উল্লেখ না থাকে, তাহলে সেটিই এখনো বহাল থাকার কথা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ডলারের প্রবাহ বাড়াতেই সরকার শিগগিরই নতুন করে প্রশ্ন ছাড়াই দেশে অর্থ আনার প্রক্রিয়াগত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ডলারের সংকট তাই সরকার হয়তো ডলারের প্রবাহ বাড়াতে এ সুযোগ দিয়েছে। নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে দেশে ডলার আনায় বড় উল্লম্ফন হতে পারে। এ সময়ে ডলার আনতে এই সিদ্ধান্ত দেশের ও জনগণের জন্য ভালো হবে। দেশ থেকে অবৈধভাবে যাওয়া ডলার হোক আর প্রবাসীদের আয় হোক, দেশে আসলে সবার উপকার হবে। আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ অনেক উন্নত দেশ ডলারকে স্বাগত জানায়। আমাদের জানালেও সমস্যা নেই। ডলার সংকট কেটে গেলে জিনিসপত্রের দাম আরও কমে আসবে।
ওই সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ৫ হাজার ডলার অথবা ৫ লাখ টাকার বেশি প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদানে রেমিটারের কাগজপত্র বিদেশস্থ এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে প্রেরণের বাধ্যবাধকতা আছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রণোদনা প্রদানে রেমিটারের কাগজপত্র ছাড়াই আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে। তবে পাচার হওয়া টাকা বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ দেয়াকে ব্যবসায়ীরা সমর্থন করেন না বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) তৎকালীন সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। বলেছিলেন, আমরা আগেও বলেছি, পাচার হওয়া টাকা বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ ব্যবসায়ীরা সমর্থন করেন না। কারণ এ ধরনের সুযোগ দিলে সবাই এতে উৎসাহী হবে। ব?লেন, আমি এখন ২২ থেকে ৩০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করবো। অন্যদিকে বিদেশ থেকে ফেরত আনলে ১৮ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা এটা সমর্থন করি না। কারণ এতে ভালো ব্যবসায়ীরা এক্সপোর্টে নিরুৎসাহিত হবে। এ ছাড়া বিনা প্রশ্নে অর্থ পাচারের মতো অসাংবিধানিক, আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক প্রস্তাব বাতিলের আহ্বান জানিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এটি বৈষম্য ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, যারা টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের জন্য দেশে টাকা ফিরিয়ে আনা এখনই মোক্ষম সময়। কারণ, পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, এর ফলে দেশে প্রবাসী আয় বাড়বে। কিন্তু প্রকৃত উপকার পাবেন দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তারা অবৈধ টাকা বিদেশে পাঠিয়ে বৈধ চ্যানেলে তা দেশে নিয়ে আসবেন। এতে তাদের কালোটাকা সাদা হয়ে যাবে। তবে সংকট কাটাতে এই অর্থ দেশের জন্য উপকারে আসবে। কারণ ডলারের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে ডলার প্রয়োজন। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্সের ঢল: রমজান শেষে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশে মার্চ মাসে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মার্চ মাসের প্রথম ৮ দিনে ৮১ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) ধ?রে এই অঙ্কে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাসের শেষে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বৈধ পথে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)।