দেশ বিদেশ
যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেয়া যাবে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১২ মে ২০২৫, সোমবার
সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে ইসলামী ধারাসহ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে। সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তর আদেশ জারি করতে পারবে। শেয়ার হস্তান্তর গ্রহীতাকে অবশ্য সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি হতে হবে।
এমন ধারা যুক্ত করে ছুটির দিন গত শুক্রবার ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ৬৭ পৃষ্ঠার গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর আগে গত ১৭ই এপ্রিল অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন করেছিল উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করলে ও প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজ্যুলেশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজ্যুলেশনের মানে হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা।
সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল যেকোনো ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক, অধ্যাদেশে এমন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাুই নয়, ওই ব্যাংকের বিদ্যমান শেয়ারধারী বা নতুন শেয়ারধারীদের মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করার সুযোগও থাকছে এ অধ্যাদেশে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কোনো ব্যাংক আর কার্যকর নয় বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেউলিয়া হয়ে গেছে বা দেউলিয়া হওয়ার পথে, আমানতকারীদের পাওনা দিতে পারছে না বা না দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন এ ধরনের ব্যাংকের ভালো করার স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাস হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আলাদা বিভাগ গঠন করবে, অধ্যাদেশেই এ কথা বলা রয়েছে। ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও কার্যকর পরিচালনা অব্যাহত রাখতে এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার সুযোগও থাকছে এ অধ্যাদেশে। পরে সেগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রিও করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো দুর্বল ব্যাংকের সবধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। দুর্বল বা দেউলিয়া হওয়া ব্যাংকের কার্যক্রম সাময়িকভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ব্যাংক হলো ব্রিজ ব্যাংক। দেশে ব্যাংক খাতের মালিকপক্ষের সমিতি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, অধ্যাদেশ নিয়ে বিএবি বিশ্লেষণ করবে; তার পর প্রতিক্রিয়া জানাবে। এদিকে ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল নামে সাত সদস্যের আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। উপদেষ্টা পরিষদ ছয় সদস্যের সংস্থা গঠনের কথা বললেও পরে এক সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এই কাউন্সিল সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল ও আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে।
কাউন্সিলের প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। আরও থাকবেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব, রেজ্যুলেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর ও গভর্নরের মনোনীত আরেকজন ডেপুটি গভর্নর। কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে একটি করে বৈঠক করবে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত কাউকে অবসায়ক নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর কোনো ব্যাংকের দায়ের ওপর সুদ বা অন্য কোনো মাশুল কার্যকর হবে না।
আবার কোনো ব্যাংক নিজে থেকেও অবসায়নের প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত ও দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তির কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তের কারণে যদি কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হয় এবং ব্যাংকের ক্ষতি হয়, সে জন্য তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। অধ্যাদেশের আওতায় জারি হওয়া বিধিবিধান অমান্যকারীদের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। বিধান অমান্য করা হলে প্রতিদিনের বিলম্বের জন্য গুনতে হবে পাঁচ হাজার টাকা করে বাড়তি জরিমানা।