ঢাকা, ২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

রড ও সিমেন্টের দাম কমায় শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

আরিফুল ইসলাম
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার
mzamin

৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। থমকে আছে বিভিন্ন খাতের ব্যবসা। এই হাওয়া লেগেছে রড-সিমেন্ট শিল্পেও। বিগত সরকারের সময়ে নেয়া একাধিক মেগা প্রকল্পকে কেন্দ্র করে রমরমা ব্যবসা করতেন রড-সিমেন্ট শিল্পের ব্যবসায়ীরা। পট পরিবর্তনের পর বন্ধ হয়ে গেছে বিগত সরকারের নেয়া অনেক প্রকল্প। এছাড়া ১৬ বছরের একচেটিয়া শাসনব্যবস্থার ফলে দেশের মধ্যে সরকার সমর্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করতেন। বর্তমানে সে সবের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন রড-সিমেন্ট শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। নির্মাণশিল্পের ভরা মৌসুমেও ক্রেতাদের কাছ থেকে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সাড়া। এতে চাহিদা ও উৎপাদন দু’টোই নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি বড় এবং মাঝারি নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ থাকা, নতুন করে প্রকল্প শুরু না করার প্রভাব পড়েছে এ খাতে। অবস্থা এমন চলতে থাকলে চরম সংকটে পড়বে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সরজমিন রাজধানীর গ্রীন রোড, কাওরান বাজার, কাঁঠালবাগান এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

গ্রীন রোডে আমিন এন্টারপ্রাইজের মালিক স্বপন বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রড-সিমেন্টের বাজারে প্রভাব পড়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বেশির ভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতেন। রড-সিমেন্টেরও বড় একটা অংশ সরকারি প্রকল্পের কাজেই ব্যবহার হয়। এজন্য আগের থেকে বিক্রি এখন অনেক কম। জননী এন্টারপ্রাইজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, স্থায়ী কোনো সরকার না আসা পর্যন্ত স্থিতিশীলতা বা পরিবর্তন হবে না। আগের থেকে বিক্রি কমেছে। নতুন কোনো নির্বাচিত সরকার এলে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছি। 

জানা গেছে, সিমেন্ট খাতের উৎপাদন সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। দেশের বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। যেসব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে সেগুলো গত ৫ই আগস্টের পর বন্ধ রয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সিমেন্ট খাতে। এ ছাড়া রডের দাম টনপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা কমেছে। রডের পাশাপাশি সিমেন্টের দামও বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। চাহিদা না বাড়লে রড-সিমেন্টের দাম আরও কমবে বলে আশঙ্কা মিলমালিকদের। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অবকাঠামো খাত সবচেয়ে নাজুক সময় পার করছে। চলমান প্রকল্পের কাজে ধীরগতির পাশাপাশি বিগত ছয় মাসে নতুন কোনো মেগা প্রকল্পের অনুমোদন হয়নি। আগের প্রকল্পগুলোয় বিক্রি করা পণ্যের দামও মেটাতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ মিলছে না। আবার সরকারি প্রকল্পের বিল আটকে থাকায় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকে। এদিকে গত এক বছর ডলারের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে বাড়তি দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অথচ দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদকরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত ইস্পাত শিল্পকে নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া না হলে এর সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই মাসে কোম্পানি ভেদে ইস্পাতের বিক্রি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি সিমেন্টের বিক্রি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর প্রধান কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করছেন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ থাকাকে। কারণ, দেশের মোট ১ লাখ ২০ হাজার টন উৎপাদিত ইস্পাতের প্রায় ৬৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় সরকারি প্রকল্পে। সামপ্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় সিমেন্টের চাহিদা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। সিমেন্ট খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা কম থাকায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দাম আরও নিম্নমুখী হতে পারে। সিমেন্ট ও ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সরকারের বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন শিল্পেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দেশের কোম্পানিগুলোর রড উৎপাদনে সক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখ টন। বছরে সর্বোচ্চ চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই ব্যবহার হয় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে। বাকি ৪০ শতাংশ বেসরকারি ও ব্যক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার হয়। বর্তমানে চাহিদা কমে ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা কমেছে সরকারি প্রকল্পে। এখানে রডের চাহিদা ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসায় দামও ধারাবাহিকভাবে কমছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. শামসুল আলম খান বলেন, আমাদের স্টিল শিল্পের ভৌত অবকাঠামোকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের উপর বড় ধরনের চাহিদা থাকে রড শিল্পে। প্রকল্পগুলোর কাজের মন্থরগতি ও স্থবিরতা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আগের তুলনায় ব্যবসা- বাণিজ্য অনেকটা কমেছে।

পাঠকের মতামত

২১০ টাকার cement bag এখন ৫৫০ টাকা, ৫৫০০০ টাকার রড ১ লাখ টাকা. একটু কমে যাওয়াতে হতাশ ব্যবসায়ী! হায়রে বাংলাদেশ

AlMamun
১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ২:৫৮ পূর্বাহ্ন

এতদিন আলু পিয়াজ ওআলারা খুব বড় দান মেরেছে। এখন এদের অবস্থা সবাই জানে। একই অবস্থা হয়েছে রড ও সিমেন্ট ওয়ালাদের। ঢাকা শহরে যত নতুন ফ্ল্যাট উঠেছে তার মধ্যে থার্টি পার্সেন্ট রড সিমেন্ট ওয়ালাদের। এখন আলু পেঁয়াজ রড সিমেন্ট একসাথে বসলেই হয়। বাকি আছে সয়াবিন তেল। এখন হায় হায় কেন।

Anwarul Azam
১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৪:১৭ পূর্বাহ্ন

রোড সিমেন্ট ওয়ালাদের অবস্থা এখন আলু পেয়াজের ব্যবসায়ীদের মতন হয়েছে। এখন বাড়াও না। এখন বিনা পয়সায় দিবা।

Anwarul Azam
১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ২:০২ পূর্বাহ্ন

রড সিমেন্ট দাম আরও কমানো দরকার। ২৫০ টা সিমেন্ট প্রতি ব্যাগ উচিত রড, ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকার টন হওয়া উচিত।

Rakib
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ৮:১৭ অপরাহ্ন

কোথায় কমছে। সব ফালতু পোস্ট

মোঃ আনোয়ার হোসেন
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ৩:১৬ অপরাহ্ন

রড ও সিমেন্টসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখাসহ দীর্ঘমেয়াদে দাম স্হিতিশীল রাখা গেলে সাধারণ মানুষ নির্মাণকাজে হাত দিতে সাহস পাবে।

আলমগীর
৮ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

মানুষ যতই কেনা কমিয়ে দিবে তখন দেখবেন দাম আরো কমেগেছে।তাই আমরা সবাই মিলে কেনা কমিয়ে দি

আল মামুন খান
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ৭:১৭ অপরাহ্ন

ton 50000/- joktik o shahanio

unname
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ২:৪১ অপরাহ্ন

রডের ন্যায্য দাম ৫০০০০ টাকা টান আর সিমেন্ট ৩৮০ টাকা হওয়া উচিত, কারন আমাদের দেশে ভাংগারি দিয়ে রড বানানো হয়, আর ইম্পোট কর হয় ৮ টাকা কেজি, সব রোড ব্যবসায়ি হচ্ছে প্রতারক

হাসান
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ২:৩৬ অপরাহ্ন

ইউক্রেন যুদ্ধের অযুহাতে যখন দাম বাড়ানো হয়েছিলো? এখনো তো দাম সেই সময় এর তূলনায় বেশিই!

আরাফাত
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

তাহলে কিবুঝা যায়? সরকার এর চাহিদার কারণে দাম বাড়ে। আমরা জানি উৎপাদন বেশী হলে দাম কমে যায়। আমাদের দেশে উল্টা চাহিদার সাথে উৎপাদন বাড়ানো হয় সেই সাথে বাড়ে দাম।

M.S.A bABU
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন

দাম আরো কমা উচিত। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এর সময় এর দাম অত্যধিক বেড়ে গিয়েছিল।

হাসান
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

Let's see the big picture

জাহিদ-আল্-মামুন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

যখন ৬৫০০০/= হাজার টাকার টন প্রতি বেড়ে ১,০০০০০/= টাকা হয়ে গেল কি আনন্দ নাই লাগছিল, কেয়া এখন কান্নাকাটি কেন ? ""নারায়ণ নারায়ণ সবই ভগবানের লীলা খেলা""

মুহাম্মদ শফিউল আজম
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১:২১ অপরাহ্ন

ব্যবসায়ীরা শুধু নিজের কথাই চিন্তা করে, সাধারণ মানুষ মরে গেলেও তাদের মাথা ব্যাথা নেই....

AL AMIN
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১০:৫৪ অপরাহ্ন

আমরা চাই দাম আরো কমে সহনীয় পর্যায়ে আসুক

KAWSAR
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৯:২৭ অপরাহ্ন

এতোদিন এসব পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে ছিলো। দাম কমে যাওয়ায়, সাধারণ মানুষেরা এসব পণ্য ক্রয় করতে উৎসাহিত হবে। ক্রমান্বয়ে বেচা-বিক্রি ও বাড়বে। এতে আমরা আনন্দিত।

মাওলানা আব্দুল কাইয়ূ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৬:২৬ অপরাহ্ন

বিগত সরকারের আমলে রড সিমেন্টের দাম অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে গেছে। এখন সেটা সমন্বয় হওয়া উচিৎ।

sobuz Bangla
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১:৪৪ অপরাহ্ন

খুবই ভাল খবর, ভাল লাগলো

সোহাগ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১:২১ অপরাহ্ন

দাম কমে গেলে সাধারণ মানুষ কিনতে পারবে!

Mahfuz
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

ক্রেতা কম থাকলে বাদ কমবে নিশ্চিত। সরকারী কাজ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি না পেলে দাম বাড়বে না, তাহলে সাধারন মানুষের কিছুটা উপকার হতে পারে। তবে তাদের চাহিদা সামান্য।

মো: নূরুল ইসলাম ভূইয়
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

দাম কমে গেলে তো অনেক ভাল। বেচা বিক্রি বাড়বে। বাজারের সাথে সংগতি রেখে দাম নির্ধারিত হবে। এতোদিন সিন্ডিকেট নির্ভর অর্থনীতি আর কারো কাম্য নয়। সুতরাং এভাবেই চলুক।

মুরধদুল আলম
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে নামুক

জনতার আদাল
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৬:১৬ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status