শেষের পাতা
রেমিট্যান্স আহরণ শীর্ষ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার
বাংলাদেশে আসা রেমিট্যান্স মানেই সৌদি আরব ছিল শীর্ষে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবারই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ছিল শীর্ষে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘটে ব্যতিক্রম। ওই অর্থবছরে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেটাও পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৩০০ কোটি (৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এই অঙ্ক সৌদি আরবের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আর আরব আমিরাতের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সৌদি আরব থেকে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল; আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২.৪৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের এই সাত মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা শুরু হয় ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর থেকে। ওই বছরে মাত্র ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত অর্থবছরে সেই রেমিট্যান্স দুই হাজার গুণের বেশি বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে উঠে এসেছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র পাল্টে যায়। প্রতি মাসেই বেশি প্রবাসী আয় আসছে দেশটি থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা মোট ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) দেশে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। সৌদি আরব থেকে এসেছে ২৭ কোটি ডলার। আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। আগের মাস ডিসেম্বরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স আসে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আরব আমিরাত থেকে আসে ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। সৌদি আরব থেকে আসে ২৯ কোটি ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে আসে ২৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একপর্যায়ে ৫ই আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ৮ই আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ক্ষমতার এই পালাবদলে আগস্ট থেকে প্রবাসী আয়ও বাড়তে শুরু করে।
হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও প্রবাসী আয় আহরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা বলেন, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ প্রবাসী আয় প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহের পর তা এক জায়গা থেকে গন্তব্য দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠান যে দেশ থেকে এসব আয় পাঠাচ্ছে, সেসব দেশ থেকে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়া মানে দেশটি থেকে প্রকৃত প্রবাসী আয় বেড়েছে- হয়তো তেমন নয়। অন্যান্য দেশের আয়ও প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাত ঘুরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে। এ কারণে পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয়ের বড় প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে কাগজে-কলমে।
ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রথমত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছিল; মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে কারণে সেখানকার প্রবাসীরা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে কম টাকা পাঠিয়েছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়েছে; ২ শতাংশে নেমেছে। অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে। তাই এখন আমাদের প্রবাসীরা বেশি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। আবার বৈদেশিক মুদ্রায় সঞ্চয়ের বিভিন্ন নীতিমালা সহজ হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য, সরকার পরিবর্তনের পর হুন্ডি কমাসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে।
স্বাধীনতার পর থেকে শীর্ষে ছিল সৌদি আরব
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বরাবরই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছিল। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। তার মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছিল ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ (৫.৭২ বিলিয়ন) ডলার।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, এসেছিল ৩.৪৬ বিলিয়ন ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২.৪৪ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২.০২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৫.১২ শতাংশ কমে যায়; আসে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থ বছরে সব দেশ থেকেই কম আসে রেমিট্যান্স। ওই অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার আসে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ৩.৪৪ বিলিয়ন ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২.০৭ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে আসে ২.০৩ বিলিয়ন ডলার।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য যত শ্রমিক বিদেশে গেছেন, তার প্রায় ২০ শতাংশ গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বর্তমানে দেশটিতে ১৫ লাখের মতো প্রবাসী কাজ করছেন।
বিএমইটি’র হিসাবে, বাংলাদেশের শীর্ষ শ্রমবাজার সৌদি আরব। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া শ্রমশক্তির ৩৬ শতাংশই গেছে দেশটিতে। সংখ্যার দিক থেকে যা ৫৫ লাখের বেশি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের বড় অংশই রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে; কাজ করছেন বিভিন্ন শ্রমঘন পেশায়। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী।
পাঠকের মতামত
সরকারের উপর মহলে একটা কথা বলার ছিল। যে আমি একজন সৌদি আরব প্রবাসী। দীর্ঘ ৬ বছর হয় প্রবাসেই আছি। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে যেই হারে সৌদি আরবে বাংলাদেশী লোক প্রবেশ করেছে সেই হারে এইখানে কাজ নাই। আর যা কাজ ছিল যেইখানে আমরা আগে পাইতাম ১৫-১৬ করে সেইটাই লোক বেশি থাকার কারনে ১৩ হয়ে গেছে। কারন লোক চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে। তো বাজার টা আমরাই নষ্ট করলাম
Main reason is US , Canada, some of Middle East countries send money through App which is showing under US dollar. Actually more money come from Middle Eastern countries.