ঢাকা, ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

মানবজমিন-এর এগিয়ে চলা

শামীমুল হক
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবারmzamin

কখনো চাকরি চলে যাওয়া, কখনো গ্রেপ্তার, কখনো তুলে নিয়ে আটকে রাখা, আবার কখনো দেশ ছাড়া করা। হুমকি তো- সেটা নিত্যদিনের। মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সাংবাদিকতা জীবনের পরতে পরতে ভয়ঙ্কর থাবা। স্বাধীনতার পর থেকে তার সাংবাদিকতা জীবন এক জটিল অধ্যায়। কিন্তু এই অকুতোভয় সাংবাদিক নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি।

সহকর্মীদের বলেছেন, মানবজমিন কোনো দলের নয়। কোনো গোষ্ঠীর নয়। যা সত্য তা লিখবেন। সেটা যদি আমার বিরুদ্ধে হয় তাহলেও। আর এ সত্য লিখতে গিয়ে জেলে যেতেও আমি প্রস্তুত। এমন একজন পেশাদার সাংবাদিক সামনে থাকলে সংবাদিকতায় সাহসের ভিত্তি রচিত হয়। আর তিনি যদি হন ওই সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক। মালিক। তাহলে তো কথাই নেই। দৈনিক মানবজমিন ২৭ বছর পেরিয়ে ২৮-এ পা দিয়েছে। এ যাত্রা এখন বলা যায় নতুন পরিবেশে। গত প্রায় ষোল বছর পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবজমিন-এর প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে এক অজানা আতঙ্কে। সত্য লিখলেই নানা জায়গা থেকে ফোন- কেন এটা লেখা হলো। প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানতেন, বলতেন এ রিপোর্টটি প্রকাশ হলেই বিপদে পড়বো। তারপরও তিনি রিপোর্ট আটকাতেন না। বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর রিপোর্ট দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলে। কিন্তু বেজার হয় তৎকালীন সরকার। গোয়েন্দা সংস্থা। সহযোগী একটি পত্রিকাও এ রিপোর্টকে মিথ্যা বলার নানা কসরত করে রিপোর্ট ছেপেছে। কিন্তু হাসিনাবিহীন বাংলাদেশে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে আদালতের মাধ্যমে ডিনএ টেস্ট করে প্রমাণ করেন এটিই হারিছ চৌধুরী। যিনি মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকার বুকে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। জেলের রায় মাথায় নিয়ে এখনো ঘুরছেন।

ক্যাসেট কেলেঙ্কারি ছিল আরেক দেশ কাঁপানো রিপোর্ট। যে রিপোর্ট সত্য প্রমাণ হওয়ার পরও সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী ও প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে জেল দেয়া হয়। সেটাও ছিল শেখ হাসিনার আগের আমলের ঘটনা। ক্যাসেট কেলেঙ্কারির ঘটনা মেনে নিয়ে বিচারপতি পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর বিচারপতির কথোপকথনের এ রিপোর্ট সত্য- এরশাদ নিজেই তা স্বীকার করেছেন। এ মামলায় এরশাদেরও ছয় মাসের জেল হয়েছিল। যাইহোক গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সত্যের পথে হেঁটেছে মানবজমিন। আর এই সত্যই মানবজমিন-এর জন্য বয়ে আনে নিশিকালো অন্ধকার। প্রধান সম্পাদককে ফোন করে জানানো হয় মানবজমিন বন্ধ করে দেয়ার কথা। অথবা তাকে দেশ ছাড়তে হবে। মানবজমিন প্রধান সম্পাদক আদিঅন্ত সহকর্মী-বান্ধব। তিনি চোখ বুজে দেখলেন মানবজমিন বন্ধ হলে উনার আড়াইশ’ কর্মচারী- কর্মকর্তা পথে বসবেন। তিনি তা হতে দেননি। নিষ্ঠুরতম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালানোর মাত্র তিনদিন আগে ২রা আগস্ট মতিউর রহমান চৌধুরীকে স্বপরিবারে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ৫ই আগস্ট দেশ স্বৈরশাসক মুক্ত হয়। গোটা দেশের মানুষ উল্লাসে নেমে আসে রাজপথে। আনন্দে মাতোয়ারা দেশের এ চিত্র তিনি নিজ চোখে দেখতে পারেননি।    

বাংলা ভাষায় দেশেরই শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রঙিন ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন। প্রথমদিনই দেশ কাঁপিয়ে বিশ্বে আলোচনায় আসে। রয়টার্স, এপি, এএফপিসহ বহু বিদেশি মিডিয়া মানবজমিনকে নিয়ে রিপোর্ট করে। দীর্ঘ এ সময়ে হাজারও এক্সক্লুসিভ আর সাহসী রিপোর্টিংয়ে মানবজমিন দেশের সংবাদপত্রের জগতে অন্যতম বটবৃক্ষের মর্যাদা পেয়েছে। যা মানবজমিন’র জন্য গৌরবের। মতিউর রহমান চৌধুরীর এ স্বপ্নের অভিযাত্রায় সারথি হয়েছেন অনেকে। বর্তমান সময়ে এসেও মানবজমিন তার লক্ষ্য থেকে একটুও পিছুইনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরছেন সযত্নে। সাহস করে বলছেন অন্যায়ের কথা। এখনো অনেক কিছু লিখতে পারেন না সে কথাও অবলীলায় বলেছেন। দেশকে গতিপথে ফিরিয়ে আনতে মানবজমিন তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মানবজমিন’র এ যুদ্ধ চলবে অবিরাম। সত্যি বলতে কি স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটা যে কত কঠিন- যে সাঁতার কাটে তিনিই বলতে পারেন। নির্বাচনী ব্যবস্থা দেশ থেকে তুলে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার। গুম, খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। এসব কোনো নতুন কথা নয়। নতুন কথা হলো- আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে চলবে? গণ-অভ্যুত্থান বলি আর বিপ্লব বলি কোনোকিছুই কাজে আসবে না যদি এর ফলাফল ঘরে তুলতে না পারি। দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এজন্য এক হতে হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে দিনের পর দিন বসতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দু’হাত প্রসারিত করে সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু এমন আলামত তো দেখা যাচ্ছে না। দলে দলে বিরোধ যেন সেই আগের কথাই মনে করিয়ে দেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কথাও অনেক ক্ষেত্রে সীমারেখা পার হয়ে যাচ্ছে। মানবজমিন নিত্যদিন এসব লিখে সকলকে সজাগ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে সবসময়। রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে বসতেই হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন দল গঠন করছেন। এটাকে কেউ ভালো চোখে দেখছে। কেউ বা বিরোধিতা করছে। যেখানে দেশকে এগিয়ে নেয়ার সময়, সেখানে এমন বিরোধ ভালো কোনো ইঙ্গিত বহন করে না। এমনিতেই স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে দেশকে অকার্যকর প্রমাণ করতে। এটা যদি রাজনৈতিক দলগুলো না বুঝে- তাহলে আখেরে তাদেরই মাশুল গুনতে হবে। আর সাধারণ পাবলিক সবসময়ের মতো পিষ্ট হতে থাকবে। স্বৈরাচারের চালানো নিয়মেই এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। ছয় মাসেও এ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারা ব্যর্থতা বৈ আর কি? এসব নিয়ে মানবজমিন কথা বলে যাবে। সততা আর সাহসে মানবজমিন’র নির্ভয়ে চলা বন্ধ হবে না। আর এইসব দিন সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষীকে অভিনন্দন। ভালোবাসা।  আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকুক প্রিয় দৈনিক মানবজমিন। সবশেষে বলতে হয় আমাদের একজন মতিউর রহমান চৌধুরী আছেন। যিনি সাহসের প্রতীক। যিনি সহকর্মীদের ভালোবাসার প্রতীক। যিনি মানবজমিন-এ কর্মরত সবাইকে তার পরিবারের সদস্য মনে করেন। মানবজমিন আরও গর্বিত এর সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী দেশের কোনো জাতীয় পত্রিকার প্রথম মহিলা সম্পাদক। যার স্নেহের পরশে কর্মীরা উদ্যমী হয়ে লড়াই করে যাচ্ছে।

 

পাঠকের মতামত

জনাব শামীমুল হক, চমৎকার লিখেছেন। মানব জমিন তথা আমাদের একজন অকুতোভয় মতিউর রহমান চৌধুরী রয়েছেন। তাঁর বিকল্প কেবল তিনিই। তবে সৃষ্টি করেছেন ভয় ডরহীন একঝাঁক কর্মিও। তার মধ্যে উনার সহধর্মিণী মাহবুবা চৌধুরী, আপনি নিজে সহ অনেকেই। মানব জমিন তার গতিতে চলছে।চলবেও।

হোসেন মাহবুব কামাল
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:২১ অপরাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status