ঢাকা, ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

ঝিনাইদহে তামাক চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি, সংশ্লিষ্ট দপ্তর নীরব

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার

ঝিনাইদহে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাক চাষ। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর সর্বনাশা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছে এই অঞ্চলের চাষিরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তিন ফসলি কৃষিজমি। তামাক চাষিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পর্যাপ্ত সার পাচ্ছেন না পিয়াজ, রসুন ও অন্যান্য চাষিরা। জেলার শৈলকূপা ও হরিণাকুণ্ডুতে রসুন, পিয়াজ, পান, কলা ও অন্যান্য চাষিরা সার সংকটের অভিযোগ করেছেন। জানা যায়, তামাকজাত পণ্যে বেশি ভ্যাট আরোপ ও বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে না কৃষি বিভাগ থেকে। ফলে কমে যাচ্ছে খাদ্যজাত, ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন। বিগত চার বছরে জেলায় তামাক চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। জেলার শহরতলীতে বৃটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর তামাক ক্রয় কেন্দ্র থাকায় হাতের কাছেই একটি নিশ্চিত বাজার তৈরি হয়েছে। সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ও মনিটরিং নেই বলেই বেশি লাভের আশায় কৃষক তামাক চাষে ঝুঁকছে এমন অভিযোগ সচেতন মহলের মাঝে। তামাকের বেশি ফলন পেতে অতিরিক্ত সারের ব্যবহারে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সারের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় কম-বেশি তামাক চাষ হলেও হরিণাকুণ্ডু, শৈলকূপা, সদর ও মহেশপুরে বেশি আবাদ হয়। 
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ বলছে, বৃটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল সহ অন্যান্য তামাক বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো চাষিদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। তারা তামাকের চারা রোপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশক কেনার জন্য কৃষকদের মাঝে অগ্রিম টাকা প্রদান করে এবং উৎপাদিত তামাক কেনার নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকেন। যে কারণে খাদ্যজাতীয় ফসল বাদ দিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা তামাক চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংগৃহীত তথ্য মতে, জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। পরের বছর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২৫১ হেক্টর জমিতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯৩ হেক্টর ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২২৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার মহেশপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৮৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে ১২৪ হেক্টর, ১০২ ও এ বছর সর্বোচ্চ ১৫৫ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে। হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন, উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাঁদপুর ইউনিয়নে তামাক চাষ করা হয়েছে। তামাক চাষিরা তামাক বাজারজাতকারী কোম্পানির কাছ থেকে অগ্রিম আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। এ কারণে চাষিরা তামাক চাষে ঝুঁকছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ৫০০-৬০০ কেজি তামাক উৎপাদন হয়। গতবছর কোম্পানি ২২৬ টাকা দরে প্রতিকেজি তামাক কিনেছে কৃষকের কাছ থেকে। উৎপাদিত তামাকের বিক্রি নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। তামাকের বাজার স্থির। কোম্পানিই কৃষকের কাছ থেকে সব তামাক কিনে নেয়। তামাক চাষে নিশ্চিত লাভ দেখে কৃষকরা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও জেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, আমরা তামাক চাষিদের বিকল্প ফসল চাষে উৎসাহিত করছি। তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের অগ্রিম অর্থ দেয় বলে জেনেছি। সরকার তামাক চাষ নিষিদ্ধ করেনি। কিন্তু আমরা নিয়মিত বিকল্প চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করা যায়, আগামীতে তামাক চাষ এই জেলায় কম হবে।  

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status