শেষের পাতা
শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার
বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে গতকালও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তৃতীয় ধাপে বাদ পড়া প্রাথমিকের
নিয়োগপ্রত্যাশী শিক্ষকরা। এতে শাহবাগসহ পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তায় বের হওয়া রাজধানীবাসীর জন্য ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে পুলিশ। তবে কথা না শোনায় আন্দোলনকারী শিক্ষকদের লক্ষ্য করে জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বাতিল হওয়া ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে টানা অষ্টম দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুর ১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন নিয়োগপ্রত্যাশী শিক্ষকরা। এতে ধানমণ্ডি, সাইন্সল্যাব, বাটা সিগন্যাল, বাংলা মোটর, মৎস্যভবন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর দেড়টার দিকে প্রায় শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে বসে পড়েন। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। এ সময় তাদের পাশে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দুপুর আড়াইটার পর পুলিশ তাদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। তারা কথা না শুনে তাদের দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশের লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন আহত হন। একপর্যায়ে শাহবাগ মোড় থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন তারা। বেলা পৌনে তিনটার দিকে তারা জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। পুলিশের হাতে আটক হওয়া সাব্বির নামে এক যুবক বলেন, আমি ধানমণ্ডির দিকে যাচ্ছিলাম পথে আন্দোলন দেখে মোবাইলে ভিডিও করি।
এ সময় পুলিশ আমাকে আটক করে। তন্ময় নামে আন্দোলনরত একজন বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলন করছি। সমাজ আমাদের ধিক্কার দেয় নিয়োগ বাতিল হওয়ার জন্য। পুলিশের ভেরিফাই করেই আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাতদিন ধরে আমরা যৌক্তিক দাবির আন্দোলন করছি। উপদেষ্টারা আমাদের কথা শুনছেন না। আমরা কি দেশের নাগরিক না? আন্দোলনের সময় তো আমরা ছাত্রদের পাশে ছিলাম এখন কেনো আমাদের পাশে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। আমরা নিয়োগ বাস্তবায়ন চাই। বনশ্রী থেকে দুই মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আন্দোলনে আসা মাকসুদা আক্তার বলেন, সবাই আমাদের শুধু আশ্বাস দেয় কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন করছে না। আমরা তো যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিলাম। আমরা কি সরকারকে বলেছিলাম কোটা পদ্ধতিতে নিয়োগ দিতে? সরকারই তো আমাদের চুড়ান্তভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। স্বাস্থ্য সনদ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে আমাদের ১৫ হাজার করে টাকা লেগেছে। অনেক কষ্টে টাকাগুলো ব্যবস্থা করতে হয়েছিলে। আজ একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করায় পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করছে। আমাদের অনেক সহযোদ্ধাদের আটক করেছে।
এসব বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, তারা শাহবাগের মূল সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিল। এতে পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা তাদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেননি। তাই জনভোগান্তি কমাতে রাস্তা থেকে সরাতে আমরা বাধ্য হয়েছি। আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৩/১৪ জনকে থানায় নিয়ে এসেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিরাপরাধ প্রমাণিত হলে তাদেরকে আমরা ছেড়ে দিবো।
উল্লেখ্য, গত ৩১শে অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়। তবে এই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।