ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীকে গুলি

কী ঘটেছে গাজীপুরে?

সুদীপ অধিকারী, গাজীপুর থেকে ফিরে
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবারmzamin

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। গাজীপুর চৌরাস্তা মোড়ের চান্দিনা টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের একটি অফিস উদ্বোধনের কাজ চলছিল। হঠাৎ একটি ফোন কল আসে। বলা হয়- গাজীপুরের ধীরাশ্রম মন্দিরবাড়ী এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজ্জামেল হকের বাড়িতে কিছু লোক ভাঙচুর-লুটপাট চালাচ্ছে। এই খবর পেয়ে আমরা ৪০ থেকে ৫০জন শিক্ষার্থী ৪টা ইজিবাইকে করে সেখানে যায়। তারা সেখানে গিয়ে দেখেন কয়েকজন মোজ্জামেল হকের বাড়ির ভেতরে ভাঙচুর করছে। শিক্ষার্থীদের একটি দল ভেতরে প্রবেশ করে। আরেক গ্রুপ বাইরে ছিল। এ সময় হঠাৎ বাড়ির সামনের মসজিদের মাইকে জয় বাংলা বলে ঘোষণা করা হয়- বলা হয় এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে। সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। আপনারা সবাই যার যা আছে নিয়ে বের হয়ে আসুন। এরপর এলাকাটির প্রায় সবক’টি মসজিদে একই ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণার পরপরই এলাকাটির প্রায় এক-দেড়শ’ মানুষ ধারালো অস্ত্র, লাঠি-সোটা নিয়ে বের হয়ে মোজাম্মেল হকের বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে। তারা এসেই প্রথমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মারধর করে। পরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। তখন তাদের কেউ কেউ দুইতলা থেকে নিচে লাফ দেন। ১০ থেকে ১৫ জন জীবন বাঁচাতে বাড়িটির ছাদে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। তারা ছাদের দরজা ভেঙে ছাদে গিয়েও হামলা করে। গাজীপুরের ধীরাশ্রমে শুক্রবার রাতে হামলার এমনই বর্ণনা দিয়েছেন আহতরা। সরজমিন ঘুরে স্থানীয়দের কাছ থেকেও এমন বর্ণনা মিলেছে। যদিও ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুরুষদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও কেউ ঘটনার বিষয়ে কথা বলছেন না। হামলার শিকার হয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১২তলার কেবিনে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন চান্দিনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের ওপর পরিকল্পনা করেই হামলা হয়। তারা মাথা লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। একটা কোপ এসে লাগে আমার বাম চোখের পাশে। আমি নিচে লুটিয়ে পড়লে তারা আমাকে মৃত ভেবে চলে যাচ্চিল। তখন একজন লাইট মেরে বলে- শালা মরেনি। ওদের ধরে নিয়ে চল। আজকে সবক’টাকে একদম শেষ করে দেবো। তখন আমাদেরকে ধরে বাড়ির সামনের মসজিদে নিয়ে গিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে আবারো মারধর করে। আমার সামনেই একজনের পায়ের রগ কেটে দেয়। আমাকেও বলা হয়- ভিডিওতে মাফ চা, বল কোনোদিন আর এসব করবি না। না হলে তোরও পায়ের রগ কেটে দেয়া হবে। পরে আমি তাদের কাছে মাফ চেয়ে জীবনটা রক্ষা করি। 

শুক্রবার রাতে হামলার সময় মোজাম্মেল হকের বাড়ির ২য় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়ে একই কেবিনে ভর্তি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুর শাখার সদস্য টঙ্গী চেরাগ আলী এলাকার বাসিন্দা মো. আকাশ (১৯) বলেন, যখন চারপাশ থেকে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাদেরকে কোপানো শুরু করে তখন জীবনের ভয়ে আমিসহ কয়েকজন ২য়তলা থেকে নিচে ঝাঁপ দিই। তিনি বলেন, এটা একটা ট্র্যাপ (চক্রান্ত) ছিল। চক্রান্ত করেই বাড়ি ভাঙচুরের খবর দিয়ে আমাদেরকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ আমাদের ওপর যখন হামলা চলছিল তখন যারা আগেই ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছিল তারাও স্থানীয়দের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা ওদেরই লোক ছিল। আমরা যখন প্রথমে গিয়ে তাদের ফোন চেক করেছিলাম, তখন তাদের ফোনে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি ও পোস্ট ছিল।  তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমাদের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে সরজমিন গাজীপুরের ধীরাশ্রম মন্দির বাড়ি এলাকায় সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক কারুকার্যের দুইতলা বিশিষ্ট বাড়িটির প্রতিটা রুমেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়েছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বাড়িটির মালামাল আসবাবপত্র। আলিশান বাড়িটির উঠানে রয়েছে সুইমিংপুল, পাকা বসার জায়গা। বাড়ির সামনে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, ফুলের বাগান। পাশেই মসজিদ। যেই মসজিদ থেকেই প্রথম ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেন মোজাম্মেল হকের বাড়ি দেখাশোনা করা ও ওই মসজিদের ইমাম। মসজিদের দেওয়াল ও মেঝেতে রক্তের দাগ দেখা যায়। মসজিদের দেওয়ালে রক্তের দাগ দেখে বোঝা যায়- মসজিদের বারান্দায় আহত কাউকে বসিয়ে রাখায় তাদের মাথা থেকে দেওয়ালে লেগেছে এই রক্ত। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুক্রবার রাতে ও সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারী-পুরুষসহ কয়েকজনকে পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ায় ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। 

নাসিমা বেগম, ইয়াসিন সরকারসহ নাম না প্রকাশের শর্তে আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর আমরা সবাই বাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ মসজিদের মাইকে ডাকাতের হামলার ঘোষণা শুনে বাইরে এসে দেখি অনেক লোক। মন্ত্রীর বাড়ির মধ্যে ঢুকে ভাঙচুর করছে। এরমধ্যেই এলাকার লোকজনের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। কেউ কেউ দৌড়ে পালিয়ে যায়। কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। তারা বলেন, এটা সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের পৈতৃক নিবাস। তিনি এখানে সবসময় থাকতেন না। মাঝে মধ্যে সময় কাটাতে আসতেন। তার শহরের ওপর বাড়ি আছে। বেশির ভাগ সময়ই তিনি ঢাকায় থাকতেন। সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। এই বাড়িতে মসজিদের ইমাম তার বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকেন। এই বাড়ি দেখাশোনার জন্য তাকে ময়মনসিংহ থেকে এনে বেতনভুক্ত রাখা হয়েছে। তারা বলেন, ওই ঘটনার পর রাতে পুলিশ এসে বাড়িতে বাড়িতে গিয়েছেন। খোঁজ নিয়েছে- কোন বাড়িতে নারীরা আছে আর কোন বাড়িতে পুরুষ আছে। পুরুষ মানুষ পেলেই তাকে তুলে নিয়ে গেছে। শনিবার সকালেও অনেকজনকে থানায় নিয়ে গেছে। এই পাশের মার্কেট মসজিদের ইমামকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। ভয়ে এখন পুরুষশূন্য পুরো এলাকা। 

অপরদিকে সেদিন রাতে ওই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মোজাম্মেলের বাড়িতে বহন করে নিয়ে যাওয়া ৪ ইজিবাইকের মধ্যে থাকা এক চালক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, শুক্রবার রাতে আমি কাজ শেষে বাড়িতে যাবো। চৌরাস্তায় গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর মাঝেই ছাত্ররা ডাক দিলো। আমরা একসঙ্গে ৪টা ইজিবাইকে তাদেরকে নিয়ে রওনা করি। তারা সবাই খালি হাতে ছিল। কোনো লাঠিসোটা ছিল না। তবে তারা খুব মারমুখী ছিল। গাড়ি থেকে নেমে তারা দুটো ইজিবাইকের ভাড়া ১৫০ করে মোট ৩০০ টাকা দিলেও আমাদের দুটোর ভাড়া বাকি ছিল। আমরা দু’জনেই তাই গাড়ি নিয়ে ভাড়ার অপেক্ষায় ছিলাম। দেখলাম ছাত্ররা গেটে লাথি মেরে চিল্লাচিল্লি করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। এরপরই এক হুজুর দৌড়ে গিয়ে মাইকে ডাকাত বলে ঘোষণা করলেন। এরপর আশপাশের মসজিদেও ডাকাতের ঘোষণা করা হয়। এলাকার সবাই তখন দা, সাবল নিয়ে দৌড়ে আশে। তখন আমি আর আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ইজিবাইকচালক দু’জনে দুইদিকে গাড়ি চালিয়ে বের হয়ে যায়। ভাড়া না পাওয়ায় আমি জয়দেবপুর যাওয়ার মেইন রোডে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরইমধ্যে দুইজন শিক্ষার্থী আমার কাছে এসে অনুরোধ করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগে ভাড়ার টাকা না পাওয়ায় আমি তখন তাদেরকে বলি ভাড়া না দিলে আমি যাবো না। তখন একটি শিক্ষার্থী তার পকেটে হাত দিয়ে বলে- আমার সব নিয়ে গেছে। ফোন নিয়ে গেছে। তবে মানিব্যাগটা আছে। এই বলে সে ৫শ’ টাকার একটি নোট আমার হাতে তুলে দেয়। আমি তখন তাদেরকে নিয়ে তাজউদ্দীন মেডিকেলে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমিই প্রথম আহত দু’জনকে আমার ইজিবাইকে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিই। এরপর শুনি এত ঘটনা।     

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের মুখ্য সংগঠক মো. রবিউল হাসান ও  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. নয়ন দেওয়ান বলেন, কিছু লোক গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে, এমন খবর পেয়ে আমাদের লোকজন ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাকাবাসী আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। 

গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীকে গুলি
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সারাদিনের আন্দোলনের কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন। এ সময় মোটরসাইকেলে এসে অতর্কিত গুলি ছোড়ে এক ব্যক্তি। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মোবাশ্বের হোসেন নামের এক ছাত্র। তার হাতে গুলি লেগেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই গুলি ছুড়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. নয়ন দেওয়ান বলেন, সন্ধ্যায় শহরের জোড় পুকুরপাড়ের দিক থেকে মোটরসাইকেলে এসে এক ব্যক্তি গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে ওই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।   

অন্যদিকে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান করে সমাবেশ চলাকালে সেখানে এসে পুলিশ কমিশনার বলেন, গতকাল রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না, প্রতিটি হামলার জবাব দেয়া হবে। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি, আমার ওসি দুই ঘণ্টা পর আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বললাম, তাকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করবো। আমি বলতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেয়া যাবে না। পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গত ১৭ বছর ধরে যারা অত্যাচার করেছে, দেশের ওপর জুলুম করেছে, তারা মাথাচাড়া দিচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো মাথাচাড়া বরদাশত করা হবে না। ইতিমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দমন করার জন্য ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করা হবে।

হামলার প্রতিবাদে দিনভর বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের গাজীপুরের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ জন আহত হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে গাজীপুর। হামলা চালিয়ে আহত করার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এসব কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচিকে ঘিরে জেলা শহরে ছিল থমথমে পরিস্থিতি। গত শুক্রবার রাতে হামলায় আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহত তিনজন ভর্তি আছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর খুনি মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর এবং আওয়ামী দোসরদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে অবস্থা কর্মসূচি, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকাল ১১টা থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শহরের রাজবাড়ী সড়কে ও ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ী ময়দানে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় হামলার প্রতিবাদে সড়কে অবস্থান নিয়ে গাজীপুরে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।

সমাবেশে সমন্বয়ক সারজিস আলম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আজকে রাতের মধ্যে গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে আমরা সরকার ও পুলিশের বিপক্ষে অবস্থা নেবো। সারজিস আরও বলেন, আজকের পর থেকে যদি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কোনো ক্যাডার আমার ভাইকে হুমকি দেয় তারপরের দিন তার জায়গা হবে জেলখানায়। খুনি শেখ হাসিনা ও খুনি জাহাঙ্গীরের দোসররা যদি এই গাজীপুরে আবার উত্থান করতে চায়, তাহলে ছাত্র-জনতা তাদের ছাড় দিবে না।

দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সমাবেশ শেষে  রাজবাড়ী মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এর আগে সেখানে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও ক্রাইসিস রেসপন্স সেল বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আলী নাসের খান, কাউন্সিলর এসোসিয়েশন নেতা এডভোকেট নজরুল ইসলাম খান। জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক এডভোকেট আলী নাসির খান  আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল, আওয়ামী দোসরদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, তাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেন।

স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ডের দক্ষিণখান এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের দ্বিতল বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি, ওই ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে তারা তা প্রতিহত করতে সেখানে যান। এ সময় পরিকল্পিতভাবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মাইকে ডাকাতের গুজব ছড়িয়ে জড়ো হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের মারধর করে আহত করা হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রাতের ঘটনায় মোট ১৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, শনিবার সকালে হাসপাতালে আহতদের খোঁজখবর নেন জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন। তিনি এ সময় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন এবং সুচিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোজাম্মেল হকের বাড়ি পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এ ব্যাপারে শনিবার বিকাল পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

ওদিকে শুক্রবার রাতের ঘটনায় সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান। এছাড়া ওই ঘটনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষমা চান। বলেন, হামলাকারীদের কাউকে ছাড়া হবে না। 
 

পাঠকের মতামত

দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি। গাজীপুর কৃষি গবেষণা ও এমনই একটা প্রতিষ্ঠান যেখানে স্বৈরাচার অনুসারীতে ভরপুর। জরুরি ভাবে কর্তৃপক্ষের এই প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে আনা উচিত।

MC
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

সিসি ক্যামেরা দেখে কারা মাইকে ঘোষণা দিয়েছে, তাদের ধরলেই সব খবর বেরিয়ে আসবে

সোহাগ
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ২:৩০ অপরাহ্ন

বাহ বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা দেখি পুরোপুরো রাজনীতি শিখে গেছে!!

আইয়ান
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১২:২২ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগের রাজনীতি শঠতার রাজনীতি।

MD REZAUL KARIM
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন

লুটেরাদের লুটপাট ও আগুন দিতে বাধা দেয়ায় নিন্দা প্রকাশ করছি।

আনসার উদ্দিন মিয়া।
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

লুটেরাদের লুটপাট ও আগুন দিতে বাধা দেয়ায় নিন্দা প্রকাশ করছি।

আনসার উদ্দিন মিয়া।
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

লুটেরাদের লুটপাট ও আগুন দিতে বাধা দেয়ায় নিন্দা প্রকাশ করছি।

আনসার উদ্দিন মিয়া।
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

আগে কথিথ আওয়ামী ঈমামকে গ্রেফতার করতে হবে।

মোঃ আজিজুল হক
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৭:২৬ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status