শেষের পাতা
ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জের আবেদন খারিজ বিচারকার্য চলবে
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জের আবেদন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের করা এ সংক্রান্ত আবেদনটি খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, এখতিয়ার চ্যালেঞ্জের বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে শুনানির সুযোগ নেই এবং এটি সাংবিধানিক আদালতের বিষয় উল্লেখ করে আবেদনটি খারিজ করেন। এ ছাড়া অব্যাহতি চেয়ে জিয়াউল আহসানের করা আবেদনকে (প্রি-ম্যাচিউর) “অপরিপক্ব”। কারণ মামলার তদন্ত এখনো চলমান বলে খারিজ করে দেয়া হয়।
আদালতে জিয়াউল আহসানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী ও এডভোকেট নাজনীন নাহার। আর প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার ও ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। তাদের দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার জন্য আইনটি করা হয়েছে। কিন্তু জুলাই-আগস্ট মাসে কোনো যুদ্ধ হয়নি এবং যেহেতু বর্তমানে কোনো সংসদ নেই সুতরাং আইনের এ সংশোধনীটি বৈধ নয়। সেইসঙ্গে তাদের দাবি ছিল- ২০২৪ সালে করা সংশোধনীতে গুমের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার কারণে এক ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া যৌক্তিক নয়।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার ও ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। আমরা বলেছি, এর আবেদন করলে সাংবিধানিক আদালত তথা হাইকোর্টে করতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অর্থাৎ এই ফৌজদারি কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া আবেদনকারীরা বর্তমান সরকারের বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করেছেন, সেক্ষেত্রেও আমরা বলেছি, এটি এখানে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই।
তাজুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে থাকে, তার মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে এবং তার বিচারের জন্য করা কোনো আইন যদি সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণও হয় সেটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। সাংবিধানিকভাবে এক্ষেত্রে সুরক্ষা দেয়া আছে।
এ ছাড়াও আসামি পক্ষের আবেদনটি ছিল মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের একটি কৌশল। এটা আসলে তারাও জানেন যে, এ আবেদনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। মিডিয়াতে একটি হাইপ তৈরি করার জন্য তারা এই আবেদনটি করেছেন। যেহেতু আবেদনটি আজ খারিজ হয়েছে, ফলে মামলার বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দেয়া বিভিন্ন ঘৃণা সূচক বক্তব্য, সাক্ষীদের ভয়তীতি দেখানোর যেসব বক্তব্য তা যেন কোনো মিডিয়ায় প্রকাশ না করা হয়, সে ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধ করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাসিনার হুমকি-ধমকি ও সাক্ষীদের উস্কানিমূলক যে বক্তব্য রেখে চলেছেন তা এই মামলায় প্রভাব ফেলতে পারে। এর মাধ্যমে হাসিনা এই বিচার বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে হাসিনার এসব কর্মকাণ্ড আমাদের নজরে আসে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তোলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পুনর্গঠিত করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।