ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ফের রিমান্ডে সালমান আনিসুল-ইনু-মেনন

স্টাফ রিপোর্টার
২১ জানুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবারmzamin

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ফের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরমধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার জিসান হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার মেহেদী হাসান হত্যা মামলায় আনিসুল হক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার সালমান, আনিসুল, ইনু, মেননসহ ১৬ জন: নতুন মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। এরমধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার সাতটি, মোহাম্মদপুর থানার একটি এবং খিলগাঁও থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার চারটি ও মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে যাত্রাবাড়ী থানার ছয়টি, মোহাম্মদপুর থানার দুটি, সূত্রাপুর থানার দুটি এবং খিলগাঁও থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে কোতোয়ালি থানার একটি এবং উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে, যাত্রাবাড়ী থানার দু’টি এবং সূত্রাপুর থানার একটি মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায়, চৌধুরী জাহাঙ্গীর আলমকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায়, সাবেক আইজিপি শহীদুল হককে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায়, মো. জুলহাসকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায়, সাব্বির আহমেদ স্বপনকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায়, আদাবর থানার মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে ও সাবেক কাউন্সিলর জামাল মোস্তফাকে ভাষানটেক থানার একটি ও কাফরুল থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রীর কাছে বিচার বিভাগের দৈন্যদশা তুলে ধরলেন বিচারক: ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত। গতকাল সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতে আনা হয় আনিসুল হককে। এ সময় অন্যান্য মামলার শুনানি চলায় অনেকক্ষণ ডকে দাঁড়িয়েছিলেন আনিসুল হক। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডকে থাকা বেঞ্চে বসতে বলেন বিচারক। আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি শুরু হলে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর মামলার বিস্তারিত আদালতের সামনে তুলে ধরেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করেন। একপর্যায়ে বিচারক সাবেক এই মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগের দৈন্যদশা তুলে ধরেন। মামলা জটের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকায় লক্ষাধিক এনআই অ্যাক্ট মামলা পরিচালনা করার জন্য মাত্র সাতটি যুগ্ম দায়রা জজ আদালত রয়েছে যা মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য অপ্রতুল। অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারককে টিনশেড বিল্ডিংয়ে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করতে হয়। গত ১৫ বছরে বিচার বিভাগের তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। এ সময় আনিসুল হক আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, আমি আইনমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রতি বছর লোকবল নিয়োগের জন্য রিক্যুইজিশন দিতাম। আইন মন্ত্রণালয়ের জন্য মাত্র ১৩ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিল। বিচার বিভাগের যত ইম্প্রুভমেন্ট হয়েছে তা আমার করা। তবে আমার একটাই দুঃখ, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের জন্য আলাদা একটি ভবন করতে পারিনি। ইনশাআল্লাহ সামনে ভবন নির্মিত হবে। এই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠবো। বিচারক আবারো বলেন, সব কথা তো বলা যায় না। একটা টিভি সেন্টারের জন্য যে বাজেট সেই বাজেটও এই মন্ত্রণালয় পায় না। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য কাজ তেমন আগায় না। বিচার বিভাগের উন্নয়নে আমলাতন্ত্র একটা বড় বাধা। এখনো আমরা পুরোনো আইন যেসব বৃটিশরা তৈরি করে দিয়েছিল সেসবের মধ্যে আটকে আছি। আইনগুলো আপডেট করা দরকার। দেওয়ানি কার্যবিধি এমন যে, একটা দেওয়ানি মামলা দিয়ে ১০০ বছরও ঘুরানো যায়। সারা দেশে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক সিভিল মামলা চলমান। আর বিচারক মাত্র ৩০০ জন। এরপর আদালত আনিসুল হককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

এর আগে গত ১৩ই জানুয়ারি একই আদালতে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। ওইদিন আদালত আনিসুল হকের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য গতকাল ধার্য করেন। এর আগে গত ১লা জানুয়ারি আনিসুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকা-১ এর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত আগামী ২০শে মার্চ ধার্য করেছেন। এই মামলায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা সম্পদের মালিকানা অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
 

পাঠকের মতামত

এই কুকুর গুলোর প্রতি দেশের মানুষের ঘৃণা ও জুতা নিক্ষেপ করা হলো।

A Barek
২১ জানুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:২২ অপরাহ্ন

এদের জন‍্য রিমান্ড হচ্ছে আয়েশি জীবনের নিশচয়তা।

Siddq
২১ জানুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status