শেষের পাতা
সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
স্পোর্টস রিপোর্টার
২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। একই মামলায় সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী সগির হোসেন পাভেলের নামেও গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) জিয়াদুর রহমান এই আদেশ দেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন- প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
গত ৫ই আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। এই দলের হয়ে সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। সরকার পতনের পর থেকে তার সব ব্যবসার অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ হতে থাকে।
সাতক্ষীরায় সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো লিমিটেডের কাঁকড়ার খামার ছিল। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান সাকিব। তবে সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে এই ব্যবসার জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাবে এক কোটি এবং টার্ম লোন হিসাবে দেড় কোটি টাকা আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ নেয় অ্যাগ্রো ফার্ম। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাবে নেয়া টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় ব্যাংক ওই টাকা মেয়াদি ঋণে পরিবর্তন করে। টাকা পরিশোধ না করায় অ্যাগ্রো ফার্মকে কয়েক দফায় নোটিশ দেয়া হয়। এরপর গেল বছরের ৪ঠা সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি ব্যাংককে চার কোটি ১৪ লাখ টাকার দু’টি চেক দেয়। কিন্তু অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট টাকা না থাকায় চেক ‘বাউন্স’ করে।
এরপর নিজেদের বনানী শাখা থেকে নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে অ্যাগ্রো ফার্মকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আইএফআইসি ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার সাহিবুর রহমান। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি সাকিব ও তার কোম্পানির। এরপর গত ১৫ই ডিসেম্বর এই মামলা করা হয়। যেখানে সাকিবের সঙ্গে তার কোম্পানি সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম, ফার্মের এমডি গাজী সগির হোসেন পাভেল, পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগমকেও আসামি করা হয়। গত ১৮ই ডিসেম্বর শুনানি শেষে সাকিবসহ চারজনের নামে সমন জারি করে আদালত।
মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করা হয় ১৯শে জানুয়ারি। গতকাল আদালতে হাজির হননি সাকিব ও পাভেল। তখন আদালত সাকিব ও পাভেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আদালতের পেশকার আতিকুর রহমান বলেন, ‘মামলার আসামি ইমদাদুল হক আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। অপর আসামি মালাইকা বেগম মারা যাওয়ায় তার মৃত্যু প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।’ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিচারক আগামী ২৪শে মার্চ দিন ঠিক করেছেন বলে জানিয়েছেন পেশকার আতিকুর।
সাকিব আল হাসান গত জুলাই থেকেই দেশের বাইরে। আর পাভেলের খোঁজ কেউ জানে না। ২০২৩ সালের জুনে বারাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। ৫ই আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিলেন সাবেক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। গত অক্টোবরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ না করার দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন পাভেল। মানববন্ধন শেষে বাড়ি না ফিরে রাতে ঢাকার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। রাতেই পল্টন থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন সকালে তাকে একটি পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। পাভেলের এক ঘনিষ্ঠজন দৈনিক মানবজমিনকে জানান, তিনি জামিন নিয়েছেন, তবে কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেন না। শুধু পাভেল নয়, তার পরিবারের সবাই ৫ই আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা।
সাকিব আল হাসানের এই অ্যাগ্রো ফার্মের বিরুদ্ধে শুধু ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি নয়, আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি এলাকায় ২০১৬ সালে ৩৫ একর জায়গায় কাঁকড়ার খামার গড়ে তোলে সাকিবের কোম্পানি। প্রথম দুই বছরে এ খামার থেকে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, বৃটেন ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি হয় প্রায় ৪শ’ টন কাঁকড়া।
এই ফ্যাক্টরি করতে স্থানীয় ১০-১২ জন জমির মালিকের কাছ থেকে ৪৮ বিঘা জমি লিজ নেয়া হয়। এই খামার করার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয় অথচ জমির মালিকদেরও ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করেনি সাকিবের কোম্পানি। এ ছাড়া যেসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁকড়া সাপ্লাই নিতো সাকিবের প্রতিষ্ঠান, তারাও টাকা পাননি। সব মিলিয়ে সাকিবের কোম্পানির কাছে তাদের পাওনা প্রায় ১ কোটি টাকা। ৩০ লাখ টাকার শোকে মারা গেছেন বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ভামিয়া গ্রামের গুরু দাস। এমনকি শ্রমিকদের বেতনও ঠিকমতো দেয়নি সাকিব। করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় শ্রমিকরা বিক্ষোভও করেন। ২০২১ সালে বন্ধ হয়ে যায় সাকিবের এই কোম্পানি।
পাঠকের মতামত
A greedy person. State should ensure exemplary punishment.