ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

ময়মনসিংহে বিষাক্ত রক্ত সিন্ডিকেট

মতিউল আলম ও এনায়েতুর রহমান, ময়মনসিংহ থেকে
২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবারmzamin

ময়মনসিংহ নগরীর ক্লিনিকপাড়াখ্যাত চরপাড়া এলাকায়  ঘোরাফেরা করে এক বিষাক্ত রক্ত সিন্ডিকেট। নগরী জুড়েই রয়েছে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে রোগীরা সুস্থ হওয়ার বদলে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে। অথচ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এসবের কিছুই জানেন না তারা। পুলিশের হাতে ‘বিষাক্ত রক্ত’ সিন্ডিকেটের দু’জন গ্রেপ্তারের পর তাদের মুখেই তাদের ভয়ংকর অপতৎপরতার তথ্য বেরিয়ে আসে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- জেলার তারাকান্দা উপজেলার গোয়াইলকান্দি গ্রামের আবদুর রহমান খানের ছেলে মো. নাঈম খান পাঠান (৩৮) ও নগরীর আকুয়া মড়ল বাড়ি এলাকার তুষার চন্দ্র মিন্টু চন্দ্র দে’র ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (২২) (নওমুসলিম)। গত শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারের পর রাতে থানায় মামলা করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মো. সেলিম মিয়া। মামলায় গ্রেপ্তারকৃত দু’জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সূত্র জানায়, মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করে বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে রক্ত বিক্রি করে এই সিন্ডিকেট। তাদের নেই কোনো সরকারি ট্রেনিং বা লাইসেন্স। তারা রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে দুই ব্যাগ থেকে তিন বা চার ব্যাগ রক্ত বানাতেন। ভুয়া ক্রসম্যাচিং রিপোর্ট বানিয়ে নিজেরাই রোগীদের শরীরে পুশ করতেন, এই বিষাক্ত রক্ত। গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে তারা সংগ্রহ করে বিক্রি করতো। আমরা যে রক্তগুলো গ্রহণ করছি তা কোথা থেকে, কীভাবে আসছে তা কেউ জানতে পারছি না। এই বিষাক্ত রক্ত মানুষের শরীরে গ্রহণের ফলে মানুষের জীবনের ক্ষতি হতে পারে। ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, এটি বিশাল একটি চক্র। নগরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারা মানুষের ক্ষতি করছে। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে এমন ব্যক্তিদের রক্ত সংগ্রহ করে, সরকার অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত না নিয়ে তারা ভুয়া ব্লাড ব্যাংকের কথা বলে এসব রক্ত বিক্রি করে। ওসি বলেন, এক ব্যাগ রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে তিন ব্যাগ রক্ত বানাতো। এই চক্র নির্মূল করা না গেলে মানুষের জীবনের অনেক ক্ষতি হতে পারে। আপাতত চক্রের দু’জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি, বাকিদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ওসি বলেন, যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের রক্ত বিক্রি করার কোনো বৈধতা নেই। কিছু ব্লাড ট্রান্সমিউশন সেন্টারের রশিদ পাওয়া গেছে যার মধ্যে শুধু উল্লেখ করা চরপাড়া, তাতে কোনো সঠিক ঠিকানা ও ফোন নম্বর নেই, সেগুলো ভুয়া। দু’জনকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক, কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংক, ময়মনসিংহ ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সমিউশন সেন্টার, নিরাপদ ব্লাড ট্রান্সমিউশন সার্ভিস সেন্টার। তবে, প্রতিবেদকের হাতে কয়েকটি নাম সর্বস্ব ব্লাড ব্যাংকের ক্রসম্যাচিং রিপোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রেটিনা ব্লাড ট্রান্সমিউশন সেন্টার, সেইফ ব্লাড ট্রান্সমিউশন সার্ভিস সেন্টার, নির্লভ ব্লাড ট্রান্সমিউশন সার্ভিস সেন্টার, সেইফ ব্লাড ট্রান্সমিউশন সেন্টার, জনতা ব্লাড ট্রান্সমিউশন সার্ভিস সেন্টার। কিন্তু সেগুলোতে চরপাড়া ও মাসকান্দা ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ নামে কোনো ব্লাড ব্যাংক নেই বলেও জানায় সিভিল সার্জন অফিস।
নিরাপদ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস সেন্টারের পরিচালক আব্দুন নূর বলেন, নগরীতে অনেকগুলো অবৈধ ব্লাড ব্যাংক পরিচালিত হয়। যেগুলোর সঠিক কোনো ঠিকানা কাগজে ব্যবহার করে না। তারা সুবিধামতো বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্লাড ট্রান্সমিউশন করে রোগীদের কাছে বিক্রি করে। তারা স্যালাইনের মাধ্যমে এক-দুই ব্যাগ রক্তকে তিন-চার ব্যাগ রক্ত বানিয়ে বিক্রি করে। নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। দীর্ঘদিন এ চক্রটি তৎপরতা চালালেও দেখভালকারী কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার কারণে দিনে দিনে চক্রটি বড় হয়েছে ও মানুষ প্রতারিত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ফয়সল আহমেদ বলেন, চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। নগরে নিবন্ধিত তিনটি ব্লাড ট্রান্সমিউশন সেন্টার রয়েছে। এসব সেন্টারের বাইরে থেকে যদি কেউ রক্ত নিয়ে যায়, তাহলে সেই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো উচিত নয়। কারণ রোগী ভালো হওয়ার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে এইডস, হেপাটাইটিস ‘বি’সহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খান বলেন, রক্ত বিনিময়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। তা না হলে রোগীদের ভয়াবহ পরিণতি হবে।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status